অবশেষে অবসান হল দীর্ঘ দেড় দশকের জটিলতা। সফলভাবে সম্পন্ন হল পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন (WBMSC) গ্রুপ-ডি নিয়োগ প্রক্রিয়া। প্রায় পনেরো বছর ধরে নানা আইনি জটিলতা, প্রযুক্তিগত ভুল এবং মহামারীর কারণে বন্ধ হয়ে থাকা এই নিয়োগের পথ খুলে গেল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ে। হাইকোর্টের রায় স্পষ্ট জানিয়ে দিল— কমিশনের সমস্ত পদক্ষেপই আইনসিদ্ধ।

২০১০ সালের মার্চে ২৯৩টি গ্রুপ-ডি শূন্যপদে নিয়োগের বিজ্ঞাপন জারি করেছিল কমিশন। তিন ধাপের পরীক্ষার মাধ্যমে প্রক্রিয়া শুরু হলেও প্রথম থেকেই বিপত্তি। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১,৯২,২৪১ প্রার্থী। তার মধ্যে ২৬,৪৪৫ জন উত্তীর্ণ হলেও পরবর্তী সময়ে জানা যায়, ৭৪,৬১৯ জন পরীক্ষার্থীর ওএমআর শিট মূল্যায়নই হয়নি। প্রযুক্তিগত এই ভুলই হয়ে ওঠে প্রধান অন্তরায়। এরপর শুরু হয় দীর্ঘ মামলা-মোকদ্দমা। কমিশনের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। ২০১৩ থেকে ২০২০ পর্যন্ত বিষয়টি ঘুরতে থাকে হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের অন্দরমহলে। তাতে আরও থমকে যায় নিয়োগ প্রক্রিয়া। তার উপর করোনার প্রকোপ— সব মিলিয়ে আটকে যায় হাজারো চাকরিপ্রার্থীর স্বপ্ন।

অবশেষে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাদ পড়া ৭৪,৬১৯ জনের জন্য আলাদা পরীক্ষা নেয় কমিশন। প্রার্থীদের খুঁজে বের করতে জেলা প্রশাসন, এসডিও থেকে বিডিও পর্যন্ত সক্রিয় হয়। সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে, গ্রামে গ্রামে খবর পৌঁছে দিয়ে নিশ্চিত করা হয় যাতে কেউ বাদ না পড়ে। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ফলাফল প্রকাশিত হয়। হয় ইনারভিউ, তৈরি হয় চূড়ান্ত মেধাতালিকা। কমিশনের সুপারিশে নিয়োগও দেওয়া হয়।

হাইকোর্টের রায় কমিশনের প্রতিটি পদক্ষেপকে বৈধতা দিয়েছে। ফলে বহু প্রতীক্ষিত এই নিয়োগ নিয়ে আর কোনও আইনি অনিশ্চয়তা রইল না। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর এবং কমিশনের সম্মিলিত উদ্যোগে সম্ভব হয়েছে এই সাফল্য। প্রমাণ হলো— প্রশাসনিক দক্ষতা, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং স্বচ্ছতার মাধ্যমে দীর্ঘস্থায়ী জটিলতাও সমাধান করা যায়।

আরও পড়ুন- ৯৬ বছরের ‘বোরোলিন’কে থামাতে পারেনি কেউ! বিদেশেও চাহিদা মাত্রাছাড়া

_

_

_

_

_
_