পৃথিবীর সবচেয়ে ছোটো গল্পটি মাত্র ৬ শব্দের । এই গল্প পড়তে শুরু করলেই শেষ হয়ে যায় । লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে । গল্পটি এইরকম :” For Sale : baby shoes , never worn .”
বিক্রির জন্য , শিশুর জুতো , ব্যবহৃত নয় ।
গল্প শেষ ।

রবীন্দ্রনাথের রয়েছে একটি অতি ক্ষুদ্র পুরাতন গল্প । খুব কম শব্দে কয়েকটি অবিস্মরণীয় গল্প লিখে গেছেন বনফুল , বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় । শিবরাম চক্রবর্তীর খুদে গল্পগুলো ভোলা যায় না । তারাপদ রায় তো এ বিষয়ে অনন্য ।

আধুনিক ছোট গল্পের জনক মপাসাঁ বারবার মুগ্ধ ও বিস্মিত করেছেন আমাদের । তাঁর লেখা ছোট্ট গল্প ‘ নেকলেস ‘ ( লা পারুর ) অসামান্য । এছাড়া ‘ চর্বির বল ‘ ( বোলে দে সুইফ ) অতি জনপ্রিয় । তাঁর পোস্টকার্ড সাইজের গল্প উল্লেখযোগ্য ।

শুধুমাত্র জিজ্ঞাসা চিহ্ন এবং বিস্ময়বোধক চিহ্ন ব্যবহার করে দুই মহামেধার চিঠি চালাচালি তো আজ ইতিহাস। একজন চিঠিতে লিখলেন ‘ ? ‘

এর উত্তরে অন্যজন লিখলেন ‘ ! ‘

কিন্তু এ তো গেল যতিচিহ্ন ব্যবহার করে অসামান্য কুশল বিনিময় । গল্প তো নয় । গল্পের একটা প্লট থাকতে হয় , একটা ঘটনা লাগে । উত্থান- পতন থাকে , একটা ক্লাইম্যাক্স থাকে । শব্দ , শব্দবন্ধ থাকে , বাক্য থাকে ।

এ পর্যন্ত পৃথিবীর সবচেয়ে ছোটো গল্পের স্রষ্টা হেমিংওয়ে মাত্র ৬ টি শব্দ দিয়ে গঠিত একটি বাক্যে গল্পটি সম্পূর্ণ করেছেন । এখানেই অসামান্য হয়ে ওঠে গল্পটি ।

হেমিংওয়ে এই গল্প লেখেন বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরে । এক গ্রীষ্মে বোটে করে মাছ ধরতে গিয়েছেন তিন বন্ধু । অনেক চেষ্টা করেও মাছ মিলছে না । সকলে বিরক্ত ।

সময় কাটছে না । স্ন্যাক্সের প্যাকেট খোলা হলো এবার ।হেমিংওয়ের সঙ্গে ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো এবং চে গুয়েভারা । হঠাৎ ফিদেল হেমিংওয়েকে বলেন , ‘ এই মুহূর্তে একটা গল্প লিখে দেখাও তো ‘ । জবাবে লেখক বলেন , ‘ এই মাঝনদীতে কিভাবে গল্প লিখবো , খাতাপত্র , নোটবুক কিছুই সঙ্গে নেই যে ‘ । হাত মুছতে মুছতে চে বলেন , ‘ ইচ্ছে থাকলে টিস্যু পেপারেও গল্প লেখা যায় ‘ ।

এবার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন লেখক । হাত বাড়িয়ে টিস্যু পেপারটি নিলেন । কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন শান্ত , স্বচ্ছ নদীর জলের দিকে । তারপর লিখে ফেললেন সেই ছয়টি শব্দ , যা অবিস্মরণীয় । লিখলেন :
” ফর সেল , বেবিস সুজ , নেভার ওর্ন ” ।
বাচ্চার জন্য জুতো কেনা হয়েছিল । তবে সেই বাচ্চাটি পৃথিবীর আলোই দেখে নি । মায়ের গর্ভেই শিশুটির মৃত্যু হয় । মাত্র ৬ শব্দে গর্ভে মারা যাওয়া শিশুর জন্য মায়ের অনুভূতি । গল্পটা দারুণ পছন্দ হলো বন্ধুদের । তাঁরা মুগ্ধ ও শিহরিত হলেন । কাস্ত্রো সেই মুহূর্তেই ১০ ডলার দিয়ে পুরস্কৃত করলেন বন্ধু লেখককে ।
এ ধরনের গল্পকে বলা হয় ‘ অনু গল্প ‘ বা ‘ ফ্ল্যাশ ফিকশন ‘ । কেউ কেউ বলেন , ‘ মাইক্রো শর্ট স্টোরি ‘ । তবে , মাত্র ৬ শব্দের এই বিখ্যাত গল্প নিয়ে অন্য একটি জনশ্রুতিও প্রচলিত রয়েছে । সেখানে বলা হয় , অফিসের ৬ জন বন্ধুর সঙ্গে বাজি ধরেন লেখক । মাত্র ৬ টি শব্দ দিয়ে নাকি চমৎকার একটা গল্প লেখা সম্ভব , এমন কথা লেখকের মুখে শুনে বন্ধুরা হেসে উড়িয়ে দেন এবং বিদ্রুপ করেন । তখন জেদ চেপে যায় লেখকের এবং বন্ধুদের সঙ্গে বাজি ধরেন ১০ ডলার । বলা বাহুল্য , শেষ পর্যন্ত বাজি জেতেন হেমিংওয়ে । মার্কিন সাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ১৯৫৪ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হন ।
সবশেষে বলা যাক পৃথিবীর সবচেয়ে ছোটো ভূতের গল্পটি। লেখক ফ্রেডরিক ব্রাউন । গল্পটির নাম ‘ নক ‘ ।
গল্পটা এইরকম :” দ্য লাস্ট ম্যান অন আর্থ সেট আ রুম । দেয়ার ওয়াজ আ নক অন দা ডোর । ” পৃথিবীর সর্বশেষ মানুষটি একটি ঘরে বসে আছেন । হঠাৎ কে যেন দরজায় কড়া নাড়লো ।
কে ? কে হতে পারে ? পৃথিবীতে
আর তো কোনো মানুষই নেই !
তাহলে ?
আরও পড়ুন – বিজেপি নেতাকে চটিপেটা বিজেপির কাউন্সিলরের! খড়গপুরে প্রকাশ্যে গোষ্ঠীকোন্দল