শাওনী দত্ত, গুলমার্গ

অফ সিজন হোক বা ফুল, সুযোগ পেলেই বাঙালি কাশ্মীর-দর্শনটা সেরে ফেলতে পছন্দ করে। তবে এপ্রিলের পরে সব সমীকরণই বদলে গিয়েছে। কাশ্মীরের হোটেল মালিক থেকে গাড়ি চালকরা বলছেন, এবছর বাংলার পর্যটকই নেই। পহেলগামে (Pahalgam) পর্যটকদের উপর কারা হামলা চালালো, জানি না। তবে তাতে আমাদের রুজি রুটি একেবারে শেষ হয়ে গেল বলছেন পর্যটন নির্ভর জম্মু-কাশ্মীরের (Jammu and Kashmir) সাধারণ গ্রামের মানুষ।

রাজধানী শ্রীনগর শহরের মূল আকর্ষণ ডাল লেক (Dal Lake) আর তাতে সারি সারি শিকারা। ডাল লেকের ধার ধরে বা হযরত বল দরগার আশেপাশে সারি সারি হোটেল। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে সেখানে পর্যটক ভরা থাকে। শিকারা চালক থেকে হোটেল ব্যবসায়ীরা নিজেদের মতো দর হাঁকিয়ে বছরের মুনাফা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কারণ এপ্রিলে পর্যটকদের উপর হামলার (Pahalgam attack) পর থেকেই গোটা দেশ থেকে কাশ্মীরে পর্যটক আসা কমে গিয়েছে। কিন্তু এবছর সে গুড়েও বালি।

রাজধানী শ্রীনগর শহরের হোটেলগুলিতে বেশ কয়েক মাস হল একটু একটু করে পর্যটক আসা শুরু হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ রিসোর্ট এখনও পুরোপুরি খালি। কাশ্মীরীদের সদা হাস্যমুখে অতিথি আপ্যায়নের গভীর উৎকণ্ঠা। পুজোর ছুটিতে বাঙালিরা কাশ্মীরে আসবেন, এটাই ছিল তাঁদের আশা। তবে এ বছর বাঙালি কাশ্মীর বিমুখ।

শ্রীনগরের পরিস্থিতিটা যেন মন্দের ভালো। কারণ অন্যান্য ছোট ছোট শহর – সোনমার্গ, গুলমার্গ, পহেলগামে (Pahalgam) এখনও পর্যটক আসেনি। ছয় মাস ধরে বন্ধ থাকা হোটেল রিসর্টগুলি ধুলো ঝেড়ে দরজা খুলেছে। কিন্তু কার জন্য? সেটা তাদেরও জানা নেই।

হোটেল ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে তাঁদের অন্তত লাখ পাঁচ এক টাকার ব্যবসা হয়। কিন্তু এবছর লাভ তো দূরের কথা, খরচ তোলাই দুষ্কর। এই সময়টায় একেকটি হোটেলে বাংলার বিভিন্ন এলাকা থেকে যাওয়া মানুষদের মধ্যে বাংলা ভাষায় আলাপচারিতা কিছুটা জমে ওঠে। কিন্তু এ বছর কাশ্মীরজুড়ে পুস্তু আর হিন্দির গুঞ্জন। বাংলায় ডাক শোনার লোক নেই।

আরও পড়ুন: পাক অধিকৃত কাশ্মীরে চরম উত্তেজনা, পাকসেনার গুলিতে মৃত্যু মিছিল

গোদের উপর বিষফোঁড়া – সেনাবাহিনীর কড়াকড়ি। শ্রীনগর শহর থেকে কাশ্মীর উপত্যকার অনেক সুন্দর দেখার জায়গাই এখনও বন্ধ। বন্ধ হরি পর্বত ফোর্ট থেকে দুধ পাথরি, বৈসারন উপত্যকা। সেখানে সেনা বাহিনীর ছাউনি রয়েছে। কাশ্মীরের জঙ্গি পরিস্থিতিকে হাতিয়ার করে পর্যটন শিল্পকে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক একাই কতটা ধ্বংস করে দিয়েছে, অক্টোবরের কাশ্মীর তারই সাক্ষ্য বহন করছে।

–

–