বাংলার রঙ্গমঞ্চের শিল্পচর্চা সোশ্যাল মিডিয়ার দাপাদাপিতে ক্রমাগত বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাচ্ছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি যুগে বাঙালির নাট্য সংস্কৃতির চর্চার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক আর কারিগরদের হয় আজ সংরক্ষণ করতে হবে না হলে তাঁদের প্রাসঙ্গিক করে রাখতে ভ্যাংচাতে হবে। আসলে অতীতকে যদি বাঁচিয়ে রাখতে হয়, এই দুটির মধ্যে কোনও একটি অবলম্বন ছাড়া অন্য কোনও পথ বোধহয় নেই। অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরীর (Gargee Roychowdhury) সংস্থা থিয়েটার প্লাসের (Theatre Plus) প্রথম নিবেদন ‘তারাসুন্দরী’র পোস্টার লঞ্চে এভাবেই বিখ্যাত সমাজতাত্ত্বিক-দার্শনিকের কথার অংশ উদ্ধৃত করে বাস্তব পরিস্থিতি বোঝাতে চাইলেন নাট্যকার অভিনেতা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)।

বয়স এবং অভিজ্ঞতায় বেশ খানিকটা পথ পেরিয়ে এসে এবার সত্যিকারের অভিনয় প্রেমী মানুষদের জন্য পরিসর আর প্রেক্ষাপট তৈরি করে দিতে অভিনেত্রী গার্গী তৈরি করেছেন থিয়েটার প্লাস। তাঁর এই সংস্থার প্রথম নিবেদন ‘তারাসুন্দরী’ মঞ্চস্থ হবে নভেম্বরের ১ ও ২ তারিখে। শনিবার তার পোস্টার লঞ্চ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে টলিউডের ‘মহানন্দা’ বলেন, ‘তারাসুন্দরীর মতো দক্ষ গুণী অভিনেত্রীর বিশেষ কোনও আর্কাইভ নেই। সেভাবে খুঁজলে ছবিও মেলেনা। বাংলার নাট্য জগতের অন্যতম সেরা অভিনেত্রীকে নিয়ে মানুষের মধ্যে আজ আর উৎসাহ দেখা যায় না, কারণ তার সম্পর্কে সঠিক তথ্য নেই। এবার মঞ্চে ‘তারাসুন্দরী’ হয়ে ঊনবিংশের রঙ্গমঞ্চের অভিনেত্রীকে সবার সামনে তুলে ধরতে চলেছেন তিনি। নাটক পরিচালনায় উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়, সুরসৃষ্টিতে প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চে যিনি আলোক প্রক্ষেপণ করবেন কিংবা পোশাকসজ্জার দায়িত্ব সামলাবেন তাঁদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন গার্গী।
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। নাট্যজগৎ নিয়ে তাঁর জ্ঞানের পরিধি কারোর অজানিত নয়। তাই ব্রাত্য যখন কথা বলেন মুগ্ধ হয়ে শোনেন সাংবাদিক থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই। এদিনও ব্যতিক্রম হল না।

বাংলা রঙ্গমঞ্চের স্বর্ণযুগের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বিনোদিনী দাসী, তিনকড়ি দাসী, তারাসুন্দরী ও প্রভা দেবীর জীবন দর্শনের কথা শোনা গেল তাঁর মুখে। তিনি বলেন, শিল্প যদি সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে পরিত্যক্ত চরের মতো জায়গায় পৌঁছে যায় তাহলে তাকে সংরক্ষণ করার উপায় খুঁজে বের করতেই হবে। বিনোদিনীর মঞ্চকে বিদায় জানানো এবং অমৃতলাল বসুর হাত ধরে তারাসুন্দরীর আগমনের কথা তুলে ধরেন তিনি। অভিনেত্রীর উত্থান থেকে থিয়েটার প্রেম এবং পরবর্তীতে ভুবনেশ্বরে মন্দিরে চলে যাওয়ার নানা ঘটনা প্রবাহের কথা জানান ব্রাত্য। শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, ‘ঊনবিংশ শতকের মতো ক্রান্তিকালের সময়ে বাংলার রঙ্গমঞ্চকে মাইলস্টোনে পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম কারিগর তারাসুন্দরীকে সংরক্ষণ করতে চেয়েছে গার্গী।’ অভিনেত্রীর আগ্রহ এবং উদ্যোগের প্রশংসা করেন ব্রাত্য বসু।

–

–

–

–

–

–

–