Thursday, November 6, 2025

‘সুফল বাংলা’ থেকে ‘উত্তরণ’: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথেই নিউ ইয়র্ক জয় মামদানির!

Date:

Share post:

পরিবর্তনের ডাক। মা-মাটি-মানুষের জন্য স্লোগান। উন্নয়নমূলক পদক্ষেপে নাগরিক স্বাচ্ছন্দে জোর। একের পর এক জনমুখি প্রকল্প ঘোষণা। বাংলায় সাধারণ মানুষের সমর্থনে বারবার ক্ষমতায় আসা ও আশীর্বাদ পাওয়ার এটাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) এইএসপি (USP)। নিজের দেশে একই পথ ধরে ইতিহাস তৈরি করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নিউ ইয়র্কের (New York) নব নির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি (Zohran Mamdani)। একদিকে শাসক বিরোধী প্রচার, অন্যদিকে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে আজ বিশ্ব মডেল, প্রমাণ করে দিলেন মার্কিন মেয়র (Mayor)।

রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও নিউ ইয়র্ক শহরের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত (Indian origin), এমনকি দক্ষিণ এশিয়া থেকে প্রথম মেয়র হওয়ার পথ থেকে কেউ সরাতে পারল না জোহরান মামদানিকে। তাঁর এই জয়ে প্রথম যে ধাপ তিনি ফেলেছিলেন তা ছিল তাঁর স্লোগান। ২০১১ সালের নির্বাচনে আসার আগে যেমন ‘পরিবর্তন’ স্লোগানে ভর করে সাফল্য পেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেভাবেই স্লোগান (slogan) বেঁধেছিলেন মামদানি। আওয়ার টাইম ইজ নাও – অর্থাৎ ‘এবার আমাদের সময়’। প্রকারান্তরে এক পরিবর্তনের ডাক।

শুধুমাত্র স্লোগানেই তিনি থেমে থাকেননি। তাঁর প্রচারের লক্ষ্য ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যাঁকে বিগ ব্যাড ম্যান হিসাবে তুলে ধরেছিলেন তিনি। যেভাবে ‘মোদি হঠাও দেশ বাঁচাও’-এর ডাক বারবার দিয়ে বাংলার মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেভাবেই একজনও নিউ ইয়র্কবাসীর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে গেলে তাঁর উপর দিয়ে যেতে হবে – এমনই বার্তা প্রচার করেছিলেন তিনি। যেভাবে এনআরসি আন্দোলন থেকে সিআইআর-এর ক্ষেত্রে রাজ্যের মানুষের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, সেভাবেই সুদূর নিউ ইয়র্কে (New York) অভিবাসীদের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মামদানি। আর তাঁরাই তাঁকে নিউ ইয়র্কের মেয়রের মসনদে বসালেন।

তবে শুধুমাত্র প্রচার নয়, উন্নয়নের যে ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জোহরান মামদানি নিজের প্রচারে, তাতে মার্কিনিদের ছাপের থেকে অনেক বেশি প্রভাব রয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। একদিকে মানুষের জন্য শিশুদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার পরিষেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যা ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের থেকে তাঁকে অনেক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। ঠিক যেভাবে নরেন্দ্র মোদির বেছে বেছে মানুষকে আয়ুষ্মান ভারত দেওয়ার বদলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছেন স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প। তার থেকে এক ধাপ পিছিয়ে শুধুমাত্র শিশুদের, কোনও বিভেদ ছাড়াই, বিনামূল্যে চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মেয়র।

আবার তাঁর প্রচারে উঠে এসেছে, নিউ ইয়র্ক শহরের বাসস্থানের দুর্মূল্যতার কথা। তিনি জোর দিয়েছেন নাগরিকদের ব্যয়বহুল বাসস্থানে, ভাড়া বাড়ি পরিবর্তে কম খরচে বাসস্থানের সংস্থান করায়। এখানে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর শহরের আবাস, উত্তরণ প্রকল্পের সঙ্গে মিল রেখেছেন জোহরান মামদানি।

আরও পড়ুন: ভারতীয় বংশোদ্ভূত জোহরান মামদানি নিউ ইয়র্কের মেয়র

সাধারণ নাগরিকদের মৌলিক চাহিদা – খাদ্য, বাসস্থানে জোর দিয়েই মেয়র নির্বাচনের বৈতরণী বেয়ে অনেকটা এগিয়ে যেতে পেরেছেন মামদানি। বাসস্থানের পাশাপাশি খাদ্যের ক্ষেত্রেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুফল বাংলা মডেলের সঙ্গে মিল রয়েছে মামদানির প্রতিশ্রুতির। নিউ ইয়র্ক শহরের পাঁচটি বরো এলাকায় প্রশাসন পরিচালিত বাণিজ্য কেন্দ্র করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। তাঁর জয়ের পিছনে এই প্রকল্পেরও গুরুত্ব রয়েছে বলে রাজনীতিকদের অনুমান। তাঁর এই ধরনের প্রতিশ্রুতির পরে স্পষ্টত বিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথের প্রাসঙ্গিকতা আরও স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

spot_img

Related articles

রাত পোহালে প্রথম দফার নির্বাচন বিহারে: হিংসা ঠেকানোই চ্যালেঞ্জ

নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে পরপর খুন। রাজনৈতিক নেতা থেকে সমর্থক। বিহার বিধানসভা নির্বাচনে তাই শান্তি বজায় রাখাই চ্যালেঞ্জ...

বাংলা কথায় দক্ষতা, কোন পদে পান তৃপ্তি? দীপ্তিকে নিয়ে স্মৃতির ঝাঁপি খুললেন ‘অভিভাবক’ মিঠু

সন্দীপ সুর বাংলার প্রথম ক্রিকেটার হিসাবে আইসিসি একদিনের বিশ্বকাপ জিতেছেন রিচা ঘোষ কিন্তু ভারতীয় দলের আরও এক ক্রিকেটারের সঙ্গে...

দিঘার জগন্নাথ ধামে প্রথম রাস উৎসবে ভক্তদের ঢল 

দিঘার জগন্নাথ ধামে এবারই প্রথম পালিত হল রাস উৎসব, আর সেই উপলক্ষে সকাল থেকেই উপচে পড়েছে ভক্তসমুদ্র। উৎসবের...

বেঁচে আছেন, তাই জানতে পারলেন ‘দোষী নন’: আজব বিচার উত্তরপ্রদেশে

বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ের (Aligarh) মিঠু সিংয়ের জীবনে যেন সেটাই সত্যি হতে বসেছিল। অবশেষে ৫৫...