Saturday, November 15, 2025

নেতৃত্ব দিতে অপারগ! রাঘোপুর ধরে রাখলেও অনুকরণ রাজনীতি নিয়ে ডুবলেন তেজস্বী

Date:

Share post:

বিধানসভা নির্বাচনে প্রায় এক তৃতীয়াংশ আসন হারালো লালু প্রসাদের আরজেডি। নির্বাচনের ফলাফল আরজেডির মনোবল ভেঙে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। নির্বাচনের আগে থেকে যে দলটি ভাঙতে শুরু করেছিল, কার্যত সেই কফিনে পেরেক পোঁতা হল নির্বাচনের ফলাফলে (Bihar election result)। একদিকে নিজের দলের মনই বুঝতে অক্ষম তেজস্বী যাদব (Tajashwi Yadav), জোটকেও (Mahagatbandhan) যে নেতৃত্ব দিতে অক্ষম, তা বুঝেই কী বিহার প্রত্যাখ্যান করল আরজেডিকে (RJD)? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে। জোট থেকে প্রার্থী নির্বাচন, ভোটের নীতি থেকে রাজ্যের মানুষকে পথ দেখানোর কাজ – কোনওটাই তেজস্বীর থেকে পায়নি বিহার (Bihar), কার্যত প্রমাণিত।

বিহারের রাঘোপুর (Raghopur) আরজেডির আঁতুরঘর হিসাবেই পরিচিত। ১৯৯৮ সাল থেকে রাঘোপুর আরজেডির দখলে। মাঝে ২০১০-১৫ সালে জেডিইউ এই আসন দখল করলেও সেখান থেকে পরিস্থিতি আরজেডির অনুকূলে আনেন লালুপুত্র তেজস্বীই। পরপর দুবারের সেখানকার বিধায়ক তিনি। অথচ ২০২৫ নির্বাচনে সেই রাঘোপুর থেকে তেজস্বীর জয়ও সহজ হল না। দিনভর কখনও এগিয়ে কখনও পিছিয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত মাত্র ১৪,৫৩২ ভোটে জেতেন তেজস্বী। বিজেপির (BJP) সতীশ কুমারকে কোনওক্রমে পরাজিত করেন তিনি।

আদতে হার বাঁচিয়ে তেজস্বীর এই জয় আরজেডি-র পতনের প্রতিচ্ছবি, বিশ্বাস রাজনীতিকদের। যে তেজস্বীকে মুখ্যমন্ত্রী মুখ (Chief Minister face) করে মহাজোট ভোটের লড়াইতে নেমেছিল, তা যে কতটা অবিবেচকের মতো ছিল, তা প্রমাণিত হল নির্বাচনের ফলাফলে। তেজস্বী নিজের দলের নেতাদের উপরই নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিলেন, যা প্রার্থী ঘোষণার দিন প্রমাণিত হয়েছিল। প্রার্থী না হতে পেরে প্রবীন নেতা-কর্মীরা দলের গায়ে কালি ছিটিয়েছিলেন। অনেকে দলের বিরুদ্ধে লড়াইও করেছিলেন নির্দল হিসাবে।

বিহার নির্বাচন মহাজোটের কাছে একটি বড় পরীক্ষা ছিল। এর আগে হরিয়ানা, মহারাষ্ট্রে জোটের নেতৃত্ব দিয়ে ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছিল কংগ্রেসের নেতৃত্ব। সেই ব্যর্থতা থেকে যে তেজস্বী শিক্ষা নেননি তা প্রমাণিত বিহার নির্বাচনে। একদিকে অন্তত পাঁচটি আসনে আরজেডি (RJD) ও কংগ্রেস (Congress) পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। অন্যদিকে কংগ্রেসের সঙ্গে জোর করে আপসে যে আরজেডি নেতা কর্মীরা খুশি ছিলেন না তা কংগ্রেসের ফলাফলে প্রমাণিত। জোটের পক্ষে তাঁরা কতটা কাজ করেছেন, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।

কার্যত একই কারণে আরজেডি-র নিজের আসনগুলিতেও দলের কর্মীরা দলের পাশে থাকেননি, এমনটাও বিশ্বাস রাজনীতিকদের। আদতে কংগ্রেসের হাত ধরা শুধুমাত্র যে বিহারের বাসিন্দাদের, ভোটারদের না-পসন্দ হয়েছে, তা নয়। আরজেডি কর্মীরাও তা পছন্দ করেননি, এমনটাও ভোটের ফলে প্রমাণিত। অথচ নিজের দলের নেতা কর্মীদের এই মানসিকতা কী বুঝতে পারেননি তেজস্বী, উঠেছে প্রশ্ন।

আরও পড়ুন: মমতার পথে হেঁটেই নীতীশের জয়! কী বলছে রাজনৈতিক মহল

অন্যদিকে বিহারকে নতুন পথ দেখাতে চাওয়া তেজস্বী আদতে যে বিজেপি ও নীতীশ কুমারের (Nitish Kumar) জেডিইউ-কে (JDU) অনুকরণ করছিলেন, তা স্পষ্ট হয়েছিল ভোট প্রচারে। আরজেডি বা বিজেপি ভোট প্রচারে যেমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন, তাকে অনুকরণ করে একধাপ এগিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন তেজস্বী। কিন্তু কীভাবে সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ, সেই প্রশ্নের কোনও ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তেজস্বী।

অন্যদিকে বারবার ভোট প্রচারে এনডিএ জোট আরজেডি জমানার জঙ্গল-রাজের অভিযোগ তুলেছে। কিন্তু তার কোনও পাল্টা জবাব দিতে পারেননি তেজস্বী। কীভাবে বিহারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, তা স্পষ্ট করতে পারেননি তেজস্বী। নীতীশ কুমারের আমলে বিহারে দুষ্কৃতীমূলক কাজ বেড়েছে ৮০ শতাংশ। তা সত্ত্বেও সেই ইস্যুকে হাতিয়ার তো করতেই পারেননি তেজস্বী। উপরন্তু লালু প্রসাদের আমলে যে অরাজকতার অভিযোগের তীরে তাঁর দল বিদ্ধ হয়েছে, তা থেকেও পথ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন লালুপুত্র তেজস্বী যাদব।

spot_img

Related articles

রবীন্দ্র সরোবরের ছয় ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি: সম্পূর্ণ আইনি পথে কর্পোরেশন

প্রায় পাঁচ দশক পর রাবীন্দ্র সরোবর চত্বরে অবস্থিত ছ’টি ক্লাবের সঙ্গে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক ভাড়ার চুক্তি করল কলকাতা...

বিহারে কমিশনের কারচুপি, তোপ অখিলেশের: ঘুরিয়ে কংগ্রেসকে কটাক্ষ ওমরের

বিহারে এসআইআর প্রয়োগ করে ভোটারদের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কংগ্রেস-আরজেডির (RJD) মহাজোটের এটাই ছিল বিহার নির্বাচনের মূল...

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী কে: ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট JD(U)-এর!

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ২৪৩ টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৮৯ আসনে জয়ী। নীতীশ কুমারের জেডিইউ জিতেছে ৮৫ টি আসন।...

জাদুসম্রাটের বাড়িতে বিয়ের আসর! বিজ্ঞাপন দেখে পাত্র পছন্দ মৌবনীর

জিনা বন্দ্যোপাধ্যায় জনে জনে বার্তা রুটি গেল ক্রমে, বিয়ে করছেন মৌবনী শীতের মরশুমে! মেয়ের জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন পিসি সরকার, সেখান থেকেই পাত্র...