সত্যের জয় হল। বহাল প্রাথমিকে ৩২ হাজার চাকরি। বুধবার কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের পরেই প্রতিক্রিয়া শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu)। প্রথমে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেন শিক্ষামন্ত্রী। পরে পর্ষদ সভাপতি গৌতম পালকে (Goutam Paul) পাশে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকেও একথাই বলেন ব্রাত্য। আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় (Kalyan Banerjee) বলেন, “আজ সত্যের জয় হল”। তৃণমূলের (TMC) রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) বলেন, ৩২০০০ হাজারের চাকরি তো বাঁচল, এবার নির্বাচনে বিরোধীরা ৩২টি আসন জিতে দেখাক।
প্রথমে শিক্ষামন্ত্রী এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, “আজকে মহামান্য হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ কে অভিনন্দন জানাই। হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চের রায় বাতিল হয়েছে। ৩২,০০০ প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি সম্পূর্ণ সুরক্ষিত রইল। শিক্ষকদেরও সতত শুভেচ্ছা। সত্যের জয় হল।“

এর পরে সাংবাদিক বৈঠকে ব্রাত্য (Bratya Basu) বলেন, “আমাদের এখন কাজ SSC-র যোগ্য চাকরিহারা শিক্ষকরা যাতে স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতার সঙ্গে চাকরি ফিরে পান, তা সুনিশ্চিত করা। গত ৫ বছর ধরে আমাদের দফতরের সঙ্গে কোর্ট, কাছারি, বিরোধীদের আক্রমণ নিয়ে কাজ করেছি। প্রাথমিকের পর এসএসসির যোগ্য চাকরিহারাদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিতে পারি তাহলে আমাদের বৃত্ত সম্পূর্ণ হবে। তাহলে খুব নিশ্চিন্ত মনে আমাদের রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।”

প্রাক্তন বিচারপতি অবিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের রায় সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় পক্ষপাতদুষ্ট কিনা, তা মানুষ বিচার করবে।” বুধবারের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার ভাবনা মামলাকারীদের অনেকের। এ প্রসঙ্গে ব্রাত্য বলেন, “আদালতে যাওয়ার অধিকার সকলের আছে। কেবল সংকীর্ণ রাজনৈতিক দিক থেকে সব কিছু ভাবা উচিত নয়। কারণ, যাঁরা চাকরি পেলেন তাঁরা বাংলারই ছেলে।” শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, “কী মিথ্যা, কী সত্য হল বলতে পারব না। তবে যাঁরা মানসিক যন্ত্রণায় ছিলেন তাঁরা মাথা উঁচু করে সর্বত্র যেতে পারবেন তাতেই খুশি।”

এরপরেই এসএসসির নিয়োগের প্রসঙ্গ টেনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ”এখন আমাদের কাজ হচ্ছে এসএসসির যে সমস্ত যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা আছেন তারা যাতে মেধার সঙ্গে নিজেদের চাকরি ফিরে পায় সে বিষয়টি সুনিশ্চিত করা। পাঁচ বছর ধরে আমরা যেভাবে আইনি লড়াই লড়েছি, বিভিন্ন মাধ্যমের আক্রমণ ঘাড়ের উপর নিয়ে যেভাবে কাজ করেছি তাতে এসএসসির চাকরি হারাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে পারলে আমার মনে হয় একটা বৃত্তসম্পন্ন হবে। বিচারপতি তার রায় যা বলেছেন তা সহানুভূতিশীলতা ও মানবিকতারই প্রমান দেয়।”

শেষে শিক্ষামন্ত্রী ৩২ হাজার শিক্ষকদের ফের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ”আপনারা যে আবার পুরনো কর্মস্থলে ফিরে গিয়ে চাকরি করতে পারছেন তার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বাত্মকভাবে লড়াই করেছেন। আপনাদের বলব আপনারা রাজ্য সরকারের উপর মুখ্যমন্ত্রীর উপর ভরসা রাখুন।”

এই গোটা বিষয়ের পর মুখ্যমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সভাপতি গৌতম পাল। তিনি বলেন, এই জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছতে শিক্ষামন্ত্রী এবং সর্বপরি মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে সাহায্য করেছেন তার জন্য আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।

আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “খুবই ভাল লাগছে, এতদিন যে লড়াই হয়েছে, সেই ২০২৩ সালের এপ্রিল মে মাস থেকে ২০২৬ সালে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত, যখন চাকরি বাতিল হয়, তখন ওদের আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলাম। সুপ্রিম কোর্ট আমাকে ডিভিশন বেঞ্চে পাঠায়। আজ সত্যের জয় হল।”
আরও খবর: লক্ষ্য চাকরি দেওয়া, চাকরিরতরা চাকরি ফিরে পাওয়ায় আমি খুশি: প্রাথমিকের রায়ে নিয়ে মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর

কুণাল ঘোষ বলেন, ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে সম্মান জানাই। আদালত ও বিচারব্যবস্থার উপর আমাদের আস্থা আছে। একটা চক্র চাকরি কেড়ে নিতে চাইছিল। কিন্তু কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে যাঁরা চাকরি ফিরে পেলেন তাঁদের অভিনন্দন। এর পরেই বিরোধীদের বিরুদ্ধে তোপ দেগে কুণাল বলেন, চাকরি খাওয়ার রাজনীতি করছে বিরোধীরা। বিচারবিভাগের উপর সম্মান জানিয়েই তৃণমূল নেতা বলেন, পক্ষদুষ্ট বিচারপতির জন্য এই চাকরি গিয়েছিল। দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে তদন্ত হোক। কিন্তু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে সকলের চাকরি খাওয়ার চেষ্টা হয়। এর পরে কুণাল বলেন, যিনি রায় দিয়েছিলেন, তিনি বিচারপতি পদে ইস্তফা দিয়ে বিজেপির টিকিটে নির্বাচনে জিতেছেন। তাহলে কি টিকিট পাওয়ার এটাই শর্ত ছিল? মোক্ষম প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক। বিরোধীদের উদ্দেশে তীব্র কটাক্ষ করে কুণাল বলেন, ৩২ হাজারের চাকরি তো বাঁচল, এবার বিধানসভা নির্বাচনে ৩২টা আসন পেয়ে দেখাক বিরোধীরা।

–


