দুমাস পরে দেশে নির্বাচন। তার আগে ভয়ঙ্কর হিংসার আগুনে পুড়ছে বাংলাদেশ। এই পরিস্থিতিতে গোটা ঘটনাকে ক্ষমতায় টিকে থাকতে অন্তর্বর্তী সরকারের (Interim Government) প্রধান মহম্মদ ইউনূসের (Mohammed Yunus) পূর্ব পরিকল্পিত বলে দাবি বাংলাদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা আওয়ামি লীগ (Awami League) নেতা মহিবুল হাসান চৌধুরির। সেই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে সম্পর্ক খারাপ করার চেষ্টার তীব্র নিন্দা প্রাক্তন মন্ত্রীর।
বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশের ইনকিলাব দলের সদস্য শরিফ ওসমান হাদির (Sharif Osman Hadi) মৃত্যুর পরে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। ২০২৪ সালে জুলাই আন্দোলনে যে হিংসা দেখা গিয়েছিল, তার থেকে এক ধাপ এগিয়ে আগুন ছড়ায় এই হিংসায়। ময়মনসিংহে এক হিন্দু যুবক দিপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে খুন করে আগুন লাগিয়ে দেয় মৌলবাদীরা। বেছে বেছে সংবাদপত্রের দফতরে আগুন লাগানো হয়। খুন করা হয় এক সাংবাদিককে। শুক্রবারও সেই হিংসা অব্যাহত।

এরপরই প্রাক্তন শাসকদল নেতা হাসান চৌধুরির দাবি, গোটা ঘটনাই মহম্মদ ইউনূসের পূর্ব পরিকল্পিত ও রাষ্ট্র-পরিচালিত। তিনি দাবি করেন, হাদি এক মৌলবাদি নেতা ছিলেন যিনি রক্তের দাবি করেছিলেন। তাঁকে তাঁরই কাছের কেউ অস্ত্রে পোষিত সদস্যরা খুন করেছে, এমনটাই প্রকাশিত খবরে।

হাদির মৃত্যুর পরই যেভাবে বাংলাদেশে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে তা যে পূর্ব পরিকল্পিত ছিল, তা বর্ণনা করে হাসানের (Mohibul Hassan Chowdhury) দাবি, হিংসা ছড়িয়ে পড়লে স্বাভাবিক ভাবেই নির্বাচন (general election) আবার পিছিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে। সেই সঙ্গে আওয়ামি লীগের যে তৃণমূলস্তরের কর্মীরা বাংলাদেশে রয়েছেন, তাঁদের সম্পূর্ণভাবে উপড়ে ফেলা সম্ভব হবে। কারণ হাদির মৃত্যু হলেই বাংলাদেশের ইসলামি মৌলবাদীরা প্রকাশ্যে এসে গোটা দেশে হিংসায় উস্কানি দিতে সহজেই পারবে।

এই পরিস্থিতিতে নিজেদের কর্তব্য পালন না করে যেভাবে ইউনূসের মন্ত্রিসভার সদস্যরা কীভাবে হিংসা ছড়াচ্ছে, তা বর্ণনা করে হাসানের দাবি, এই হিংসার তদন্ত না করে, নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত কর্মী নিয়োগ না করে এখনও ইউনূসের মন্ত্রিসভার সদস্যরা রক্তের দাবি করছে। মহম্মদ ইউনূস নিজের পদত্যাগ করেছেন দাবি করলেও তিনি প্রোটোকলের সমস্ত সুবিধা ভোগ করছেন। প্রকাশ্যে মৃতদেহের রাজনীতি করে যাচ্ছেন তিনি।

বাংলাদেশ প্রশাসনের তরফে প্রধান উপদেষ্টা নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে ময়মনসিংহে হিন্দু যুবকের নিধনের কথা স্বীকার করেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী শুক্রবার ভাঙচুর চালানো ছায়ানট (Chhayanaut) প্রাঙ্গনে যান। দাবি করেন, এই ভাঙচুরের ঘটনায় যুক্তদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।

আরও পড়ুন : বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে বাংলায় হিংসা ছড়াচ্ছে বিজেপি: পুলিশি পদক্ষেপের দাবি কুণালের

বৃহস্পতিবার রাতের যে ছবি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে ধরা পড়েছে, সেখানে স্পষ্ট হাদির মৃত্যুকে সামনে রেখে অন্য রাজনীতি চলছে বাংলাদেশে। সেই সঙ্গে অবাধে লুটপাট। ঢাকা শহরে বাজারে ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি লুট করা হয় সবজি। গোটা ঘটনায় উল্টে হামলাকারীদের উপর নির্বাচন বানচালের অভিযোগ তোলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা। তিনি দাবি করেন, প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিয়েছে কারা? কারা প্রথম আলো, ডেইলি স্টার, ছায়ানটে হামলা করেছে? যারা করেছে তারা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণ চায় না।

অন্যদিকে, ছায়ানটে এই হামলা প্রেক্ষিতে ছায়ানট কর্তৃপক্ষ একটি বিবৃতি জারি করে যেখানে সরকারকে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে। জানানো হয়েছে, ছায়ানট কোনও রাজনীতির ক্ষেত্র নয়। এর কাজ সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্রের সমাজ গড়া। তা সত্ত্বেও ওসমান হাদির মৃত্যুকে ঘিরে কেন ছায়ানট ভাঙচুর করা হল, তা তাঁদের বোধগম্য নয়।

–


