প্রকৃতির অশনি সংকেত! এই মানব সভ্যতাই কি ভেনেজুলায় (Venezuela) তৈরি করেছে লজ্জার ইতিহাস? বরফের দেশ আজ বরফশূন্য। গলতে গলতে হিমবাহের সব বরফ গলে জল হয়ে গিয়েছে সেদেশে। আর যেটুকু বর্তমানে অবশিষ্ট আছে তা খুব সামান্য, জলের বরফধর্ম বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা।

দক্ষিণ আমেরিকার ছোট্ট দেশ ভেনেজুয়েলা। বর্তমানে এই দেশ প্রাকৃতিক ও রাজনৈতিক দুইভাবেই বিধ্বস্ত। একসময় ভেনেজুয়েলায় আন্দিজ পর্বতমালায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৫,০০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত ছয়টি হিমবাহ ছিল। এর মধ্যে সবথেকে বড় ছিল হামবল্ট হিমবাহ। ২০১১ সালের মধ্যে এর পাঁচটি হিমবাহ গলে জল হয়ে যায়। কিন্তু এই দেশের বাসিন্দারা ভাবতেও পারেননি তাঁদের ‘লা করোনা’ বা মুকুট নামে পরিচিত হামবল্ট হিমবাহও একদিন হারিয়ে যাবে। বর্তমানে ভেনেজুয়েলায় অবশিষ্ট বরফের পরিমাণ মাত্র ০.০২ বর্গ কিলোমিটার—যা বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় আর প্রকৃত হিমবাহ হিসেবে গণ্য করার মতো নয়। গবেষকদের মতে, এটি মূলত বরফের একটি ক্ষুদ্র অবশেষ, যা যেকোনো সময় সম্পূর্ণ গলে যেতে পারে। আরও পড়ুন: বড়দিনের আগেই ইসরোর সাফল্য, বাহুবলীতে উৎক্ষেপণ ৬ হাজার কেজির কৃত্রিম উপগ্রহের

১৯৯০ সালে প্রথম সিয়েরা নেভাদার সবচেয়ে ছোটও হিমবাহ ‘লা কোঞ্চা’তে এক বিশাল ফাটল। তার কয়েকমাস পরেই অদৃশ্য হয়ে যায় হিমবাহটি। তার পরের ৩৫ বছরে ‘চির তুষারের শহর’ মেরিদা তার শুভ্রতা খুইয়েছে।বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, হামবল্ট হিমবাহে এখন নতুন করে আর বরফ জমতে পারবে না। ‘এল নিনো’ জলবায়ু পরিস্থিতির প্রভাবে তাপমাত্রা বেড়ে নিরক্ষীয় হিমবাহের গলন আরও দ্রুত করছে। ভেনেজুয়েলার আন্দিজ অঞ্চলের তাপমাত্রা এখন ওই জায়গার গড় তাপমাত্রার তুলনায় ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এটা খুবই অস্বাভাবিক বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। জলবায়ু বিশেষজ্ঞ এবং আবহাওয়া ইতিহাসবিদ ম্যাক্সিমিলিয়ানো হেরেরা জানিয়েছেন, বহু দেশ ১২ থেকে ১৫ হাজার বছর আগে তাদের হিমবাহ হারিয়েছিল। তবে আধুনিক যুগে ভেনেজুয়েলাই সম্ভবত প্রথম দেশ, যারা হিমবাহশূন্য হয়ে গেল।’ হেরেরার মতে, আগামী দিনে ইন্দোনেশিয়া, মেক্সিকো এবং স্লোভেনিয়াও তাদের হিমবাহ হারাতে চলেছে। যে বছরকেই ‘হিমবাহ সংরক্ষণের বছর’ বলে ঘোষণা করা হল, সেই বছরই হারিয়ে গেল ভেনেজুয়েলা’র সব হিমবাহ। এ কী কম লজ্জার! কিন্তু এই লজ্জা কাদের? বর্তমান যান্ত্রিকমানব সভ্যতার নয় কি?
–

–

–

–

–

–

–


