প্রেমিকদের এভাবে হারিয়ে দিচ্ছেন মারিয়া!

এক ক্লিকে ইউটিউবে তখন দেখা যেত না টেনিস-দিকপালদের স্ম্যাশ, ফোর হ্যান্ড, ব্যাক হ্যান্ডগুলো। তখনও ভারতীয় ক্রিকেট দলের নেতৃত্ব এক বাঙালির বজ্র-কঠিন মেরুদণ্ডে শায়িত। সুনীল তখনও কবিতা লিখে চলেছেন। লিও মেসি নামক ফুটবল-জাদুকর তখনও বিশ্বকে সম্মোহিত করেননি। হলিউডে এক নম্বর ব্র্যাড পিট-জেনিফার অ্যানিস্টন। অ্যাঞ্জেলিনা জোলির সঙ্গে ডিভোর্স তো দুরস্ত, বিয়েই হয়নি পিট-জোলির। নাদালের কপাল খোলেনি, জোটেনি একটিও গ্র্যান্ড স্ল্যাম।

সালটা 2004, ঠিক পনেরো বছর আগের কথা।

6 ফুট 2 ইঞ্চির রুশ সুন্দরীকে দেখে কোনও পুরুষের মনের অতলে প্রেমের মোচড় কাটেনি, এমন কেউ আছেন কি এই দুনিয়ায়! মনে তো হয় না। সেই 2003 থেকে পেশাদার টেনিস সার্কিটে ‘রাশিয়ান বিউটি’। তার আগে ভারতীয়দের মন-প্রাণ-উন্মাদনা জুড়ে কত কত নামই না ছিল! গ্যাব্রিয়েল সাবাতিনি, স্টেফি গ্রাফ, মণিকা সেলেস, মার্টিনা হিঙ্গিস, অ্যানা কোরনিকোভা। আরও কত সুন্দরী! কিন্তু শারাপোভার টেনিস-উদয়ের পরে যেন গোটা বিশ্বের ক্যামেরা তাক করে থাকত কখন সার্কিটে দেখা মিলবে মারিয়ার। ‘অফ দ্য ফিল্ড’ পার্টিতে কিংবা রাম্পে কখন স্বল্প বসনে লেন্সবন্দি হবেন রুশ সুন্দরী – প্রতীক্ষার প্রহর গুনেই চলে গোটা দুনিয়া। আজও।

আরও পড়ুন – সিন্ধুর বিশ্ব জয় নিয়ে যা বললেন বাংলার ব্যাডমিন্টন তারকা অরূপ বৈদ্য

গ্র্যান্ড স্ল্যাম সিঙ্গলসে উইম্বলডন, যুক্তরাষ্ট্র ওপেন থেকে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফ্রেঞ্চ ওপেন – ঝুলিতে কি নেই! অলিম্পিকেও তাঁর গ্ল্যামারে-পারফর্ম্যান্সে সার্কিট পুড়ে ছারখার। কিন্তু বছর তিনেক আগে জীবনের কঠিন নিয়মে হার মানতেই হল। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের আগে নিষিদ্ধ ড্রাগ ‘মেলডোনিয়াম’-এর হদিশ মিলল মারিয়ার রক্তে। তারপর সাসপেনশন। কামব্যাক। টেনিস দুনিয়া পড়ে ফেলল মারিয়ার ওঠা-নামার কত ইতিহাস!

ডোপ টেস্টে হার মেনেছিলেন ঠিকই, কিন্তু টেনিস-সার্কিটে ওঁর ‘কামব্যাক’-এর অফুরান ইচ্ছেশক্তি কিন্তু হারেনি বয়সের কাছে। সে জেদ-মানসিকতাকে কিন্তু হারাতে পারেনি আধুনিকতর থেকে আধুনিকতম হয়ে ওঠা টেনিস বিশ্ব। তবে বিপক্ষে যখন চির প্রতিদ্বন্দ্বী সেরেনা উইলিয়ামস?

ফ্ল্যাশ ব্যাক 2004, কোর্টে মুখোমুখি রুশ বিউটি বনাম আমেরিকান ব্ল্যাক বিউটি। দুই ‘গ্ল্যামার গার্ল’-এর রিফ্লেক্স দেখে চমকে উঠেছিল টেনিস দুনিয়া। একেকটা রিটার্ন যেন কোর্টে হাজির করাচ্ছিল গ্রাফ-নাভ্রাতিলোভাদের। শরীর জুড়ে বিন্দু বিন্দু ঘামের সঙ্গে মিশে স্বপ্নের মহাসাগর। স্বপ্নপূরণের নির্মম খিদে। উইম্বলডনের ঘাসের কোর্টে 6-1, 6-4 ব্যবধানে সেরেনাকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন মারিয়া।

আরও পড়ুন – EXCLUSIVE: ডার্বিতে আমন্ত্রণ, এবার আইএফএ-র প্রশাসনেও সৌরভ!

পরের 15 বছরেও যতবারই কোর্টে মারিয়া-সেরেনা মুখোমুখি, যেন বজ্রকণ্ঠে সুনামি আছড়ে পড়েছে টেনিস দুনিয়ায়। পরিসংখ্যান বলছে, সেরেনার পক্ষে 20 বারের উল্লাস। সেখানে শারাপোভা মাত্র তিনেই থেমে রয়েছেন। তবে 20-2 রেজাল্টের চাপা আর্তনাদ বুকে নিয়েও মারিয়াপ্রেমীরা এখনও উল্টোদিকে সেরেনাকে দেখতে পেলেই জ্বলে ওঠেন বদলার স্পৃহায়। কিন্তু শারাপোভা শুনতে কি পান প্রেমিককুলের সে মিনতি!

2019 আমেরিকান ওপেনে মারিয়া-সেরেনা আরাধ্য দ্বৈরথ। না, সত্যি বছর পনের আগে টেমসের ধারে যে মারিয়াকে পেয়েছিলাম আমরা, বদলে গিয়েছেন তিনি। বয়স তো সেরেনারও হয়েছে। কিন্তু নেটের উল্টোপ্রান্তে মারিয়াকে দেখলে এখনও শরীরটা যেন ফুটতে থাকে ব্ল্যাক বিউটি-র। রুশ সুন্দরীকে দুমড়ে-মুচড়ে খতম করতে না পারলে যেন ঘুমই হবে না উইলিয়ামসের। ভারতীয় সময় মঙ্গলবার ভোররাতে ফের যেন ঝিমিয়েই রইলেন মারিয়া। নিট রেজাল্ট 6-1, 6-1 সেরেনার পক্ষে। টানা উনিশবার মারিয়াকে বিদ্ধ করলেন সেরেনা।

‘প্রেস্টিজ ফাইট’ আর হল কোথায় মারিয়ার। আবার যে হেরে গেল তাঁর প্রেমিককুল।

আরও পড়ুন – বাড়ি ফিরলে সোনার মেয়ে সিন্ধুকে তাঁর মা কী খাওয়াবে জানেন?

Previous articleজম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়ন, বিশেষ মন্ত্রীগোষ্ঠী গঠন কেন্দ্রের
Next articleনারদ-কাণ্ডে জড়িয়ে গেলো বিজেপি, CBI তলব শোভন চট্টোপাধ্যায়কে