নদিয়া: জ্বলছে আমাজন। জ্বলছে আফ্রিকাও। সবুজ হারাচ্ছে পৃথিবী। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বিশ্বজুড়ে। আর শুধুমাত্র কিছু ভুল ধারণা আর সংস্কারের বশে সবুজ ধ্বংসে মাতল নদিয়ার তাহেরপুর, গাংনাপুর। ক্যান্সার ছড়াচ্ছে, এই ধারণায় কেটে সাফ করে ফেলা হচ্ছে আফ্রিকান মেহগনি গাছ। এলাকার মানুষের কাছে যার পরিচিতি আবার লম্বু গাছ হিসেবেই।

এ গাছের কাঠ খুব ভাল দামে বিক্রি হওয়ায় তাহেরপুর এলাকার নার্সারিগুলিও এতদিন আফ্রিকান মেহগনি বিক্রি করে প্রচুর লাভ করতো। এ বার এই গাছকে ঘিরে আতঙ্ক ছড়ানোয় কেউ আর এই গাছের চারা কিনতে চাইছে না বলে জানালেন নার্সারি মালিকরা। তাহেরপুরের জয়পুর গ্রামের কলমবাগান পাড়ায় অনুকূল মোদক নামে এক নার্সারি মালিকের নার্সারিতে প্রায় 4 হাজার আফ্রিকান মেহগনি গাছ গত 4 বছর ধরে বেড়ে উঠছে। অনুকূলবাবু বলেন, “শোনা যাচ্ছে এই লম্বু গাছ অর্থাৎ আফ্রিকান মেহগনি থেকে ক্যান্সারের জীবাণু ছড়াচ্ছে। সেই আতঙ্কে যে যেখানে পারছেন এই গাছ কেটে ফেলছেন। নার্সারিতেও তাই আর লম্বু গাছের কোনও বিক্রি নেই। সমস্ত চারা পড়ে রয়েছে।”

আরও পড়ুন-বিরল প্রজাতির গন্ধগোকুল উদ্ধার! কোথায় জানেন?

তিনি জানান, অর্থকরী ফসল হিসাবে লম্বুগাছ তাড়াতাড়ি বাড়ে এবং ভাল দামও পাওয়া যায়। তাই বাজারে বিক্রিও ছিল ভালো। কিন্তু এ বছর বিক্রি একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে নার্সারিতে বেড়ে ওঠা দু থেকে চার বছর বয়সের প্রায় পাঁচশোটি লম্বু গাছ ইতিমধ্যেই কেটে ফেলে দিয়েছেন তিনি। বাকিগুলোও আগামী দিনে কেটে দেবেন।

অনুকূলবাবুর মতো নার্সারি নেই গাংনাপুরের প্রফুল্ল বিশ্বাস ও নিমাই বিশ্বাসের। বাগান রয়েছে তাঁদের। ক্যান্সার ছড়াচ্ছে গুজব শুনে এরা দুজনই সেই বাগানে থাকা প্রায় একশো আফ্রিকান মেহগনি গাছ কেটে ফেলেছেন। শুধু নদিয়া নয়, গুজবে বৃক্ষ নিধন চলছে উত্তর 24 পরগনার কয়েকটি জায়গাতেও । তাঁদের কথায়, “যে গাছ থেকে ক্যান্সারের মতো রোগ ছড়াচ্ছে সে গাছ বাগানে রাখার কোনও দরকার নেই।”

আরও পড়ুন-গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে নিম্নচাপ, চলবে বৃষ্টি

বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জয়ন্ত তরফদার জানান, বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব এবং কুসংস্কার। তাঁর কথায়, “আফ্রিকান মেহগনি গাছের ছাল এবং ফল থেকে তেল তৈরি করা হয়। অর্থকরী এই গাছের কাঠ থেকে খুব ভালো আসবাবপত্রও তৈরি হয়।”
গুজবে কান না দিয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন হওয়ার আবেদন জানাচ্ছেন উদ্বিগ্ন পরিবেশপ্রেমীরাও।

আরও পড়ুন-ড্রাগের নেশায় আক্রান্ত মেয়েকে শিকল পরালেন মা! জানলে চোখে জল আসবে
