রাণু মন্ডলকে দেখে যা শিখলাম

রাণু মন্ডলকে দেখে যা যা শিখলাম। খুব সংক্ষেপে লিখছি।

১। যখন তোমার কিছু থাকবেনা তখন সবাই তোমায় ছেড়ে চলে যাবে। টাকা পয়সা আর সাফল্য পেলেই সবাই আবার তোমার পেছনে ধাবিত হবে। উদাহরণ, রাণু মন্ডলের মেয়ে। তাই ভালোবাসার মানুষদের পেছনে না ছুটে সাফল্যের পেছনে ছোটা প্রয়োজন।

২। সোশাল মিডিয়া কতটা শক্তিশালী পুনরায় প্রমাণিত হল, বিশেষ করে যদি এটাকে ভালো কাজে ব্যবহার করা হয়। গরীবের সাথে ফটো তোলা বা ভিডিও করাকে যারা “ফুটেজ” মনে করত তারা আবার ভুল প্রমাণিত হল। একটা ভিডিওই একজন গরীবের জীবন বদলে দিল।

৩। রাণুর মত আরও বহু গরিব মানুষ গান শুনিয়ে ভিক্ষা করে। তাদের অনেকের গানই ট্রেনে বাসে শুনতে পাই। জোর গলায় বলতে পারি, বেশ কয়েকজনের গলা কুমার শানু বা উদিত নারায়ণের সুরের সমকক্ষ অনায়াসে হতে পারে। শুধু খানিকটা রেওয়াজ প্রয়োজন। কিন্তু তারা কোনোদিন নামডাক পাবেনা। কারণ তারা নোবেলের মত সারেগামাপার মঞ্চে গান গায়না, কিংবা ধিনচ্যাক পুজার মত বিগবসে ডাক পায়না। তাদের পরিচয় তারা ভিখারি।

৪। তাহলে রাণু মন্ডল কেন নামডাক পেল? পাতি বাংলায় উত্তর হল “হুজুগ”। এক ভিখারি লতার কন্ঠে গান গেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। মিডিয়া প্রত্যেকটা নিউজে রাণু মন্ডলের নামের পাশে “ভিখারি” ট্যাগ জুড়ে দিয়ে সিমপ্যাথি আর টিআরপি আদায় করল। এমন একটা খবর দেখাতে পারবে, যেখানে রাণু মন্ডলের নামের পাশে একবার হলেও “ভিক্ষা করতেন” কথাটা লেখা নেই? হিমেশ গান গাইবার সুযোগ দিয়ে মহানতা দেখালো। রাণু কি লতা মঙ্গেশকরের জায়গায় জেতে পারবে? না, হুজুগ শেষ হলে রাণুকেও সবাই ভুলে যাবে। এখন কথাটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এক বছর বাদে মিলিয়ে নিও। ঠিক যেমনটা ‘চোখ মারা’ প্রিয়া প্রকাশের ক্ষেত্রে বলেছিলাম। আজ আবার জিজ্ঞেস করছি, প্রিয়া প্রকাশ কোথায় এখন?

৫। তাহলে কন্ডাক্টর রজনীকান্ত আজ সুপারস্টার হল কিভাবে? উত্তর হল প্যাশন আর ইচ্ছাশক্তি। রাণু মন্ডলের ইন্টারভিউ দেখলাম, তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে “অতীন্দ্র ছেলেটার জন্যেই তো এত নামডাক পেলেন।” অতীন্দ্র মানে সেই ছেলেটা যে রাণুদিকে ফেসবুকে ভাইরাল করেছে। তাতে রাণুদি রীতিমত চোখ পাকিয়ে বললেন, “না ও কিচ্ছু করেনি আমার জন্য। ওর জন্য এত নামডাক পাইনি। ভগবান করেছে। ওই ছেলেটা ভগবানের চাকর।” অথচ ছেলেটা এখনও খেটে চলেছে রাণুদির জন্য। রজনীকান্তের ইন্টারভিউ দেখো। প্রথম জীবনে স্ট্রাগল করার সময় যারা তাঁকে হেল্প করেছিল, তাদের অবদান এখনও ভোলেন নি। পার্থক্য এখানেই। ভগবান পাখিকে ডানা দেন ঠিকই, কিন্তু বেশী ওপরে উড়তে গেলে অনেকসময় বজ্রপাতে ডানা ঝলসে যায়। তাই হিসেব কষে ওড়া উচিৎ।

৬। অতীন্দ্র নামের ছেলেটা ভীষণ ভালো কাজ করেছে, একজন গরীবকে রাস্তা থেকে তুলে রাজসিংহাসনে বসিয়েছে। কিন্তু এবার তার সরে এসে ভগবানের নামগান করা উচিৎ। কেননা সে ভগবানের চাকর, রাণুদির তো নয়। রাণুদির জন্য না হয় ভগবান আরেকজন চাকর পাঠিয়ে দেবেন। শুনলাম অতীন্দ্র ছেলেটাও খুব কষ্ট পেয়েছে ইন্টারভিউ দেখে। আসলে মানুষের ভালো করা উচিৎ, কিন্তু তাদেরই করা উচিৎ যারা সেটা ডিসার্ভ করে… সব কিছুরই লিমিট থাকা ভালো, উপকারেরও…

Previous articleতেলেঙ্গানা এক্সপ্রেসে আগুন!
Next articleবিজেপিতেই যোগ দিচ্ছেন তৃণমূলের দেবশ্রী, মাঝরাতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত