ছাত্রছাত্রীদের নাসা যাওয়ার পিছনে অন্য ব্যবসা !

নাসায় ডাক পেল ছাত্রী, এই উৎসাহব্যঞ্জক খবরের আড়ালে অন্য উদ্বেগজনক দিক সামনে আসছে। পাল্টা একটি পোস্ট ঘুরছে, তাতে দেখা যাচ্ছে বিষয়টি মারাত্মক। ফলে সবার উচিত যথাযথ খবর নিয়ে রাখা। পোস্টে লেখা হয়েছে: বাঙালি মেয়ের নাসা যাওয়ার গুজব; শিক্ষার নামে কয়েকশ কোটি টাকার অলিম্পিয়াড ব্যবসা। ব্যবসা করতে গেলে নতুন নতুন পরিকল্পনা চাই। আর সেটা যদি হয় স্কুলের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে; তাহলে তো আর কথাই নেই। নিজের ছেলে মেয়ের শিক্ষা ও অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকা নিয়ে সব বাবা-মা-ই সর্বদা উৎকণ্ঠিত। আর বাবা-মায়ের সেই আবেগকে হাতিয়ার করেই ভারত জুড়ে কয়েকশো কোটি টাকার ব্যবসা ফেঁদেছে সিলভার জোন পাবলিশার্স।
আর তার মধ্যে; “নাসা যাওয়ার ডাক পেল পুরুলিয়ার কিশোরী”; এইধরনের কোন ভুয়ো খবর যদি বাজারে ছাড়া যায়; তাহলে তো সোনায় সোহাগা। “নাসা যাওয়ার ডাক পেল পুরুলিয়ার কিশোরী”। কয়েকদিন আগেই সব বাংলা সংবাদমাধ্যমে; বড়বড় করে নিউজ হয়। বড় হয়ে সে মহাকাশে যেতে চায়; আর তার আগেই; পুরুলিয়া শহরের কিশোরী অভিনন্দা ঘোষের হাতে যেন চাঁদ এসে হাজির। দিল্লির একটি বেসরকারি সংস্থা আয়োজিত; বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে সফল হয়ে সুযোগ মিলেছে; ‘নাসা’-য় পাড়ি দেওয়ার।
খবরটি পড়ে পুরুলিয়া সহ; গোটা রাজ্যের বহু মানুষ উল্লসিত। হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ঘটনাটি কি আদৌ সত্য বা কত টুকু সত্য নিহিত আছে? বিষয়টি নিয়ে পুরুলিয়া যুক্তিবাদী সমিতির এক সম্পাদক এবং এক সাংবাদিক; সত্য উতঘাটনের চেষ্টা করেন। International Science Olympiad নামক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা; কিছু বিষয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিযোগিতার আয়োজন করে; এবং তা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত হয়।
নাসার এক কর্মকর্তাকে মেল করলে উত্তরে নাসা জানায়; “NASA does not sponsor and is not associated with the organization (Silver Zone) that you refer to in your message”। তবে তারা আরও জানায়,”However, the general public is welcome to visit and tour many NASA installations”।
আসলে গোটা বিশ্বের মত; ভারতের যে কোন স্কুলই তাদের ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে; নাসাতে যেতেই পারে। আগে থেকে স্কুলের নাম দিয়ে অনুমতি নিয়ে রাখলেই হল। আর এটাকেই নিজেদের প্রচারের অঙ্গ করে; সাধারণ মানুষকে বোকা বানাচ্ছে সিলভার জোন বই পাবলিশার্স।
Siver Zone তাদের বই বিক্রির এক বিরাট ব্যবসা ফেঁদেছে; এবং নানাভাবে মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। এবং দেশ ও রাজ্যের কিছু ইংলিশ মাধ্যম স্কুল; তাদের বাজারদর আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। কারণ ওই সব স্কুল ব্যবসার এক একটা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। সাধারণ মানুষ দুষছেন সংবাদমাধ্যমকেও।
খবরের সত্যতা যাচাই না করেই; বাংলার সংবাদ মাধ্যম দিল ‘নাসার ডাক’ গল্প।
এবার আসা যাক আসল তথ্যে। Silver Zone এর International Olympiad 10 টি বিষয়ে হয়। সায়েন্স, ম্যাথস, জিকে, ইংলিশ, কম্পিউটার সায়েন্স সহ মোট 10টি বিষয়ে। পড়তে হবে তাদেরই বই। নিচু ক্লাসের একটি একটি বিষয়ে বইয়ের দাম; মোটামুটি 350 টাকা দিয়ে শুরু। আর একটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে গেলে দিতে হবে 150 টাকা পরীক্ষা ফি। অর্থাৎ একটি সাবজেক্টে পরীক্ষা দিলে; একজন ক্লাস থ্রির ছাত্রের খরচ (বই 350 টাকা + ফি 150 টাকা) মোট 500 টাকা।
সাধারণত সকলেই 3-4 টি বিষয়ে পরীক্ষা দেয়। কারণ এটা এখন বাবা-মা দের প্রেস্টিজ ইস্যু। “তোমার ছেলে International Olympiad দিয়েছে? আমার ছেলে গতবার সায়েন্সে রুপো পেয়েছে”। সবচেয়ে কম যদি ধরি; একটি ছাত্র বা ছাত্রী যদি 2টি সাবজেক্টে পরীক্ষা দেয়; তাহলে তার খরচা 2টি বই 350 টাকা করে 700 টাকা। আর 2টি বিষয়ে এন্ট্রি ফি 150 টাকা করে 300 টাকা। অর্থাৎ সবচেয়ে নিচু ক্লাসের; একজন ছাত্র বা ছাত্রীর মাথাপিছু খরচ 1000 টাকা। এবছর পরীক্ষা দিচ্ছে 18 লক্ষ ছেলে মেয়ে। সবচেয়ে নিচু ক্লাসের বই ও সবচেয়ে কম 2টি সাবজেক্টে পরীক্ষা ধরে; সিলভার জোনের ইনকাম 180 কোটি টাকা। বড় ক্লাসের বইয়ের খরচা আরও বেশি বেশি। আর অর্ধেক ছাত্র ছাত্রী যদি 4টি সাবজেক্টে পরীক্ষা দেয়; তাহলে এই ইনকাম বেড়ে দাঁড়াবে; আরও 200 কোটির বেশি। অর্থাৎ প্রতি বছর এই International Olympiad এর নাম করে প্রায় 300-400 কোটি টাকা আয় করে সিলভার জোন।যদিও এসব অস্বীকার করেছে সংস্থাটি।

Previous articleব্রেকফাস্ট স্পোর্টস
Next articleদেবশ্রীর যোগদান নিয়ে কারও আপত্তি মানা হবে না, সাফ কথা দিলীপ ঘোষের