ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণে আপনাকে যা-যা করতে হবে

দীপ্র ভট্টাচার্য

ভারতীয় অর্থনীতিতে জোয়ার আনতে, ব্যাঙ্কিং সংস্কারে সরকারের নতুন পদক্ষেপ ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণ। 2017 তে দেশের 27টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে সংযুক্তিকরণ প্রক্রিয়ার মা, মাধ্যমে 2019-এ নামিয়ে আনা হল 12টি তে। ভারতীয় অর্থনীতিকে ‘ফাইভ ট্রিলিয়ন ডলার ইকনমি’তে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই এই সংযুক্তিকরণ।

ভারতীয় অর্থনীতিতে তার কি কি প্রভাব পড়তে চলেছে, তা সময়ই বলবে। আমরা বরং সাধারণ মানুষের উপর কি ধরণের প্রভাব পড়বে, তা দেখি।

মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন কর্মসঙ্কোচন না করেই এই সংযুক্তি হবে। যদিও বা তা না হয়, ব্রাঞ্চ অপ্টিমাইজেশান, সফটওয়্যার সাপোর্ট, এটিএম ম্যানেজমেন্ট-এর ক্ষেত্রে ম্যানপাওয়ার রিসাফ্লিং অনিবার্য। এর ফলে নতুন ফ্রেস রিক্রুটমেন্টে তার প্রভাব পড়বেই। কিন্তু এর ফলে সাধারণ গ্রাহকজীবনে, তাদের দৈনন্দিন কার্যকলাপে কি ধরণের পরিবর্তন বা প্রভাব পড়তে পারে, তা এখানে গ্রাহক দের সুবিধার্থে দেওয়া হল।

প্রথমেই আসি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নাম্বার, এমআইসি আর কোড, আর আইএফএসসি কোডের কথায়। আজকাল প্রায় সবাই লেনদেনে ইসিএস পদ্ধতি ব্যাবহার করে থাকেন। তা সে বেতন, বিভিন্ন শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ডের ডিভিডেন্ড, ইউটিলিটি কোম্পানির বিল পেমেন্ট ( ইলেকট্রিক, টেলিফোন, গ্যাস সাবসিডি, ইত্যাদি), ইএমআই পেমেন্ট, যাই হোক না কেন, এই ক্ষেত্রে গ্রাহককে সেই সংস্থার অ্যাকাউন্ট নং এবং আই এফএসসি কোড দিতে হয়। সংযুক্তির পর আর্থিক লেনদেন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে গেলে এই সব তথ্য গ্রাহককে আবার নতুন করে দিতে হবে। আয়কর রিটার্ন দেওয়ার সময় ব্যাঙ্কের তথ্যর সঙ্গে এই যে কোড দিতে হয়, তাও বদলাতে হবে।

দ্বিতীয়ত, যে সমস্ত ব্যাংক এর গ্রাহকরা অ্যাঙ্কর ব্যাঙ্ককে সংযুক্ত হলেন, তাদের চেক বই বদলাতে হবে। তবে এখনি পুরোনো চেক বাতিল হবে না। ব্যাঙ্কের নির্দেশ পেলে নতুন চেক বই ইস্যু হবে এবং তাই ব্যাবহার করতে হবে।

তৃতীয়ত, যারা শেয়ার মার্কেটে লেনদেন করেন, বা মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করেন, তাদের স্ট্যান্ডিং ইন্সট্রাকশনে, আইএফএসসি কোড বদলাতে হবে।

চতুর্থত, সংযুক্ত হওয়া ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডাররা তাদের শেয়ারের পরিবর্তে শেয়ার সোয়াপ রেশিও অনুযায়ী অ্যাঙ্কর ব্যাঙ্কের শেয়ার পাবেন।

পঞ্চমত, কার্ডের বিষয়টি। ডেবিট, ক্রেডিট, এটিএম কার্ড বদলে যাবে, সংযুক্তিকরণ সম্পূর্ণ হবার পর।

ষষ্ঠত, যারা ঋণ নিয়েছেন, তাদের জন্য পুরোনো হারই বলবত থাকবে, কিন্তু এম সিএলআর ভিত্তিক সুদ হলে এক বছর পর থেকে নতুন হার কার্যকর হবে। ক্যাশ বা চেক কিন্তু পেরেন্ট ব্যাঙ্কেই জমা দিতে হবে।

সপ্তমত, টার্ম ডিপোজিট এর ক্ষেত্রে অ্যাঙ্কর ব্যাঙ্ক চাইলে ফিক্সড ডিপোজিট সার্টিফিকেট নতুন করে ইস্যু করতে পারে, তবে সুদের হারের কোনও পরিবর্তন হবে না। মেয়াদ শেষ হবার পর কিন্তু অ্যাঙ্কর ব্যাঙ্কের হারই কার্যকর হবে।

অষ্টমত, প্রতি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টের প্রোফাইল অনুযায়ী একটা কোয়ার্টারলি অ্যাভারেজ ব্যালেন্স মেন্টেন করতে হয়। সংযুক্ত হওয়া ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের কিন্তু এবার মূল ব্যাঙ্কের নিয়মানুযায়ী ব্যালেন্স রাখতে হবে।

নবমত, সার্ভিস চার্জও ব্যাঙ্ক বিশেষে আলাদা সংযুক্তিকরণ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে, নতুন রেট কার্যকর হবে।

দশমত, এটিএম ব্যাবহারের ক্ষেত্রে এবং শাখা ব্যাঙ্কিং এর ক্ষেত্রে, গ্রাহকরা সংযুক্ত হওয়া ব্যাংকের এটিএম ও শাখা ব্যাবহার করতে পারবেন। এর জন্য অতিরিক্ত কোনো চার্জও লাগবেনা।

সাধারণ গ্রাহকের আর্থিক লেনদেন প্রক্রিয়ার ওপর এই উপরোক্ত দশটি ক্ষেত্রে সংযুক্তিকরণের প্রভাব অনিবার্য। এই ব্যাপারে গ্রাহককে তার নিজস্ব ব্যাঙ্কের ভবিষ্যৎ নির্দেশনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে এবং সেই মত সঠিকভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।

লেখক –
এম এস সি (অর্থনীতি), এম বি এ, ফেলো সি এম এ,
পি এইচ ডি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট)

Previous articleNRC নিয়ে ক্ষুব্ধ অধীর কী বললেন জেনে নিন
Next articleদলের নিয়ম সবাইকে মানতে হবে, এবার শোভন-বৈশাখীকে কটাক্ষ লকেটের