যেদিকে চোখ যাচ্ছে, শুধু মানুষ আর মানুষ। দিশেহারা বাবা। পাগল হয়ে যাচ্ছিলেন মধ্য বয়স্ক মানুষটি।

বড় আশা নিয়ে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বি দেখতে গিয়েছিলেন ভদ্রলোক। প্রিয় দলের জয় দেখতে সঙ্গে নিয়েছিলেন বছর বারোর ছোট্ট মেয়েটিকেও। মেয়েও খুব উৎসাহী। বাবার হাত ধরে যুবভারতীতে এশিয়ার শ্রেষ্ঠ ডার্বি ম্যাচ দেখতে গিয়েছিল সে। কিন্তু ওখানে এমন অঘটন ঘটবে কে-ই বা জানত!

মরশুমের প্রথম ডার্বি। টিকিটের হাহাকার। হাজারে-হাজারে মানুষ লাল-হলুদ, সবুজ-মেরুন রঙে নিজেদের রাঙিয়ে পিলপিল করে এগোচ্ছে স্টেডিয়ামের দিকে। ম্যাচ শুরু হতে বেশি দেরি নেই। বাবার হাত ধরে ছোট্ট মেয়েটিও স্টেডিয়ামে ঢুকতে যাচ্ছিল। কিন্তু ভিড়ের চাপে হঠাৎ যে কি হল! ঘাড় ঘুরিয়েই দেখে, পাশে বাবা নেই। মধ্য বয়স্ক মানুষটি পাগলের মতো এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন। কোথায় তাঁর মেয়ে! যাঁকেই পাচ্ছেন, জিজ্ঞাসা করছেন মেয়ের কথা। ঘাড় নাড়িয়ে সকলেই বুঝিয়ে দিচ্ছেন, দেখেননি।

আরও পড়ুন-একনজরে কলকাতা ডার্বির সাতকাহন


ঘামে ভিজে গোটা শরীর ভদ্রলোকের। অস্থিরতা চরমে। আদরের মেয়েকে এভাবে হারিয়ে ফেলতে হবে! ভাবলেই যে শরীরে কাঁটা দিচ্ছে। ডার্বির মহারণ তখন মাথায় উঠেছে। কোথায় মেয়ে!

আর দেরি করা নয়। সমর্থকরা কেউই বলতে পারছেন না তাঁর আদরের পুতুলটা কোথায় আছে। কোন দিকে গিয়েছে। শেষ উপায় পুলিশ। যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের দ্বারস্ত হলেন অসহায় বাবা। মোবাইল থেকে ছবি বের করে দেখালেন। তৎপর হয়ে উঠল পুলিশ। হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে নিমেষে বিভিন্ন গ্ৰুপে ছড়িয়ে গেল ছোট্ট মেয়েটির ছবি। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান দুই ক্লাবের সমর্থকরাও তখন একজোট হয়ে শুরু করল তল্লাশি। বিধাননগর পুলিশও রাউন্ডে বেরিয়ে পড়ল মেয়েটির খোঁজে।

অবশেষে পাওয়া গেল ছোট্ট মেয়েটিকে। হাসি ফিরল বাবার।

সেই বাবা-মেয়ে জুটি কোন দলের সমর্থক জানা নেই। রবিবাসরীয় ডার্বি ড্র। জিতল না কোনও দলই। কিন্তু জিতে ফিরল ফুটবলের প্রতি অমলিন প্রেম। হয়তো ওই ছোট্ট মেয়েটা আর তার বাবার হাত ধরেই।

আরও পড়ুন-উত্তেজক ম্যাচ হলেও মরশুমের প্রথম ডার্বি গোলশূন্য
