পোস্টমর্টেম ব্যারাকপুর: অর্জুনের বাড়ি থেকেই দুষ্কৃতীদের পরিকল্পিত হামলা! সংযমী ছিল পুলিশ

লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি ব্যারাকপুর-ভাটপাড়া- জগদ্দল- কাকিনাড়া যেন দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। বংসবাজি-মারামারি-খুন-হিংসা কার্যত রোজনামচা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সেখানে বারেবারে নাম জড়িয়েছে ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিং এবং তাঁর বিধায়ক পুত্র পবন সিং-এর।

গত রবিবার একটি পার্টি অফিস দখলকে কেন্দ্র করে ফের রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল জগদ্দল। অভিযোগ, এই পার্টি অফিস দখলের নেতৃত্বে ছিলেন সাংসদ অর্জুন সিং এবং তাঁর পুত্র পবন সিং। পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, বাবা-ছেলের নেতৃত্বেই দুষ্কৃতীরা পরিকল্পিত হামলা ও গাড়ি চালায় বলে অভিযোগ।

পুলিশের দাবি, অর্জুন সিংয়ের বাড়ি মজদুর ভবন থেকে দুষ্কৃতীরা বেরিয়ে বোমাবাজি করছে। এমন একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নাকি হাতে এসেছে। যা থেকে স্পষ্ট, এটা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত একটি হামলা। যার নেতৃত্বে রয়েছেন অর্জুন সিং এবং তাঁর পুত্র পবন সিং।

শুধু তাই নয়। এই ফুটেজ দেখা গিয়েছে, অর্জুন ও পবনের দেহরক্ষী সিআইএসএফের জওয়ানরাও নাকি হামলায় মদত দিচ্ছে। চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধেও মামলা করতে চলেছে পুলিশ। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট পরিস্কার জানিয়েছে, দুষ্কৃতীদের মদত দেওয়া সিআইএসএফের কাজ নয়। মদত দিলে জওয়ানরাও গ্রেফতার হতে পারেন। এই প্রসঙ্গে ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, ‘একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ হাতে এসেছে। ফুটেজ দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, সেদিনের ঘটনায় পুলিশ অনেক সংযমী ছিল। মাথা ঠান্ডা রেখে পুরো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছে পুলিশ। পুলিশ কোনও প্ররোচনায় পা দেয়নি। এমন কোনও তথ্য-প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না, যেখানে পুলিশের জন্য কেউ চোট-আঘাত পেয়েছে।

রাজ্যের এডিজি আইন-শৃঙ্খলা জ্ঞানবন্ত সিং সাংবাদিক বৈঠক করে গোটা বিষয়টি সামনে এনেছেন। জগদ্দলের মেঘনা মোড়ে বাড়ি অর্জুন সিং-এর। মজদুর ভবনে থাকেন তিনি। তাঁর বাড়ি প্রহরার জন্য 24 ঘণ্টা সেখানে কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকে। এই মজদুর ভবনে নজরদারি চালানোর একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশের হাতে এসেছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, গত রবিবার সকাল 11টা 47 মিনিটে মজদুর ভবন থেকে মুখে গামছা বেঁধে কয়েকজন দুষ্কৃতী বেরিয়ে আসছে। একটা দুষ্কৃতীর হাতে প্লাস্টিকের প্যাকেট। দুষ্কৃতীরা রাস্তা পেরিয়ে ঢুকে পড়ে একটি গলিতে। কিছুক্ষণ পরেই এলাকায় পরপর চারটি বোমা পড়ে। একটি বোমা তৃণমূলের পার্টি অফিসের সামনেও ফেলা হয়। এরপর ওই দুষ্কৃতীরা মুখে গামছা অবস্থাতেই ফের ঢুকে পড়ে মজদুর ভবনে অর্জুনের বাড়িতে।

সাংসদ অর্জুন সিং এবং তাঁর বিধায়ক পুত্র পবন সিংয়ের প্ররোচনাতেই রবিবার শ্যামনগর, কাঁকিনাড়া ও ভাটপাড়ার বিভিন্ন অংশে গোলমাল হয়েছে, সেটা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে দিয়েছেন এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) জ্ঞানবন্ত সিং। তিনি বলেন, ওইদিন সকাল সাড়ে 10টা নাগাদ একটা ছোট ঘটনা ঘটেছিল। অর্জুন সিং এসে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তোলেন। তাঁর প্ররোচনাতেই কর্মী-সমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি করে, বোমা ছোঁড়ে।

তাঁর আরও দাবি, একটা ভিডিও ফুটেজ দেখান, যাতে দেখা যাচ্ছে, নিজের অনুগামী ও কর্মী-সমর্থকদের ছোঁড়া ইটের আঘাতেই জখম হয়েছেন অর্জুন সিং। শুধু তাই নয়, পুলিশের কাছে এরকম অসংখ্য ফুটেজ আছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে কীভাবে সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে পুলিশকে আক্রমণ করছে অর্জুন বাহিনী। যে আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাননি ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনারও।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, অর্জুনের বাড়িতে মোতায়েন থাকা সিআইএসএফ জওয়ানরা দুষ্কৃতীদের বের হতে ও পরে ফের ঢুকতে দেখেন। তবে তাদেরকে কোনওভাবে বাধা দেয়নি ওই জওয়ানরা। ঘণ্টাখানেক পর দুটি গাড়ি আসে মজদুর ভবনের সামনে। কয়েকজন ওই দুটি গাড়ি থেকে নামে। কিছুক্ষণ পর আবার তারা দ্রুত গাড়িতে উঠে চলে যায়।

এর পরই বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে মজদুর ভবনের সামনে আসেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (জোন-1) অজয় ঠাকুর। তাঁর সামনেও বোমাবাজি হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু পরিস্থিতি যাতে আরও ঘোরালো না হয়, এতকিছুর পরেও সংযমী ছিল পুলিশ।

Previous articleBreaking: শোভন বৈশাখীর সঙ্গে মধ্যরাতে বৈঠকে মুকুল
Next articleমহারাষ্ট্রের ওএনজিসি প্ল্যান্টে প্রকাণ্ড অগ্নিকান্ডে অন্ততপক্ষে পাঁচ প্রাণহানি