মহানায়ক আজও ‘এভারগ্রিন’

‘যদি হই চোরকাটা ওই শাড়ির ভাঁজে’…
অথবা-
‘কে প্রথম কাছে এসেছি’…
আবার-
‘সূর্য ডোবার পালা আসে যদি আসুক বেশ তো’…

আশা করছি মনে পড়ছে এই গানগুলি। আট থেকে আশি সব বাঙালির প্রাণের স্বর্ণযুগের গান। মহানায়ক উত্তম কুমারের লিপে প্রাণ পেয়েছিল এইসব কালজয়ী গান। আজ, মঙ্গলবার, 3 সেপ্টেম্বর মহানায়ক উত্তম কুমারের 94তম জন্মদিন।

আসল নাম অরুণ কুমার চ্যাটার্জি হলেও ‘উত্তম কুমার’ নামেই সিলভার স্ক্রিনে জনপ্রিয় ছিলেন তিনি। 1926 সালে আজকের দিনেই কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মধ্যবিত্ত পরিবার। তাই আর গ্র্যাজুয়েট হয়ে ওঠা হয়নি। গ্র্যাজুয়েট হওয়ার আগেই কলকাতা পোর্টে কেরানীর চাকরি শুরু করেন।

মঞ্চে কাজ করার সময়ই অভিনয়ের প্রেমে পড়েন। ‘মায়াডোর’ নামের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান কিন্তু শেষপর্যন্ত ছবিটি মুক্তি পায়নি। উত্তম কুমারের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘দৃষ্টিদান’। তবে তিনি সবার নজর কাড়েন ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে। এই ছবিতে অপরদিকে ছিলেন সুচিত্রা সেন। তারপর তো বাকিটা ইতিহাস। দর্শকদের একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে গিয়েছেন এই জুটি। বাংলা সিনেমার সর্বকালের সেরা ‘এভারগ্রিন’ জুটি উত্তম-সুচিত্রা।

‘হারানো সুর’, ‘সপ্তপদী’, ‘পথে হল দেরি’, ‘আনন্দ আশ্রম’, ‘নায়ক’, ‘চাওয়া পাওয়া’, ‘বিপাশা’, ‘সাগরিকা’, ‘খেলাঘর’, ‘ভ্রান্তিবিলাস’, ‘উত্তরায়ণ’ সহ একের পর এক ছবিতে দর্শকদের মনে ঠাঁই করে নেন উত্তম কুমার।

বাংলার পাশাপাশি হিন্দি ছবিতেও তিনি নিজের ছাপ রাখেন। ‘ছোটি সি মুলাকাত’, ‘দেশপেমী’, ‘মেরা করম মেরা ধরম’ নামের হিন্দি ছবিগুলিতেও তিনি অভিনয় করেছেন। সবার আইডলে পরিণত হন তিনি। হয়ে ওঠেন ‘মহানায়ক’। পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কারও।

অভিনয়ে আসার আগেই পারিবারিক পছন্দে বিয়ে করেছিলেন গৌরি চট্টোপাধ্যায়কে। তা হলেও উত্তম কুমার ছিলেন সবার ‘হার্টথ্রব’। তাঁর সঙ্গে একাধিক নায়িকার প্রেমের সম্পর্ক ঘিরে গুঞ্জনও উঠেছে একাধিকবার। দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবীকে। যদিও বিয়ের বৈধ কোনও দলিল নেই। সুপ্রিয়া দেবীও জানতেন উত্তম কুমারের বহু সম্পর্কে জড়িয়ে যাওয়ার কথা। তবুও তাঁকে ভালোবাসতেন বলে মেনে নিয়েছিলেন অনেক কিছুই।

উত্তম কুমার ছিলেন একজন ভার্সেটাইল অভিনেতা। সব ধরনের চরিত্রে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। বাঙালির মনের কোণে তিনি রোমান্টিক ইমেজ ধারণ করলেও প্রতি মুহূর্তে নিজেকে ভেঙে-চুরে নতুন করে আবিষ্কার করতে চেয়েছেন। নতুন কিছু জানার তৃষ্ণা তাঁর মধ্যে ছিল প্রবল। ভাল করে ইংরেজি বলার আকাঙ্ক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা থাকাকালীই বাড়িতে শিক্ষক রেখে ইংরেজি শিখেছেন। আর পছন্দ করতেন খেতে। স্ত্রী সুপ্রিয়া দেবীর হাতের বিভিন্ন পদের মুখরোচক রান্না ছিল মহানায়কের ভীষণ প্রিয়।

তবে হঠাৎ দ্রুত গুটিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিয়েছিল। গুরুপাক সমস্ত খাবারের প্রতি একসময় ডাক্তার নিষেধাজ্ঞা জারি করলেন। কিন্তু উত্তম কুমার সেসব একদম গায়ে লাগাননি। 1980 সালের 24 জুলাই হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা। সেই সময় তাঁর অভিনীত শেষ ছবি ‘ওগো বধূ সুন্দরী’-র শ্যুটিং চলছিল। সেখানেই তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়। তারপর তাঁর মৃত্যু হয়। তবে মৃত্যু তাঁর ফ্যান ফলোয়িং কমাতে পারেনি। আজও একইভাবে তাঁর অভিনয়ে মুগ্ধ সকলে। এমনকি তরুণ প্রজন্মও তাঁর রোমান্টিক, মায়াবী হাসিতে এখনও পাগল। এখনও অনেক নারীর স্বপ্নের পুরুষ তিনি। তাই মহানায়ক আজও যেন অমর।

আরও পড়ুন-এবার বিধানসভায় “গুমনামি” প্রসঙ্গ