আপনার ‘পূজো’ আমাদের পুজো নয়

বছর খানেক আগের কথা। বহুল প্রচারিত বাংলা দৈনিকের প্রথম পাতা। বিজ্ঞাপনের ভাষায় যাকে ‘জ্যাকেট’ বলা হয়, সেটিতে চোখ গিয়েছিল। আঁতকে উঠেছিলাম। ‘এয়ারটেল’-এর মতো সংস্থার বিজ্ঞাপন পাতা জুড়ে। কিন্তু কুৎসিত শব্দচয়ন, হতশ্রী বানানসমূহ। তা নিয়ে কম লেখালিখি হয়নি বিভিন্ন মাধ্যমে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়। সংবাদমাধ্যমে কটূক্তি, আরও কত কি! শুনেছিলাম, নড়েচড়ে বসেছিল ‘এয়ারটেল’ কর্তৃপক্ষ। ভুল শুধরোনোর আমূল প্রয়াস দেখিয়েছিলেন তাঁরা।

এবার নজরে ‘প্যান্টালুনস’। আমার অতিপ্রিয় ‘গার্মেন্ট স্টোর’। আধুনিকতা আর আভিজাত্য যেন একে অপরকে জাপ্টে ধরে থাকে দেওয়ালের প্রতিটি কোণায়। মেঝেতে।আলোয়। সামগ্রীতে। আড়ম্বর যেন হাতছানি দেয় মিনিটে-মিনিটে। বলা ভালো, প্রতিটি সেকেন্ডে। একবার ঢুকে পড়লে ক্যাশ কাউন্টারের লাইনে দাঁড়িয়েই পড়ে হার্ড ক্যাশ কিংবা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডটি। সঙ্গে আবার ক্রেতাকে আগামীতেও টেনে নিয়ে আসার অতি আধুনিক পদ্ধতি। প্রতি কেনাকাটায় পয়েন্টের সঙ্গে সমানুপাতিক হারে জমতে থাকবে অর্থ। সঙ্গে মাঝেমধ্যেই ঘুম থেকে উঠেই মেসেজ পাওয়া যায়। অমুক তারিখের মধ্যে এলে সুবিধের সাতকাহন। ডিসকাউন্ট, বাই ওয়ান গেট ফ্রি-এর প্রেক্ষিতে ওয়ান-টু-থ্রি শিখিয়েও ফেলতে পারেন আপনার সন্তানকে। নিট রেজাল্ট – আবার আসুন। কিনে ফেলুন। যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ‘ট্যাকটিক্যাল মুভ’, এক্কেবারে যেন স্প্যানিশ তিকিতাকা। ভালো, বেশ ভালো।

পুজোর গন্ধ তো বাতাসে মিশেই গিয়েছে। ঢাকে কাঠি তো পড়ল বলে। একটু চোখ বন্ধ করলেই দেখে ফেলি, চারদিন কোথায় কী করব। ফ্যাশন-প্যাশনের বাঙালি ছুটছে প্যান্টালুনস-এ। বুঝি ভিড়ের হিড়িক দেখে। প্রবেশদ্বারে হাতজোড় করার ‘ফ্রিকোয়েন্সি’ বেশ বেড়েছে সিকিওরিটিদের। ওঁদের আলতো হাসি কতটা পেশাদার জানি না, তবে সত্যি বড় নিষ্পাপই লাগে। ওঁদের ছেলেমেয়েকেও কি নিয়ে আসেন প্যান্টালুনসে কিছু কিনে দিতে ? জানতে ইচ্ছে হয়।

যাক সে সব।

‘আদিত্য বিড়লা গ্ৰুপ’-এর একটা শেয়ার কিনেছিলাম বেশ কিছুদিন আগে। বড় সংস্থা। বিরাট ব্যাপ্তি। তা একটাই কথা, আপনাদের পুজো মানে তো লাভক্ষতির অঙ্ক কষা। চলুক। চলতে থাকুক। কিন্তু আমাদের কাছে পুজো যে বড়ই শান্তির। সমৃদ্ধির। আনন্দের। প্রেমের। সব মলিনতা ঘুচিয়ে নতুন আলোয় সেজে ওঠার ক’টা দিন। সেই পুজোটাকে একটু মন থেকে উপলব্ধির অতল-মাঝে নিয়ে যাওয়া যায় না! সে না পারুন, অন্তত বাংলায় ব্যবসা করে যদি বাংলাটা ঠিক করে লিখতে না পারে আপনার বিজ্ঞাপনের আঞ্চলিক বড়কর্তারা, তবে যে আমাদের মলিনতা ঘোচার বদলে শরীর-মনে কাদা লেপ্টে যাওয়ার জোগাড়!

কোটি-কোটি টাকা রোজগার আপনাদের। অন্তহীন চাহিদা। আমরাও তো খুশি আপনাদের পেয়ে। পোশাকে-খাবারে-প্রসাধনে কোথায় নেই আপনারা! শহরের যে প্রান্তে যাচ্ছি, সেখানেই তো আপনি আপনার বিরাট সাম্রাজ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে। বারবার চোখ যাচ্ছে আপনার বিজ্ঞাপনে। ‘পূজো’ লেখাটা যেখানে যতবার পড়ছি, বিশ্বাস করুন, মন থেকে ঠিকরে বেরোচ্ছে যন্ত্রণার পুঁজ।

আপনার ‘পূজো’ আমাদের পুজো নয়। পারলে আমাদের পুজোয় নিজেকে সাজিয়ে নেবেন।

Previous articleকলকাতার হতদরিদ্র পরিবারের দুই ক্ষুদের জিমন্যাস্টিকের ভিডিও ভাইরাল! রাতারাতি সেলিব্রিটি
Next articleড্রাফটের মাধ্যমে সারদার টাকা ফেরালেন শতাব্দী