Saturday, November 15, 2025

মাছ -ভাত খেয়ে মুখে পান দিয়ে মেয়েরা ঢাকের কাঠিতে হাত দেন বাগবাজার হালদার বাড়িতে!

Date:

কখনও শুনেছেন এমন আজব রীতি? মাছ -ভাত খেয়ে মুখে পান দিয়ে তবেই মেয়েরা ঢাকের কাঠিতে হাত দিতে পারবেন? হ্যাঁ, বাগবাজার হালদার বাড়িতে সেই প্রথাই কিন্তু চলে আসছে। এই পুজো শহরের অন্যান্য বনেদি বাড়ির পুজোগুলির থেকে অনেকটাই ব্যতিক্রমী । এখানে মা দুর্গার মূর্তি কষ্ঠিপাথরের। কারণ, মা এই বাড়ির গৃহদেবতা হিসেবে নিত্য পূজিত হন।দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে একটু আলাদাভাবে বিধি মেনে পুজো করা হয় মহিষাসুরমর্দিনীর মূর্তির। বহু প্রাচীন এই মাতৃমূর্তিতে দুর্গার দু’পাশে একটু নিচের দিকে থাকেন তাঁর দুই সখী জয়া আর বিজয়া। মাথার উপরে থাকেন মহাকাল। সালঙ্কারা দুর্গা পদ্মের উপর আসীন। বর্তমান সেবায়েতরা জানিয়েছেন, এই মূর্তি নাকি বহু বছর আগে ওড়িশার কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছিল।

এই পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন , হালদার পরিবারের এক পূর্বপুরুষ একবার বালেশ্বরের কাছে সাহেবপুরে বেড়াতে যান। সেখানে স্বপ্নাদেশে দেবী তাঁকে বলেন যে ওই অঞ্চলে এক মুসলমান জেলে পরিবারের বাড়ির নিচে মাটির 14 ফুট গভীরে তাঁকে উল্টো করে শায়িত রাখা আছে। সেখান থেকে তুলে নিয়ে এসে তাঁকে যেন নিত্যপুজো করা হয়। সেই ব্যক্তি তৎক্ষণাৎ ওই অঞ্চলে খনন করে আড়াই ফুটের এই মূর্তি উদ্ধার করেন।
আসলে এও এক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির। সম্ভবত বঙ্গে মুসলমান আক্রমণের সময়ে কোনও ভক্ত দেবীকে মাটির তলায় সুরক্ষিত রেখেছিলেন।সেই থেকে তিনি হালদার পরিবারে পূজিতা।

আরও পড়ুন – ‘স্বপ্নের উড়ান’ এ চড়তে অবশ্যই আসতে হবে দর্জি পাড়ায়

সময় বদলেছে। এখন এই বাড়িতে শুধুমাত্র কষ্ঠিপাথরের মূর্তিটিই পূজিত হয়। পুজোর সময় বাড়ির নিয়ম অনুসারে দেবীকে দক্ষিণমুখী করে দেওয়া হয়। মনে করা হয়, উত্তরের কৈলাশ থেকে দক্ষিণে মুখ করে দেবীর মর্ত্যে আগমন ঘটল। পঞ্চমীর দিন দেবীর বোধন হয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় আমন্ত্রণ এবং অধিবাস। ষষ্ঠীর দিন ঢাকিরা আসেন। এই বাড়ির মহিলারা দুর্গাষষ্ঠী পালন করেন না। আমিষ এইদিন খেতেই হয় মেয়েদের। মাছ খেয়ে পান মুখে দিয়ে প্রথমে জলের ফোঁটা দিয়ে ঢাক বরণ করেন তাঁরা। পুজোর যাবতীয় কাজ সেদিন আমিষ খেয়েই করতে হয় ।

এই বাড়ির নবপত্রিকা স্নান একটু ব্যতিক্রমী । হালদারদের দুই জ্ঞাতি পরিবারের নবপত্রিকা এদিন একসঙ্গে স্নানে যায় বিরাট বিরাট দুই ছাতার তলায়।

বোধনের দিন রেড়ির তেলে যে ‘জাগ প্রদীপ’ জ্বালানো হয় তা বিসর্জন পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্যও নেভানো হয় না। হালদার বাড়ির কষ্ঠিপাথরের দুর্গা অত্যন্ত জাগ্রত বলে মনে করেন সবাই। তাঁরা বিশ্বাস করেন জাগ প্রদীপ  নিভে যাওয়া অশুভ। ঠাকুরের পুজো সমাপ্ত হয়ে গেলে এই প্রদীপে আর তেল দেওয়া হয় না, আস্তে আস্তে  নিভে যায় প্রদীপ। কিন্তু কখনওই নিজে থেকে বাড়ির সদস্যরা প্রদীপ নেভান না। এই বাড়িতে দেবীকে অন্নভোগ দেওয়া হয়।

এর সঙ্গে দেবীকে মাটির মালসায় দেওয়া হয় সরবত। বাটাচিনি আর লেবু দিয়ে এই সরবত তৈরি করা হয়। দশমীর দিন এখানে মাছ রান্না হয়।

আরও পড়ুন – জমজমাট প্রাক শারদীয়া তাঁতের হাট

Related articles

জনজাতীয় গৌরব দিবস: বীরসা মুন্ডার জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও আদিবাসী ঐতিহ্য উদযাপন

সি পি রাধাকৃষ্ণণ, ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি আজ আদিবাসী আন্দোলনের অন্যতম নেতা বীরসা মুন্ডার (Birsa Munda) জন্মদিবস। এই দিনটিকে জনজাতীয় গৌরব...

রবীন্দ্র সরোবরের ছয় ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি: সম্পূর্ণ আইনি পথে কর্পোরেশন

প্রায় পাঁচ দশক পর রাবীন্দ্র সরোবর চত্বরে অবস্থিত ছ’টি ক্লাবের সঙ্গে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিক ভাড়ার চুক্তি করল কলকাতা...

বিহারে কমিশনের কারচুপি, তোপ অখিলেশের: ঘুরিয়ে কংগ্রেসকে কটাক্ষ ওমরের

বিহারে এসআইআর প্রয়োগ করে ভোটারদের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কংগ্রেস-আরজেডির (RJD) মহাজোটের এটাই ছিল বিহার নির্বাচনের মূল...

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী কে: ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্ট JD(U)-এর!

বিহার বিধানসভা নির্বাচনের ২৪৩ টি আসনের মধ্যে বিজেপি ৮৯ আসনে জয়ী। নীতীশ কুমারের জেডিইউ জিতেছে ৮৫ টি আসন।...
Exit mobile version