গ্রেফতার হলে রাজীব কুমারের ঠিকানা হবে ভুবনেশ্বর? কৌশলি চাল CBI-এর

ফেরার থাকা গোয়েন্দাপ্রধান রাজীব কুমারের আগাম জামিনের আর্জির শুনানি কোন কোর্টে হবে, সেই জট এখনও খোলেনি। বারাসতে MP-MLAদের বিশেষ আদালত এই মামলা পাঠিয়েছে জেলা জজের আদালতে। জেলা জজের আদালত দীর্ঘ শুনানির শেষে জানিয়েছে, এই আবেদন করতে হবে আলিপুর কোর্টে। আলিপুর কোর্ট কী বলবে, জানা নেই। বলতে পারে, নিজেদের ইচ্ছায় নয়, হাইকোর্টের নির্দেশে সারদা-মামলার নথি পাঠানো হয়েছে বারাসতে MP-MLAদের বিশেষ আদালতে। এবার সেই বিশেষ আদালতকে হাইকোর্ট ফের নির্দেশ না দিলে ওই আদালত নথি আলিপুরে কীভাবে পাঠাবে এবং আলিপুর-ই বা সেসব নথি কোন আইনে গ্রহন করবে ? ফলে, যতটা সহজ ভাবা হচ্ছে, বিষয়টি অত সহজ নাও হতে পারে। কারন সমস্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ওদিকে আরও এক ভয়ঙ্কর সমস্যা তৈরি হয়ে বসে আছে। এই মুহূর্তে রাজীব-মামলার শুনানির কোনও কোর্ট নেই। ধরা যাক, এই অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে CBI সফল হলো ফেরার রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করতে। এরপরই উঠবে কোটি টাকার প্রশ্ন, CBI পরবর্তী 24 ঘন্টার মধ্যে কোন কোর্টে রাজীব কুমারকে পেশ করবে ? কোন কোর্ট রাজীবের জামিনের আর্জি শুনবে? কোন কোর্টই বা CBI-এর জামিনের বিরোধিতার সওয়াল শুনবে ? কারন, বারাসতের বিশেষ আদালতের বিচারক মঙ্গলবারই জানিয়ে দিয়েছে, কাউকে জামিন দেওয়ার বা হাজতে পাঠানোর আইনি অধিকার বিশেষ আদালতকে দেওয়া হয়নি। জেলা বিচারকও মঙ্গলবারই জানিয়েছেন, আগাম জামিন বা জামিনের আর্জি শুনতে পারার অধিকার তাঁর নেই। এসব শুনতে পারে আলিপুর কোর্ট। ওদিকে আলিপুর কোর্ট এখনও হাইকোর্টের নির্দেশ পায়নি।
এই পরিস্থিতিতে রাজীব কুমার ধরা পড়লে CBI তাঁকে ‘অ্যারেস্ট’ দেখাতে বাধ্য। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কোর্টে হাজির করাতেও বাধ্য।

তাহলে CBI কী করবে ? রাজীব কুমারকে পেলেও হাত গুটিয়ে বসে থাকবে ?
সবার অলক্ষ্যে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েই CBI সেই কাজ সেরে ফেলেছে। মঙ্গলবার বারাসতের জেলা বিচারকের এজলাশে রাজীব কুমারের আগাম জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে CBI-এর আইনজীবীর সওয়ালেই তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। যারা CBI-এর সওয়াল শুনেছেন, তারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, CBI-এর সওয়ালের অনেকখানি জুড়েই ছিলো রোজ ভ্যালি প্রসঙ্গ। রোজ ভ্যালির তদন্তেও রাজীব কীভাবে বাধাসৃষ্টি করেছেন, তথ্য লোপাট করেছেন, তদন্তে সহযোগিতা করেননি, CBI পরিপাটি করে আদালতে ‘অন রেকর্ড’ সে সব বলেছে। মূল মামলা ছিলো সারদা’র RC-4 সংক্রান্ত। সেই মামলাতেই কৌশলে রোজ ভ্যালিতেও যে রাজীব কুমার একাধিক কুকীর্তি করেছেন, সে সব কথা নথিভুক্ত করতে কেন CBI গেলো ?
আসলে CBI ঘর গুছিয়ে ফেলেছে। আদালতের জট কাটার আগেই যদি রাজীব হাতে আসে, সেক্ষেত্রে এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে, রাজীব কুমারের রোজ ভ্যালি-কাণ্ডের সঙ্গে যোগ আছে দেখিয়ে পত্রপাঠ তাঁকে ভুবনেশ্বরে পাঠানো হবে। 24 ঘন্টার মধ্যেই তাঁকে তোলা হবে ভুবনেশ্বরের আদালতে। রোজ ভ্যালি মামলা চলছে ভুবনেশ্বর কোর্টৃর অধীনে। রোজ ভ্যালি কাণ্ডে কাউকে গ্রেফতার করা হলে, তাঁকে ভুবনেশ্বর-CBI হেফাজতেই রাখা হচ্ছে। অতীতে একাধিক জনের ক্ষেত্রে এই ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া CBI রাজীব কুমারকে কলকাতা বা রাজ্যের কোথাও রাখতেও রাজি নয়। সে কারনেই চরম বিচক্ষণতায় সলতে পাকানোর কাজ CBI শেষ করেছে সারদা মামলায় রোজ ভ্যালির প্রসঙ্গ সংযুক্ত করে।

ফলে, রাজীব কুমার যদি এই আদালত-জট খোলার আগেই গ্রেফতার হয়ে যান, তাহলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, রাজ্যের ADG-CID রাজীব কুমারের পরবর্তী ঠিকানা হবে ভুবনেশ্বর।

Previous articleবারাসাত বিশেষ আদালতে সারদার কোনো সিবিআই মামলা থাকছে না
Next articleNRC বোঝাতে পয়লা অক্টোবর শহরে আসছেন শাহ