Thursday, August 28, 2025

পাটুলির ছোট্ট ফ্ল্যাটটা থেকে চোখ যায় দূরে। অনেক অনেক দূরে। চোখ যায় শহরের রাজপথে। বিকেল-সন্ধের রংবদলের আকাশে।

মেঘের হাসি-কান্না দেখে ফেলেন তিনি। বন্ধ করেন চোখ। দেখে ফেলেন কত শত যন্ত্রণার ছবি। শুনে ফেলেন কচিকাঁচার আর্তনাদ। চোখ খোলেন। উপলব্ধি হাতছানি দেয়। বোঝায়, নির্দয় বাস্তবের অট্টহাসি ফ্যাকাসে করে এগিয়ে আসছে জেদ। সংকল্প। পাশে থাকার বাসনা।

প্রিয়াঙ্কা সেনগুপ্ত বাগচী এই শহরের ভিড়েই লুকিয়ে থাকেন। ‘ফোকাস’ চান না। প্রচার চান না। কীসের অহঙ্কার! কেনই বা অহঙ্কার থাকবে ওঁর! মাটিতে পা রেখে চলায় যে কত উল্লাস তা কতজনই বা বোঝেন! বোঝেন প্রিয়াঙ্কা। তাই তো ত্রাতা-পরিত্রাতা হয়ে একঝাঁক কচিকাঁচার নরম আঙুল ছুঁয়েও তৃপ্তিটুকুই খুঁজে পান তিনি। কোনও গর্ব-গরিমার প্রশ্রয়ে বেঁচে না থেকে ছুটে যান একরত্তি অনাথ শিশু-কিশোরীর মনের মধ্যিখানে। বলে আসেন, আসব আবার ভালোবাসার ঝাঁপি নিয়ে।

না, প্রিয়াঙ্কা স্বপ্ন দেখেন না গাড়ি-বাড়ির। দামী শাড়ির। হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা যে মেয়েটি। স্বপ্ন দেখানোতেই যে বড় আনন্দ ওঁর। প্রিয়াঙ্কা পাটুলি থেকে পাটায়া যেতে চান না। বরং শহরতলির সোদপুরে পড়ে থাকে ওঁর মন। ওখানে ‘গোবিন্দ চন্দ্র হোম’-এর দেওয়ালের প্রতিটা কোণে যে প্রতিধ্বনিত হয় “দিদি, ও দিদি” ডাক। শরতের শুভ্র-শান্ত চারপাশে যখন আগমনীর সুর বেজে ওঠে, তরুণী প্রিয়াঙ্কা দুগ্গা মায়ের পাঠানো দূত হয়েই যে ওই হোমের ১৪৬টি বাচ্চার মুখে হাসি ফোটানোয় ব্রতী হতে চান। বোকা বাক্সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রেডিও যখন সুর ধরে – “আশ্বিনের শারদপ্রাতে……”, প্রিয়াঙ্কার শুরু হয় শেষ তুলির টান। পরদিনই যে সাতরঙা ভালোবাসা নিয়ে গন্তব্য সোদপুর।

বিত্তশালী ‘কেউকেটা’ নন প্রিয়াঙ্কা। স্বামী সব্যসাচী ক্রীড়া সাংবাদিক। আর বেসরকারি এক সংস্থায় কর্মরত প্রিয়াঙ্কা। খুব সাধারণ মেয়েটি সারা বছর ধরে এ দুয়ার-ও দুয়ার থেকে জোগাড় করেন সাহায্য। এবারও ‘গোবিন্দ চন্দ্র হোম’-এর ১৪৬টি অনাথ মেয়েকে খুশির আলোয় সাজাবেন প্রিয়াঙ্কা। মহালয়ার পরদিন, ২৯ সেপ্টেম্বর। পুজোর জন্য জামাকাপড়, গল্পের বই, রং-পেন্সিল, আঁকার বই অনাথ মেয়েগুলির হাতে তুলে দেবেন প্রিয়াঙ্কা। ওদের অম্লান হাসি থেকে একচিলতে খুশির রোদ ঝরে পড়ুক দিক-দিগন্তে। পুজোয় এর থেকে বড় সেলিব্রেশন কিছু নেই প্রিয়াঙ্কার।

সাধে কি সবাইকে বারে বারে সাধেন প্রিয়াঙ্কা একটু পাশে থাকার মিনতি নিয়ে! সাধে কি বলতে চান, চলো পাল্টাই!

Related articles

সাত লুকের ‘বহুরূপ’ সোহমের, চ্যালেঞ্জ নিয়ে চমকে দিলেন অভিনেতা

যা কখনও হয়নি তা এখন হবে, এবার হবে। সেলিব্রেটিদের রিল - রিয়েলের আলাদা রূপ আর লুক নিয়ে কম...

উন্মুক্ত শৌচমুক্ত ৯৪ পুরসভা, স্বচ্ছতার শংসাপত্র বাংলাকে

শহরাঞ্চলে আর খোলা শৌচের দৃশ্য নেই। পুরসভাগুলির উদ্যোগ এবং পুর দফতরের তদারকিতে উন্মুক্ত শৌচমুক্ত হয়েছে কলকাতা সহ রাজ্যের...

ফাঁকা কেন্দ্রগুলিতে দ্রুত ইআরও–এইআরও নিয়োগের নির্দেশ কমিশনের 

ফাঁকা পড়ে থাকা একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে দ্রুত ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন আধিকারিক (ইআরও) এবং অ্যাসিসটেন্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন আধিকারিক (এইআরও) নিয়োগের...

নথিভুক্ত অথচ নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলিকে শুনানিতে তলব করল কমিশন 

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ফের সক্রিয় হল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর। নথিভুক্ত হলেও কার্যত নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলিকে শুনানিতে...
Exit mobile version