Saturday, December 6, 2025

রহস্য-জ্বরে কম্পমান কলকাতা, বিভ্রান্ত চিকিৎসকরাও

Date:

Share post:

কলকাতার ‘তাপমাত্রা’ বাড়ছে। শহর তথা রাজ্যের প্রায় ঘরে ঘরে জ্বরের দাপট। পুরোপুরি লাগামছাড়া। ডেঙ্গি তো আছেই, সঙ্গে মারাত্মক গলা ব্যথা বা পেটের সমস্যার সঙ্গে মাত্রাছাড়া তাপমাত্রা নিয়ে প্রবল ভাবে জাঁকিয়ে বসেছে নানা ধরনের জ্বর।

ডেঙ্গির ভরা মরসুম চলছে। ফলে যে কোনও জ্বর হলেই সাধারণ মানুষ ঘোর আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। ডাক্তাররাও বিভ্রান্ত।

এই ‘মহামারি’ জ্বরে কাহিল শুধু রোগীরাই নয়, বেহাল অবস্থা ডাক্তারবাবুদেরও। খামখেয়ালি প্রকৃতি আর জীবাণুর ভোলবদলের কারনে সাধারণ জ্বর চিহ্নিত করতে জেরবার হচ্ছেন ডাক্তাররা। কোনটা সাধারন ফ্লু আর কোনটা টাইফয়েড, কোন জ্বরের পিছনে আছে ডেঙ্গির ভাইরাস আর কোন জ্বর ঠেলে দেবে হেপাটাইটিসের দিকে প্রাথমিকভাবে তা চিহ্নিত করতে ঘামছেন অভিজ্ঞ চিকিৎসকরাও৷ শহরের একাধিক ডাক্তারবাবুর বক্তব্য, “এ বছর বিচিত্র ধরনের বর্ষার কারণে এমন বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মাঝেমধ্যেই ভুল করে ফেলছে ক্লিনিক্যাল আই৷ ওদিকে ঠিক সময়ে রোগনির্ণয় না হলে এই জ্বরের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন শিশু ও বয়স্করা৷” এই বিচিত্র জ্বরের কারণ খুঁজতে কেন বিভ্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসক মহল? বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কথায়, ‘যে কোনও ঋতুবদলের বা সিজন চেঞ্জের সময়ে জ্বরের প্রকোপ বাড়ে। এক-এক মরসুমে এক-এক রকম জ্বরের দাপট দেখা যায়। কিন্তু এ বছরের জ্বরের ধরন এমনই যে পরিচিত জ্বরও চেনা যাচ্ছেনা নানা উপসর্গের কারনে। বিভিন্ন জ্বরের লক্ষণ-উপসর্গের মধ্যে যে ফারাক থাকে, এবার সেই পার্থক্য অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে না। সমস্যা হচ্ছে সেখানেই। ডাক্তারির দীর্ঘ অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলছে না এ বছরের জ্বরের চরিত্র৷”

চিকিৎসকদের বক্তব্য, “অন্য সময় রোগীপিছু পাঁচ মিনিটেই রোগ ধরা যায়। এখন প্রতি রোগীর জন্য কমপক্ষে 30 মিনিট ব্যয় করতে হচ্ছে। তাতেও সবটা বোঝা যাচ্ছে না।” এই ‘অচেনা জ্বর’ সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করছে শিশুদেরই৷ এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বলেছেন, “এখন বহু শিশু দেখছি যাদের হয়েছে ফ্লু, অথচ উপসর্গের ধরন একেবারে এন্টেরিক ফিভারের মতো৷ প্রচুর শিশু আসছে মারাত্মক গলা ব্যথা নিয়ে। কোনটা সাধারণ গলা ব্যথা আর কোনটা হ্যান্ড-ফুট-মাউথের জন্য, সেটাও চট করে বোঝা যাচ্ছে না।”
চিকিৎসকদের বক্তব্য, ‘অনেক সময়েই সাধারন ফ্লুয়ের তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না প্যারাসিটামল। ফলে স্রেফ ক্লিনিক্যাল আই-এ ভরসা রাখা যাচ্ছে না। রক্তপরীক্ষা না-করার ঝুঁকি নেওয়াই যাচ্ছে না৷ কারণ, অনেকক্ষেত্রে হাতে-পায়ে ঘামাচির মতো অ্যালার্জিও দেখা যাচ্ছে। তার আগেই শুরু হয়ে যাচ্ছে গলা ব্যথা।”

বিভ্রান্তি বাড়ছে, অনেক রোগীরই প্রস্রাব কিংবা রক্ত ল্যাব-কালচারে পাঠিয়েও আলাদা কিছু মিলছে না।” বয়স্ক রোগীদের পরামর্শ দিয়ে ডাক্তারবাবুরা বলেছেন, “বয়সকালে সব সময়েই জলশূন্যতার ঝুঁকি বেশি। তাই জ্বর এলে ORS খাওয়া দরকার। পারলে ভ্যাকসিন নিয়ে রাখতে পারলে, ভালো। তাতে সংক্রমণ অনেকটাই ঠেকানো সম্ভব।

spot_img

Related articles

কলকাতা-লন্ডন বিমান ভাড়া কলকাতা-মুম্বইয়ের থেকে কম! হয়রানিতেও জুটল না বিশেষ ট্রেন

লক্ষ লক্ষ দেশবাসী গত ৭২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দেশের নানা প্রান্তে বিপর্যস্ত। কারো বিয়ে, কারো পরীক্ষা আটকে...

বাংলাই দেখায় পথ: BLO মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্তে বাধ্য হল কমিশন

বাংলায় মৃত্যু চার বিএলও-র। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্তত ১৫ জন। গোটা দেশে ডবল ইঞ্জিন রাজ্যগুলিতে বিএলও...

চিহ্নিত ‘অযোগ্য’দের তালিকা, আদালতের নির্দেশে প্রকাশ এসএসসি-র

কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে ফের এক তালিকা প্রকাশ এসএসসি-র। ২০১৬ এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এসএলএসটি চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে ‘অযোগ্য’ চিহ্নিতদের...

কাজ করার সময়ই অসুস্থ BLO: হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা আরও বাড়ল

এসআইআর-এর সময় সীমা বাড়ানো হোক। এই দাবিতে রাজ্যের সিইও দফতরের সামনে লাগাতার আন্দোলনে বিএলও অধিকার রক্ষা মঞ্চ। যেভাবে...