গোটা দেশেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জাগদীপ ধনকারের জন্য জেড ক্যাটিগরির সিআরপিএফ নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের ডিজি বীরেন্দ্রকেও জানানো হয়েছে। নবান্নের মাধ্যমে তা জেনেছে কলকাতা পুলিশও। রাজভবনের তরফে অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে এনিয়ে কিছু জানানো হয়নি। আর এখানেই যত বিপত্তি।

শুক্রবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্ট মিটিং-এ গিয়ে এই প্রসঙ্গ আরও উসকে দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। তিনি সরাসরি সিনিয়র তৃণমূল নেতা তথা মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য নিয়েও মুখ খুলেছেন। রাজ্যপালের অভিযোগ, তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে না জেনেই মন্তব্য করেছেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “আমি আমার লক্ষ্মণ রেখা অতিক্রম করিনি। কিছু না জেনেই মন্তব্য করেছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। একজন সিনিয়র মন্ত্রীর থেকে এরকম ব্যবহার আশা করিনি। মন্ত্রিত্বে থাকলে জানা উচিত কতটুকু বলতে হবে আর কতটুকু বলা যাবে না।”
প্রসঙ্গত, গতকাল বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এদিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে সেই মন্তব্যেরই পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানান রাজ্যপাল।

আরও পড়ুন – রাজ্যপাল আচার্য নয়, RSS প্রতিনিধির মতো আচরণ করছেন: যাদবপুরে বিস্ফোরক SFI

উল্লেখ্য, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে স্বাধীনতার পর কোনও রাজ্যের রাজ্যপালের নিরাপত্তার জন্য এভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নজির নেই। বাংলার পূর্বতন কোনও রাজ্যপালের ক্ষেত্রেই এমন বন্দোবস্ত করেনি কেন্দ্রের সরকার। স্বাভাবিকভাবে দিল্লির এই পদক্ষেপে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এব্যাপারে রাজনৈতিক চাপান-উতর শুরু হয়েছে যথারীতি। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপকে কটাক্ষ করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা বর্ষীয়ান তৃণমূল নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “খুব দুর্ভাগ্যজনক সিদ্ধান্ত। আমার ৫০ বছরের সংসদীয় রাজনীতিতে এমন আগে কখনও দেখিনি। রাজ্য সরকার তো রাজ্যপালের। রাজ্যপালও দাবি করেন, তিনি এখন এই রাজ্যেরই মানুষ। তাহলে রাজ্যের সেরা নিরাপত্তা কর্মীদের তিনি নিজের জন্য চাইতেই পারতেন। কিন্তু তা না করে কেন্দ্রের কাছে এই দরবার করার পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে কি না, তা এখনই বলতে পারব না।”

শুধু সুব্রত মুখোপাধ্যায়-এর এই মন্তব্যই নয়, রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর ব্যথিত হয়েছেন আরও অনেক বিষয় নিয়ে। এদিন তিনি জানালেন, রাজ্যের মন্ত্রীরা তাঁর সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছেন তা তিনি মেনে নিতে পারছেন না। রাজ্যের মন্ত্রীদের ব্যবহার নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তিনি। এদিন রাজ্যপাল বলেন, “কেউ রাজ্যপালকে ট্যুরিস্ট বলছে, কেউ আবার শিলিগুড়ি যাত্রাকে গিমিক বলছেন।”

আরও পড়ুন – বিতর্ক ও ভোটাভুটির পর যাদবপুরের ডিলিট-ডিএসসি তালিকা মেনে নিলেন রাজ্যপাল

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট রুমে দাঁড়িয়েই এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে রাজ্যপালের মন্তব্য, ” মুখ্যমন্ত্রীর উচিৎ তার মন্ত্রীসভার সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করা। পাশাপাশি তাঁরা কী মন্তব্য করছে সে বিষয়টিও তার দেখা দরকার।”

তবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে রাজনৈতিক বিষয়ে রাজ্যপালের এমন বক্তব্যকে সমর্থন করছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক জানান, রাজ্যপাল এখানে আচার্য হিসেবে এসেছেন। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রসঙ্গ নিয়েই তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। বাকি বিষয়গুলি তিনি এখানে না বললেই ভালো করতেন।

সব মিলিয়ে এদিন রাজ্যপালের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রার পর রাজ্য ও রাজ্যপাল-এর মধ্যে সংঘাত যেন বাড়তি মাত্রা পেল।

আরও পড়ুন – রাজ্য পুলিশের নিরাপত্তাতেই যাদবপুরে রাজ্যপাল
