বিজয়ভানের নামে একটা মোমবাতিও জ্বলল না? কুণাল ঘোষের কলম

কুণাল ঘোষ

বিধিসম্মত সতর্কীকরণ: আমি একজন গর্বিত বাঙালি। কিন্তু আজকের দুনিয়ায় শুধু বাঙালি বাঙালি করতে গিয়ে বাস্তব অস্বীকার করতে পারব না। ভুল বুঝবেন না।

পদ্মানদীতে মাছ ধরতে গিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনির হাতে আটক বাংলার তিন মৎস্যজীবী। দুজনকে ছাড়লেও বন্দি রাখা হল প্রণব মন্ডলকে। খবর পেয়ে ছুটে গের আমাদের বিএসএফ। হঠাৎ ঘিরে ধরে গুলি চালালো বাংলাদেশি বাহিনী। গুলিতে নিহত আমাদের বিজয়ভান সিং। আরেক জওয়ান গুলিবিদ্ধ। পরে দুপক্ষের আলোচনায় মিটল। বলা হল ভুল বোঝাবুঝিতে গুলি চলেছে।

ভুল বোঝাবুঝি? ব্যস? খাতা বন্ধ?

নীরবে উত্তরপ্রদেশের গ্রামে ফিরে গেল বিজয়ভানের দেহ। বয়স পঞ্চাশ। হেড কনেস্টবল। পরিবার কাছে পেল এক গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ।

কী করছিলেন বিজয়ভান? ডিউটি। সীমান্তে। হঠাৎ খবর পেলেন বাংলার এক গরিব মৎস্যজীবীকে বাংলাদেশি বাহিনি আটক করেছে। সঙ্গে সঙ্গে ছাড়াতে গেছিলেন স্পিড বোট নিয়ে। ফিরলেন মৃতদেহ হয়ে।

বাংলার বাঙালি হতদরিদ্র জেলে প্রণব মন্ডলকে ছাড়াতে গিয়ে নিজে প্রাণ দিলেন উত্তরপ্রদেশের বিজয়ভান।

কোথায় মিডিয়া? কোথায় নেতারা? কোথায় বুদ্ধিজীবীরা? কোথায় ক্ষতিপূরণ ঘোষণার ঢল? কোথায় মোমবাতি মিছিল? অধিকাংশের ভাবসাব দেখে মনে হল, রুটিন ঘটনা, এরকমই তো হওয়ার কথা !!

সম্প্রতি বাঙালিয়ানা নিয়ে অতিসক্রিয় অনেকে। হিন্দুত্বের ঠিকা যেমন স্বঘোষিত কেউ কেউ নিয়েছেন, তেমনই বাঙালিআনার ঠিকাও হঠাৎ হঠাৎ কেউ কেউ নিয়ে ফেলেন। তাঁরা সব কোথায়?

বাঙালি প্রণবকে বাঁচাতে নিহত হলেন অবাঙালি বিজয়ভান; কই এবিষয়ে নীরব কেন?

বিজয়ভান সিংয়ের মৃত্যুর পর বাংলার নীরবতা লজ্জিত করছে।
বাঙালি মানে শুধু বাংলা নিয়ে আঁতলেমি নয়। বাঙালি মানে এক অনুকরণীয় সাহস, মেধা, শক্তি, বৈচিত্র, জেদ, উদারতা নিয়ে ভারতবর্ষের বহু বন্ধ দরজাকে খোলার চিরন্তন সংস্কৃতি। দরজাজানলা বন্ধ করে বাঙালিয়ানার উন্নতি হয় না। যা করলে হয়, তা আমরা করি না। উল্টে বাঙালি-অবাঙালি বিদ্বেষ ছড়িয়ে চারপাশটা ঘাঁটতে বসেছি!!

কোথায় বাঙালির গুরুঠাকুররা, বলুন, প্রণবকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিতে ঝাঁঝরা বিজয়ভানের জন্য কটা মোমবাতি আপনারা জ্বেলেছেন?

বাংলা থেকে একটু সম্মান, চর্চা, শ্রদ্ধা কি বিজয়ভানের প্রাপ্য ছিল না? বাঙালিয়ানার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে গর্ব নিশ্চয়ই হবে, কিন্তু তার জন্য মনটাকেও তো বড় রাখা দরকার।