বাংলার আদি এবং প্রথম সোমড়াগ্রামের জগদ্ধাত্রী পুজো

বাংলার আদি এবং প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো বলে পরিচিত সোমড়াগ্রামের জগদ্ধাত্রী পুজো। কালের সময়ে এই জগদ্ধাত্রী পুজো পারিবারিক উৎসব থেকে গ্রাম্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির পুজো তে পরিণত হয়েছে। দুই সম্প্রদায়ের মানুষজন একত্রে মিলিত হয় এই পুজোর নবমীর দিনে। হাওড়া-কাটোয়া শাখার সোমড়াবাজার স্টেশন থেকে পাঁচ মিনিটের পথ পেরিয়ে এই প্রাচীন জগদ্ধাত্রী মন্দির। স্বপ্নাদেশে অষ্টধাতুর তৈরি এই মূর্তি ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দেওয়ান রাম শঙ্কর রায় 1172 সালে। দেবী এখানে শ্রী শ্রী মহাবিদ্যা নামে পূজিত হন।

মা জগদ্ধাত্রীর বাম পাশে রয়েছে মহাদেব শিব। এই শিবের বৈশিষ্ট্য হল মুখে রয়েছে গোঁফ ও দারি। শিবের কোলে রয়েছে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্ত্তিক ও গণেশ। ইতিহাস বলে তৎকালীন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মহাদেব শিবের প্রতিকৃতির মাধ্যমে। হিন্দু মুসলিম স্হাপত্যের নিদর্শন রয়েছে মন্দির সহ বিগ্রহের মধ্যে। মা জগদ্ধাত্রীর বাহন ‘সিংহ’ এখানে নরসিংহ হিসাবে মায়ের পায়ের নিচে প্রতিষ্ঠিত। প্রতিদিন নিত্য পুজো হলেও জগদ্ধাত্রী পুজোর নবমীর দিন বিশেষ পুজো হয়। সপ্তমী, অষ্টমী পুজো একই দিনে শেষ করার পর হয় নবমী পুজোর আয়োজন। কথিত আছে পাল যুগে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার দেওয়ান ছিলেন রাম শঙ্কর রায়। দক্ষিণ ভারতের স্থাপত্য শৈলী রয়েছে মন্দিরের গঠন আকৃতিতে। মন্দির টি নবরত্ন অর্থাৎ নয় কোনা বিশিষ্ট। এই ধরনের স্থাপত্য শৈলী সাধারণও অনান্য মন্দিরের থেকে আলাদা। আগে মন্দিরের গায়ে দক্ষিণী স্থাপত্য শিল্পের কারুকার্য করা ছিল। অবহেলার কারণে তা বিলুপ্ত হয়েছে। তবে পুরাতন রীতি মেনে আজও জগদ্ধাত্রী পুজোর নবমী তিথিতে পুজো হয় মায়ের। বৈদিক মতে পুজো হওয়ার কারণে নবমীর পুজোর দিন হয় না কোনো বলিদান। আগে ন’জন পন্ডিত মিলে হোমকুন্ডে হোমযজ্ঞ করত। বর্তমানে পুজোর দিনে একজন পূজারী হোমকুন্ডে যজ্ঞ করেন। নবমী পুজোর দিন, মায়ের ভোগ হিসাবে দেওয়া হয় পাঁচ রকমের ভাজা, খিচুড়ি, লুচি, পোলাও, ছানার তরকারি ও রকমারি মিষ্টান্ন। পাশাপাশি মহাদেব শিবের ভোগ হিসাবে সাদাভাত, ঘি, আলুসেদ্ধ ও সৌন্দক লবণ দেওয়া হয়। বর্তমানে বংশধরেরা দেশ ও বিদেশে থাকা সত্বেও পুজোর নবমীর দিন সকলে এসে গ্রামবাসীদের সাথে মিলিত হয়ে পুজো দেন ও একসাথে খাওয়া দাওয়া করে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন। বর্তমানে সোমড়াবাজারের এই আদি জগদ্ধাত্রী মন্দির সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির দলিল হিসাবে বাংলায় বিরাজ করছে ইতিহাসের খাতায়।

Previous articleছাত্রদের নবীন বরণ-সোশ্যাল ফাংশন করতে দিন, অনুরোধ মমতার
Next articleনিহত ভিলেজ পুলিশের বাবাকে ফোন মুখ্যমন্ত্রীর