প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার শক্তিই বারবার দেখিয়েছে প্রেসিডেন্সি, এবার তাই এসএফআইয়ের জয়

ভরা বাম জমানায় প্রেসিডেন্সিতে দাঁত ফোটাতে পারত না এসএফআই। বারবারই তখন জিতত ইন্ডিপেন্ডেন্ট কনসলিডেশন বা আইসি, আর কিছু আসন পেত নকশালপন্থী কিছু সংগঠন। রাজ্যজুড়ে সিংহভাগ কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএফআইয়ের বিজয় নিশান পত্পত্ করে উড়লেও প্রেসিডেন্সিতে এসে গোঁত্তা খেতে হত এসএফআই দাদা-দিদিদের। তাহলে আজ প্রেসিডেন্সিতে এসএফআই সগৌরবে জিতল কী করে? উত্তর একটাই। প্রেসিডেন্সির প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ঐতিহ্যই আজ জিতিয়েছে এসএফআইকে। ক্ষমতাসীন শাসকের শক্তিকে অবজ্ঞা করার স্পর্ধা আজও প্রেসিডেন্সির শক্তি।

ঠিক এই কারণেই রাজ্যে বাম শাসনের অবক্ষয়ের সময় যে প্রেসিডেন্সি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল তৎকালীন বৃহত্তম বাম ছাত্র সংগঠন থেকে, যে প্রেসিডেন্সি পরিবর্তনের আন্দোলনে বিশ্বাস রেখেছিল গণতন্ত্রের প্রতি গভীর আস্থায়, ঠিক সেই একই কারণে বর্তমান শাসকের আধিপত্যবাদ আর গণতান্ত্রিক পরিসরকে সংকুচিত করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে আজকের প্রেসিডেন্সি। তাই সারা রাজ্যে দাপিয়ে বেড়ানো তৃণমূল ছাত্র পরিষদ প্রেসিডেন্সির পড়ুয়াদের কাছে পাত্তা পায়নি। একই হাল বিজেপির ছাত্র সংগঠনেরও। রাজ্য ও কেন্দ্রের দুই সরকারের নীতি, কর্মকান্ডেই প্রবল অনাস্থা দেখিয়েছে তথাকথিত উজ্জ্বল, সমাজ সচেতন পড়ুয়াদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ। আর সেই সুযোগে ভিন্ন স্বরের জোরালো যুক্তিতে জিতেছে বামেরা।

রাজ্য বা কেন্দ্র সর্বত্র যখন উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সংকুচিত হচ্ছে, প্রতিবাদী কন্ঠকে চাপা দিতে নানাভাবে হেনস্থার ছলচাতুরি চলছে, কখনও ধর্মের ভিত্তিতে রাজনীতি ও পাল্টা ধর্মীয় তোষণ চলছে, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করা হচ্ছে, নাগরিকপঞ্জির নামে গরীব মানুষকে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা ও ভয়ের পরিবেশে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে তখন বামপন্থী ছাত্র সংগঠনকে জিতিয়ে আসলে এই ইস্যুগুলোরই তীব্র বিরোধিতা করল প্রেসিডেন্সি। যথারীতি স্রোতের বিরুদ্ধে হেঁটে। তাই এই কলেজে এসএফআইয়ের জয় নিছকই ক্লাসরুম, কমনরুম, হস্টেল, লাইব্রেরি উন্নতির দাবির জয় নয়, এর বৃহত্তর রাজনৈতিক তাৎপর্যও আছে।

আরও পড়ুন-পার্শ্ব শিক্ষিকদের পাশে দিলীপ

 

Previous articleপার্শ্ব শিক্ষকদের পাশে দিলীপ
Next articleবিধান ভবনের সামনে রাহুলের ছবিতে কালি, কাঠগড়ায় বিজেপি