বিজেপি সত্যিই দ্য পার্টি উইথ আ ডিফারেন্স, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

মোদি-শাহ থেকে পাড়ার গেরুয়া-ভোম্বল, বিজেপি নিয়ে কথা

বলতে শুরু করলে গম্ভীর হয়ে বোঝাবেন, ‘বিজেপি, দ্য পার্টি উইথ আ ডিফারেন্স।

ডিফারেন্ট-ই বটে। ক্ষমতায় থাকার জন্য বিজেপি মহারাষ্ট্রে যে নজির গড়েছে, তা দেখে গোটা দেশ তাজ্জব। আগের টার্মে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীশ যে অজিত পাওয়ারকে জেলে পুরতে চেয়েছিলেন, তাঁকেই আজ ডেকে এনে ফড়নবীশ নিজের ডেপুটি বানালেন। 70 হাজার কোটি টাকার দুর্নীতিতে অভিযুক্ত অজিতকে সঙ্গী করেই সরকার গড়লেন মহামহিম দেবেন্দ্র ফড়নবীশ । মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত” অজিত পাওয়ারের হাতে হাত মেলাতে বিজেপি একদমই সময় নেয়নি। ব্যতিক্রমী মানসিকতার দল না হলে এ কাজ করা সম্ভব নাকি? বিজেপি এবার ওই ‘দ্য পার্টি উইথ আ ডিফারেন্স’ ট্যাগ’টা একটু বদল করার কথা ভাবতেই পারে।

2018 সাল। এখন থেকে ঠিক এক বছর আগের নভেম্বরে প্রবল চাপে ছিলেন এনসিপি’র এই অজিত পাওয়ার। হাজার হাজার কোটি টাকার সেচ দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তাঁকে প্রায় গ্রেফতার করেই ফেলেছিলো বিজেপি সরকার। মহারাষ্ট্রের তৎকালীন বিজেপি সভাপতি সেদিন বলেছিলেন, বেশি সময় নেওয়া হবে না, যে কোনও মুহূর্তে গ্রেফতার হবেন অজিত পাওয়ার।
2016 সালের সেপ্টেম্বরে, ফড়নবীশ টুইট করেন, “বিজেপি কখনই এনসিপির সাথে জোটে যাবে না। আমরা তাদের একাধিক দুর্নীতি ফাঁস করে দিয়েছি। সেই সময় তো অন্য রাজনৈতিক দলের নেতারা চুপ ছিল।”

আরও আছে। মহারাষ্ট্র সমবায় ব্যাঙ্কে 20 হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগেও এই অজিত পাওয়ারের নাম জড়ায়। শুরু হয় ED-র তদন্ত। 2014 সালে 70 হাজার কোটি টাকার সেচ দুর্নীতিতে নাম জড়ানোর ফলে তৎকালীন উপ-মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে খইস্তফা দিতে বাধ্য হন অজিত পাওয়ার।
বিজেপির বর্তমান ত্রাতা অজিত পাওয়ার সেদিন দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতারের আশঙ্কায় বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের আগে অন্য খেলা খেলতে চাইছে বিজেপি। নোংরা রাজনীতি করে আমাদের ভয় দেখাতে চাইছে’। দুর্নীতিতে জড়িত পাওয়ারের এই মন্তব্যের পর আরও বিস্ফোরক মন্তব্য করে বিজেপি। বলা হয়, ‘মাথায় খাঁড়া ঝুলছে অজিতের, পুলিশ তাঁর বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ছে, তিনি পার পাবেন না কিছুতেই’!

কেটে গিয়েছে এক বছর। এখন সেই অজিত পাওয়ারের সঙ্গে হাত মিলিয়েই মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করেছে “দ্য পার্টি উইথ আ ডিফারেন্স” বিজেপি! চোর না ডাকাত, কার সঙ্গে হনিমুন করছে, তা দেখার অবস্থায় বিজেপি এখন আর নেই। মধু-রাত হলেই হলো। রাজনীতিকরা কত কিছুই না দেখায় মানুষকে। মহারাষ্ট্রের মানুষ ঘুম থেকে উঠেই দেখতে পেলেন তাঁদের রাজ্যে দ্বিতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়ে ফেলেছেন ফড়নবীশ। আরও বিস্মিত হয়ে দেখলেন, তাঁর ডেপুটি হয়েছেন সেই অজিত পাওয়ার, যাকে হাজতে নিতে বহু পরিশ্রম করেছিলেন এই ফড়নবীশ সাহেব।

সকলেই জানেন রাজনীতিতে সব হয়, কিন্তু কেন হলো তা নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চলেছে। অথচ উত্তর মিলছে না। যে কথাটা ঘুরে বেড়াচ্ছে, তা হলো, কেন অজিত পাওয়ার এমন একটা কাজ করলেন? শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত এসবের ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, ”জেলযাত্রার হাত থেকে বাঁচতে বিজেপিকে সমর্থন দিয়েছেন অজিত পাওয়ার।
বিজেপির হাত ধরা ছাড়া তাঁর কাছে আর কোনও উপায় ছিল না”। সঞ্জয় রাউতের কথার অর্থ, ব্ল্যাকমেল করা হয়েছে অজিত পাওয়ারকে। দেশে এই ধরনের ব্ল্যাকমেলের রাজনীতির গায়ে সিলমোহর লাগালেন মোদি-শাহ।

সব শেষে আর একটা তথ্য। 2014 সালের 11 অক্টোবর। মহারাষ্ট্র বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের শেষদিনে ওই রাজ্যের পান্ধারপুরে প্রচারে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, “এনসিপি-র মানে ‘Naturally Corrupt Party’, এই দলকে দূর করে দিন।”

সত্যি, ‘দ্য পার্টি উইথ আ ডিফারেন্স’ বলেই তো বিজেপি আজ এই ‘স্বভাব-দুর্নীতিবাজ’ পার্টিকে ‘মিত্রো’ বানাতে পেরেছে।

Previous articleবিলাসবহুল জাহাজে গঙ্গাসাগর
Next articleপাওয়ার বনাম পাওয়ার: এবার ট্যুইট শারদের