জয়প্রকাশ-নিগ্রহের ঘটনাকে দলের একাংশও মনে করছে ‘রহস্যজনক’

করিমপুরের উপনির্বাচনের দিন ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তথা দলের রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার নিগৃহীত হওয়ার ঘটনার সেভাবে প্রতিবাদই করছেনা বঙ্গ-বিজেপি। ওই ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেফতার করেছিলো পুলিশ। আদালতে পাঁচজনেরই জামিন হয়ে যায়। রুটিন বিবৃতি দেওয়া ছাড়া, এ নিয়ে আর মুখ সেভাবে খুলল না বিজেপি। রাজ্যের বাইরে মেঘালয়ের রাজভবন থেকে ওই রাজ্যের রাজ্যপাল তথাগত রায় টুইট করে, প্রতিবাদ করেছেন।কিন্তু জয়প্রকাশবাবুর উপর হামলার ঘটনায় বঙ্গ- বিজেপির টানা নীরবতা এবং প্রতিবাদে পথে না নামার ঘটনার রহস্য খুঁজছে রাজনৈতিক মহল। দলের একাংশও ঘটনাটি ‘রহস্যজনক’ বলেই মনে করছে।

বিজেপি এখন রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল। সেই দলের এক প্রার্থী, যিনি আবার দলের পদাধিকারীরও, তাঁর ওপর হামলার ঘটনা নিয়ে তো রাজ্য উত্তাল করে দেওয়ার কথা বিজেপির। কিন্তু কোথায় কি ! জয়প্রকাশের ওপর হামলার ঘটনাকে বঙ্গ-বিজেপির একাংশের মনেই কি সন্দেহ সৃষ্টি করেছে ? এই অংশটির মনেই প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ভোটারদের সহানুভূতি আদায়ের লক্ষ্যেই জয়প্রকাশ- হেনস্থার ঘটনা ‘সাজানো’ হয়েছিল ? আর একটি অংশ জোরের সঙ্গেই বলছে, জয়প্রকাশবাবুর উপর হামলা দলেরই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল। সে কারনেই দল নীরব। আরও কিছু প্রশ্ন উঠেছে। সোমবার উপ-নির্বাচন চলাকালীন দলীয় প্রার্থীর উপরে এই হামলার পরেই নির্বাচন কমিশনে অভিযোগে ৯ জনের নাম দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু জয়প্রকাশ নিজে বা তাঁর দলের কেউ পুলিশে অভিযোগই করেননি। পুলিশে না গিয়ে জয়প্রকাশও নির্বাচন কমিশনেই নালিশ জানিয়েছেন।

প্রার্থী আক্রান্ত হওয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ইন্দ্রাশিস ঘোষ কিছু ‘অজ্ঞাতপরিচয়’ দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তার ভিত্তিতেই পুলিশ তদন্ত ও ধরপাকড় করছে। কেন দল বা প্রার্থী সেদিন থানায় অভিযোগ না করেই নির্বাচন কমিশনে ছুটলো, দলের একাংশ তারও কোনও যুক্তি পাচ্ছে না।

জয়প্রকাশ- হামলার ঘটনা নিয়ে ভোটের দিন বাজার গরম করে দেয় বিজেপি। কিন্তু তার পর থেকে বিজেপি একটি শব্দও খরচ করেনি। এমনকী, আদালতেও সক্রিয়ভাবে বিজেপির আইনজীবী সেলের সদস্যদের ওই পাঁচজনের জামিনের বিরোধিতা করতে দেখা যায়নি। তবে এসবের ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। তার সাফাই, ‘‘জয়প্রকাশবাবুর উপর হামলার প্রতিবাদে বিভিন্ন জেলায় বিচ্ছিন্ন ভাবে বিক্ষোভ হয়েছে। আসলে দলে সাংগঠনিক নির্বাচন এবং সংসদে অধিবেশন চলছে। এগুলো মিটলে আরও ভাল করে পথে নামা হবে।” দলের সহ সভাপতি নিজেই ভোটপ্রার্থী, তিনিই ভোট করতে গিয়ে আক্রান্ত। আর তাঁর নিজের দল “সাংগঠনিক নির্বাচন এবং সংসদে অধিবেশন মিটলে আরও ভাল করে পথে নামবে”? ভাবা যায় ? গোটা ঘটনার মধ্যে রহস্য না থাকলে, দলের গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী এই দায় এড়ানো সাফাই দিতে পারেন ? এই প্রশ্নও উঠেছে দলের অভ্যন্তরেই। তাদের বক্তব্য, সাজানো ঘটনা, একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে ছেলেরা। ওভাবে লাথি মেরে ঝোপে ফেলে দেওয়া ঠিক হয়নি।

বঙ্গ-বিজেপির একাধিক নেতা ঘটনার পরে বলেছেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। দলেই প্রশ্ন, বিজেপি যদি হামলাকারীদের চিনেই থাকে, জয়প্রকাশ নিজে বা দল কেন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলেন না? এই প্রশ্নের বিস্ময়কর উত্তর দিয়েছেন জয়প্রকাশ। বলেছেন, “আমি তো একজন সাধারণ কর্মী। গোটা বিষয়টি আমাদের সর্বভারতীয় নেতৃত্ব দেখছেন। পুলিশ তো এখন নির্বাচন কমিশনের অধীন। কমিশন যা করার, করছে।’’

আরও পড়ুন-উদ্ধবের শপথে আমন্ত্রিতদের তালিকায় নাম মুখ্যমন্ত্রীর