Wednesday, December 17, 2025

‘বিজেপি-মুক্ত’ বাংলা গড়ার লক্ষ্যে সফল মমতা, কণাদ দাশগুপ্তর কলম

Date:

Share post:

কণাদ দাশগুপ্ত

‘বিজেপি-মুক্ত বাংলা’ গড়ার লক্ষ্যে এক ধাপ এগিয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

খড়্গপুর সদর, করিমপুর ও কালিয়াগঞ্জ আসনের ফলাফলে রাজ্যের ক্ষমতা বদলের কোনও সম্ভাবনা না থাকলেও এর ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করছে রাজ্য রাজনীতির ভবিষ্যত গতিবিধি। সে কারনেই তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফল ঘিরে ছিলো চরম উত্তেজনা। আর সেই পরীক্ষায় সসন্মানে উত্তীর্ণ হয়েছে তৃণমূল।

ওদিকে, গেরুয়া-বেলুন এভাবে চুপসে যাবে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি বিজেপি। ৪৮ ঘন্টা আগেও বিজেপির তরফে জাতীয় সভাপতি অমিত শাহকে বলা হয়েছিলো, এ রাজ্যে বিজেপি তিন আসনেই জিতবে। শাহকে যিনি এই বার্তা দিয়েছিলেন, রাজনৈতিক মহলে তিনি স্বঘোষিত ‘ভোট-বিশেষজ্ঞ’। সেই বিশেষজ্ঞের ভোট-জ্ঞান নিয়েও প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, গোটা দেশে মোদি-শাহের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে।
একাধিক রাজ্য হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির। মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনের মহা-নাটকে পদ্ম-বাহিনীর যে করুন পরিণতি ঘটেছে, তাতে মোদি-শাহ ভালই ধাক্কা খেয়েছেন। চুরমার হয়েছে অমিত শাহর ‘চাণক্য’ হওয়ার স্বপ্ন বা ইচ্ছা। দ্বিতীয়বার দাপটের সঙ্গে ক্ষমতায় ফেরার পর মোদি- শাহের রাজনৈতিক দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যখন নেহাতই মূর্খামি বলে মনে হচ্ছিলো, সেই সময় পর পর ‘ধাক্কা’-য় সে কাজ আর বোকামি বলে মনে হচ্ছে কই?

তথ্য বলছে, বিধানসভা হিসেব করলে গত ২ বছর ধরে ক্রমশ পায়ের তলার জমি হারাতে শুরু করেছে বিজেপি। যা আপাতত থেমেছে মহারাষ্ট্রে। এই বাজারেও মোদি-শাহকে মাত্র ৮০ ঘণ্টার মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে ‘সন্তুষ্ট’ থাকতে হয়েছে।

এই রাজ্যে লোকসভা ভোটের পর বঙ্গ-বিজেপির শীর্ষতলার লোকজন একুশের পর কে কোন দফতরের মন্ত্রী হবেন প্রায় ঠিক করে ফেলেছিলেন। সদ্য গেরুয়া-পৈতে লাগিয়ে বিজেপি সাজা স্বঘোষিত গেরুয়া বাহিনী তো সোশ্যাল মিডিয়া ভাসিয়ে দিচ্ছিলেন, ‘তৃণমূল শেষ-আমরাই আসছি’ বার্তায়। তিন উপ নির্বাচনের প্রচারের শেষদিনে কোনও এক সিপিএম-ফেরত সদ্য বিজেপি হওয়া অপরিনত একটি পোস্টে দাবি করেছিলেন করিমপুরে ১২,২৪৫ ভোটে গেরুয়া-প্রার্থী জিতছেন। বুঝে দেখুন এদের মূর্খামির লেভেলটা ! এই ধরনের লোকজনের হাতেই এই মুহূর্তে বঙ্গ-বিজেপির রাশ। আদি-বিজেপি এদের আচরণে বীতশ্রদ্ধ হয়ে সুযোগ খুঁজছিলেন নেতাদের জবাব দেওয়ার। দিয়ে দিয়েছেন। লোকসভা নির্বাচনে গেরুয়া ঝড়ের দাপটে উড়ে গিয়েছিল বিরোধীরা। এ রাজ্যেও তার তাপ লেগেছিলো। তৃণমূল কংগ্রেসকে হারতে হয়েছে বেশ কিছু জেতা কেন্দ্রে। বিজেপির লাফালাফি তখন থেকেই শুরু হয়। পাড়ার রামা-শ্যামাও নিজেদের মোদি-শাহ-ভাগবত ভাবতে শুরু করেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় একদল অশিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিতের নেচে বেড়ানো দেখলে মনে হতো, কোন দল এ রাজ্যে ক্ষমতায় থাকবে বা ক্ষমতায় আসবে, তা বিজেপি’ই বোদ্ধারাই নির্ধারন করছে। জনগণের এ ক্ষেত্রে বিন্দুমাত্রও ভূমিকা নেই।

সেই জবাবটাই বিজেপি এই তিন উপনির্বাচনে পেলো। ‘NRC হবেই’ বলে যারা বুক বাজাচ্ছিলো, বাংলার মানুষ তাদের বুঝিয়ে দিলেন, সব কিছু এত সহজ নয়। এবং একইসঙ্গে বুঝিয়ে দিলেন, যাকে-তাকে রাজার পার্ট দেওয়া যায়না। বাঁদরের হাতে খোলা তরবারি তুলে দিলে এর থেকে ভালো আর কি-ই বা হতে পারে ?

আরও পড়ুন-মহারাষ্ট্রে কেন যেতে পারছেন না, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী

 

spot_img

Related articles

ব্যবসায়ী সম্মেলন: ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী 

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগী ও ব্যবসায়ীদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে সরাসরি আলোচনায় বসতে চলেছে রাজ্য। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে,...

অস্ট্রেলিয়ায় ইহুদি উৎসবে হামলা চালানো ‘বাবা’ ভারতীয়! জানালো তেলেঙ্গানা পুলিশ

সিডনির বন্ডি বিচে (Bondi Beach) ইহুদিদের হানুক্কা উৎসবে এলোপাথাড়ি গুলিতে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু। এরপরেই শুরু হয় বন্দুকবাজদের...

যুবভারতীর ঘটনার জন্য দায়ী মেসি! বিশৃঙ্খলা নিয়ে বিস্ফোরক গাভাসকর

গত শনিবার যুবভারতীতে মেসি ইভেন্টে নজিরবিহীন বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনা নিয়ে নানা মুণির নানা মত। এবার বিষয়টি...

সেলিম হলেন ব্রাহ্মণ! ভোটার তালিকায় CPIM সম্পাদকের পরিচয়ে ভুল, কটাক্ষ তৃণমূলের

নির্বাচন কমিশন প্রকাশিত খসড়া ভোটার তালিকায় হাজারো ভুল। সঠিক তালিকা প্রকাশের তাড়াহুড়োয় উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপিয়েই খালাস...