জীবনপথে মায়ের খোঁজে, কুণাল ঘোষের কলম

কুণাল ঘোষ

কলকাতায় এসেছে অ্যাঞ্জেলা। সঙ্গে বান্ধবী ক্লেরা।

অ্যাঞ্জেলা ফ্রান্সের বাসিন্দা। ওখানকার নাগরিক। ফটোগ্রাফার ও শিল্পী। বয়স 42। বাবা মা ফরাসী দম্পতি।
বড় হওয়ার পর থেকেই অ্যাঞ্জেলা দেখেছে সে দৃশ্যত ফরাসীদের মত দেখতে নয়। শুনেছে, তার একটি ভারতীয় যোগ আছে।

বছর দুইতিন আগে তার বাবা মা তাকে জানান সে দত্তকসন্তান। কলকাতা থেকে তাকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল।

দত্তকের নথি থেকে দেখা যায় অ্যাঞ্জেলার জন্ম কলকাতার জে এন রায় হাসপাতালে।

এরপর জে এন রায় হাসপাতালের ফেস বুক পেজে যোগাযোগ করতে থাকে অ্যাঞ্জেলা। প্রথমে ঠিক বুঝেউঠতে না পারলেও তারপর সাড়া দেয় হাসপাতালের অন্যতম কর্ণধার সজল ঘোষ। এবং পুরনো নথি ঘেঁটে 42 বছর আগের নথি বার করে আরেক কর্ণধার শুভ্রাংশু ভক্ত।

দেখা যায় অ্যাঞ্জেলার মায়ের নাম লিলি সিংহ। বাবার নাম লেখা নেই। লেখা আছে মাদার টেরিজার আশ্রমের নাম।

এরপরই মায়ের খোঁজে কলকাতায় আসার সিদ্ধান্ত নেয় অ্যাঞ্জেলা। সঙ্গে তার ফরাসী বান্ধবী ক্লেরা। উৎসাহ দিয়ে সমর্থন করেন অ্যাঞ্জেলার ফরাসী বাবা মা।

কলকাতায় আসে অ্যাঞ্জেলা। উপস্থিত হয় জন্মস্থান জে এন রায় হাসপাতালে। সজলরা পূর্ণ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। যোগাযোগ করা হয় মাদার হাউসে।

মাদার হাউস সূত্রে জানানো হয় অ্যাঞ্জেলার মায়ের ঠিকানা দেওয়া যাবে না। সম্ভবত গোপনীয়তার স্বাভাবিক কারণেই তাঁরা দেন নি ঠিকানা। তখন অনুরোধ করা হয় মায়ের অনুমতি নিক মাদার হাউস। মা দেখা করতে রাজি হলে অ্যাঞ্জেলা যাবে।

এরপর শুরু হয় প্রতীক্ষা।

অবশেষে আসে দুঃসংবাদ, সাতবছর আগে মারা গেছেন মা লিলি সিং।

খোঁজ মিলল আসল মায়ের। কিন্তু দেখা আর হল না।
খোঁজ মিলেছে মামারও। আত্মীয়রা অ্যাঞ্জেলার সঙ্গে দেখা করতে রাজি। সজল বিষয়টার ব্যবস্থা করেছে।

আরও কিছু দুর্ভাগ্যজনক তথ্য মিলেছে।
লিলি সিংহ গর্ভবতী হন বিয়ের আগে। তাঁর উপর প্রচন্ড অত্যাচার করতেন মদ্যপ, মাদকাসক্ত প্রেমিক। বিয়েটা আর হয়ে ওঠে নি। শিশুকন্যাকে দিয়ে দেওয়া হয় মাদার হাউসে। সেই শিশুই পরিত্যক্ত ও অনাথ হিসেবে চিহ্নিত হয়। তারপর এক ফরাসী দম্পতি তাকে দত্তক নিয়ে ফ্রান্সে চলে যান।

অ্যাঞ্জেলার নাম রেখেছিলেন মাদার টেরিজা স্বয়ং।
জানা গেছে মদ্যপ তরুণটি বেশিদিন বাঁচেন নি।
লিলি সিংহের অন্যত্র বিয়ে হয়েছিল। তাঁর অন্য সংসার হয়েছিল।

এবার মামা এবং কয়েকজন আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করে অ্যাঞ্জেলার ফ্রান্সে ফিরে যাওয়ার পালা। রবিবার রাতে তার বিমান।

শুক্রবার সন্ধেতে গল্প হল অ্যাঞ্জেলা আর ক্লেরার সঙ্গে। ভাঙা ইংরেজি আর সদ্য শেখা দুএকটি বাংলা শব্দে স্বচ্ছন্দ নয় অ্যাঞ্জেলা, কিন্তু আবেগে আন্তরিক। আড্ডায় সঙ্গে সজল, শুভ্রাংশু। জে এন রায় হাসপাতালে বসে। দেখলাম, মায়ের সন্ধান পেলেও তাঁকে চিরতরে হারানোর আফশোস অ্যাঞ্জেলার; এত কাছে এসেও দেখা হল না; আর একটু আগে যদি অভিযান শুরু করা যেত!!;
পাশাপাশি তার মুখে তৃপ্তির ছোঁয়া: পরিচয়ের শিকড়ে তো অন্তত পৌঁছনো গেল।

“বাংলায় আমার জন্ম। আমি আবার আসব।” বলছে অ্যাঞ্জেলা।

অ্যাঞ্জেলা, ভালো থেকো। হয়ত আবার কখনও দেখা হবে।

ছবিতে: ক্লেরা, অ্যাঞ্জেলা, আমি, সজল, শুভ্রাংশু।

যাঁরা অ্যাঞ্জেলাকে নিয়ে কথোপকথনের ভিডিও দেখতে চান, তাঁরা আমার বা বিশ্ব বাংলা সংবাদের ফেস বুকে দেখতে পারেন।

Previous articleতোমায় আমায় মিলে
Next articleএক নজরে দেখে নিন হায়দরাবাদের এনকাউন্টারের ঘটনার কিছু ছবি