Monday, May 12, 2025

কেন্দ্র জানেই না বাংলায় অবৈধ অভিবাসী কত, তবুও NRC-হুমকি, কণাদ দাশগুপ্তের কলম

Date:

Share post:

কণাদ দাশগুপ্ত

ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে দেশজুড়ে NRC-র হুমকি, বিজেপি’র কাছে যতটা না দেশভক্তি, তার থেকে অনেক বেশি রাজনৈতিক কৌশল এবং হাতিয়ার ৷ বাংলায় NRC-র মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক প্রক্রিয়া দ্রুত চালু করার হুমকি সমানে দিয়ে চলেছেন কেন্দ্রীয় সরকার, জাতীয় ও রাজ্য বিজেপি’র নেতারা৷ এ রাজ্যেও NRC হবে বলেই জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও৷ এত হুমকি শুনে রাজ্যবাসীর স্বভাবতই ধারনা হচ্ছে, কেন্দ্র বাংলায় NRC তৈরির যাবতীয় হোমওয়ার্ক সেরে ফেলেছেন, এখন অপেক্ষা শুধুই প্রক্রিয়াটি চালু করার৷ আমজনতা তথা সর্বস্তরের মানুষ মোটামুটি নিশ্চিত, কেন্দ্র জানে বাংলায় অবৈধ অভিবাসী বা Immigrant-দের আনুমানিক সংখ্যা কত? এবং সেই তথ্য হাতে নিয়েই কেন্দ্র বোঝাচ্ছে, এই ‘বিপুল’ সংখ্যক অবৈধ অভিবাসীদের জন্যই বাংলার উন্নয়ন হচ্ছে না৷ কেন্দ্র তথা বিজেপি বোঝাচ্ছে, বাংলার ‘স্বার্থে’ এ রাজ্যে NRC প্রয়োজন৷ রাজনৈতিক বার্তা হিসেবে এই প্রচার নিশ্চিতভাবেই এফেক্টিভ৷ কিন্তু বাস্তবটা কী ?
তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ শান্তা ছেত্রি গত সপ্তাহে সংসদে সরকারকে প্রশ্ন করেছিলেন, “জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা NRC পশ্চিমবঙ্গেও হবে কিনা এবং এই রাজ্যে বর্তমানে অবৈধ অভিবাসী বা Immigrant-দের সংখ্যা কত ?” একইসঙ্গে তিনি এ সম্পর্কে কেন্দ্রের কাছে কোনও তথ্য থাকলে, তা জানতেও চেয়েছিলেন তৃণমূলের এই সাংসদ।

রাজ্যসভায় এই প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই খোলাখুলি জানান, “পশ্চিমবঙ্গে বসবাসকারী এই ধরনের অভিবাসীর সংখ্যার সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না”৷
এর কারন হিসেবে রাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যেহেতু অবৈধ অভিবাসীরা গোপনে এবং অনৈতিকভাবে ভ্রমণ সংক্রান্ত বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে, তাই পশ্চিমবঙ্গে অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যাই এখনও জানা যায়নি৷”

কি বিস্ময়কর কেন্দ্রের যুক্তি ৷ কেন্দ্র এবং বিজেপি বাংলা থেকে অবৈধ অভিবাসীদের তাড়াবে অথচ দেশের সরকার সম্পূর্ণ অন্ধকারে আনুমানিক কতজনকে তাড়াতে হবে৷ এতবড় একটি প্রক্রিয়া, যা নিয়ে রাজ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা চরমে৷ যে NRC-র ঠেলায় উপনির্বাচনে বঙ্গ-বিজেপি ৩-০ তে ‘ম্যাচ হেরেছে, যা প্রক্রিয়া নিয়ে রাজ্যে বড় অশান্তি হওয়ার আশঙ্কা প্রবল, সেই NRC রাজ্যে চালু করবে বলে কেন্দ্র বার বার বলছে, অথচ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় তথ্য-ভাণ্ডার শূন্য ? এ কেমন ছেলেমানুষী ?স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তো এই বিশাল কাজটি সম্পাদনা করে। তথ্যই না থাকলে কীভাবে এই বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হবে? সে সম্পর্কে তো এখনও বিশদে কিছুই ঠিক হয়নি। তাহলে এত আগাম এই হুমকি কেন ? কেন্দ্রের এই অবস্থা কি এটাই প্রমান করছে না যে, দেশজুড়ে NRC পরিচালনা করা আসলে জনগণের করের অপচয় মাত্র।

NRC আদমশুমারির চেয়েও কঠিন কাজ। অসমে NRC করার চূড়ান্ত সময়সীমা ছিল ১৯৭১ সাল। তবে দেশের বাকি অংশের NRC সেই চূড়ান্ত সময়সীমা কী হবে তাও এখনও নিশ্চিত নয়।
কংগ্রেস সরকার ২০০৫ সালে অসমে NRC পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এবং পুরোটা শেষ করতে ১৪ বছর সময় লেগেছে। ভারতজুড়ে এই NRC করতে কত সময় লাগবে তা নিয়ে কেউ নিশ্চিত নয়৷

আরও গুরুত্বপূর্ণ কথা, খরচ৷ শুধু অসমে NRC-র খরচ হয়েছে ১৬০০ কোটি টাকা এবং যদি NRC দেশের 28 টি রাজ্য এবং ৯ টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে করতে হয় তবে মোট খরচ ৬০,০০০ কোটি টাকার চেয়ে কম হবে না। NRC বিষয়টি সবদিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷ তাহলে কেন্দ্রের এই কাছাখোলা অবস্থা কেন? কেন্দ্র
তথ্যহীনই বা কেন?

স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে, কেন্দ্র এবং বিজেপি NRC-কে রাজনৈতিক হাতিয়ার করেই বাংলার মাঠে খেলতে চাইছে৷ ট্রায়াল ম্যাচে ৩-০তে হারার পরেও কি স্ট্র্যাটেজি-র বদল হবে না ?

spot_img

Related articles

পুলওয়ামার আত্মঘাতী হামলায় মদতের কথা স্বীকার করে ফেলল পাকিস্তান

২০১৯ সালে জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে আত্মঘাতী হামলা হয়। শহিদ হন ৪০ জন CRPF জওয়ান। জঙ্গি...

দেশের স্বার্থ বিরোধী: অশান্তির পরিস্থিতিতে বামেদের মিছিলকে ধুইয়ে দিলেন কুণাল

পাকিস্তানী সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে যখন কেন্দ্রের সরকার অপারেশন সিন্দুর-এর মতো অভিযান চালাচ্ছে দেশের সেনা, সেই সময় পাশে দাঁড়িয়েছে গোটা...

ঝাড়গ্রামে ‘সাদা পাহাড়’ ঘিরে নয়া পর্যটন কেন্দ্র

ঝাড়গ্রামের (Jhargram) পর্যটন পরিকাঠামোয় বড়সড় উন্নয়নে পদক্ষেপ করছে রাজ্য। বেলপাহাড়ির ‘সাদা পাহাড়’ বা স্থানীয়দের কথায় ‘চেতন ডুংরি’ এলাকায়...

মহানগরীর পরিবহন ব্যবস্থায় বড় বদল! ধর্মতলায় ভূগর্ভস্থ পার্কিং প্লাজা-টানেল

মহানগরীর পরিবহন ব্যবস্থায় বড় বদল আনতে চলেছে রাজ্য সরকার। মেট্রো (Metro) সম্প্রসারণের ফলে ধর্মতলা দ্রুতই হয়ে উঠবে কলকাতার...