কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় রাজ্যের নতুন মুখ? খতিয়ে দেখতে আসছেন হেভিওয়েট নেতা

বাংলার বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করে ঘর গোছানোর কাজ শুরু করছে কেন্দ্রীয় বিজেপি৷ এ রাজ্যে সাম্প্রতিক তিন উপনির্বাচনে ‘নিশ্চিত’ আসনেও হেরেছে বিজেপি৷ তিন আসনই হাতছাড়া হওয়ার কারন হিসেবে বড়ভাবে উঠে এসেছে NRC-ইস্যু৷ এই NRC নিয়ে তৃণমূলের প্রচারের মোকাবিলাই করতে পারেনি রাজ্যের নেতারা৷ তাছাড়া বিশ্বাসযোগ্য মুখের বার্তা ছাড়া মানুষকে আশ্বস্ত করা কার্যত অসম্ভব৷ সেই হিসেবে বঙ্গ-বিজেপির হাতে পদাধিকার বলে রাজ্য সভাপতি এবং দুই কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়া, চতুর্থ কোনও গ্রহণযোগ্য মুখ নেই৷ উপনির্বাচনে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের খড়্গপুর এবং কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরির কালিয়াগঞ্জেও বিজেপি হেরেছে৷ আর এক রাষ্ট্রমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে সেভাবে ভোটপ্রচারে দেখা যায়নি৷ ইমেজ বা ভাবমূর্তিতে নয়, স্রেফ পদে থাকার জন্যই এই তিন নেতা-নেত্রীর কথা সাধারন মানুষ ভরসা করলেও করতে পারেন৷ তবে উপনির্বাচনের ফল বলছে NRC নিয়ে এই তিন নেতা-নেত্রীর আশ্বাসকেও মানুষ ভরসা করেনি৷ এই নেতৃত্বের উপর ভরসা রাখতে পারেনি বলেই তৃণমূল ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেওয়া একঝাঁক কাউন্সিলর ফিরে গিয়েছেন তৃণমূলেই৷ এমন একাধিক বিধায়কও ‘ঘরে’ ফেরার কথা ভাবছেন৷ বঙ্গের সামগ্রিক বিজেপি সংগঠন এবং উপনির্বাচনের ফলের ময়না তদন্ত করে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা বঙ্গ-বিজেপির এই দুর্বলতা ও ব্যর্থতা চিহ্নিত করে ফেলেছেন৷ একুশের ভোটের আগে ঘর গোছানোর যে আর বিশেষ সময় নেই, সেটাও বুঝেছেন৷ ভোট যত এগিয়ে আসছে,বঙ্গ-বিজেপির গলদ-ব্যর্থতাও প্রকট হচ্ছে৷ এ নিয়ে দিল্লির নেতাদের উদ্বেগ ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে৷

বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে যেন ফের উপনির্বাচনের মতো মুখ থুবড়ে পড়তে না হয়, সেজন্য কাজে নেমে পড়েছে দিল্লি৷ জানা গিয়েছে, আগামী ১৬ অথবা ১৭ ডিসেম্বর রাজ্যে আসছেন অমিত শাহর ঘনিষ্ঠ বিজেপির জাতীয় স্তরের সাধারণ সম্পাদক ভূপেন্দ্র যাদব। সর্বভারতীয় বিজেপিতে এই ভূপেন্দ্র যাদবের প্রভাব অসীম৷ বিজেপির কার্যনির্বাহী সভাপতি হিসেবে ভূপেন্দ্র যাদবের নামও উঠেছিলো৷ দলের অনেকেরই ধারনা, ভূপেন্দ্র যাদবই জাতীয় বিজেপির পরবর্তী মুখ৷ এ রাজ্যে এসে যাদব বঙ্গ- বিজেপির বাছাই করা কিছু নেতা এবং রাজ্যের RSS নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেই কাজ করতেই খোদ অমিত শাহ পাঠাচ্ছেন ভূপেন্দ্র যাদবকে৷

ওদিকে নির্ভরযোগ্য সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী মোদি নাকি নিজেই অমিত শাহের কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন, বাংলা থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ আনার ব্যাপারে, যাতে বিরোধীদের NRC বা CAB নিয়ে প্রচারের বিশ্বাসযোগ্য মোকাবিলা করা সম্ভব হয়৷ লোকসভা ভোটে নজিরবিহীনভাবে ১৮ জন সাংসদ পাওয়া সত্ত্বেও বাংলা থেকে কেন মাত্র দু’জনকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিলো প্রথম দিন থেকেই৷ দলের মধ্যেও প্রশ্ন ছিলো এবং এখনও আছে৷ তাই আগামী মাসেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় যে সম্প্রসারণ হতে চলেছে, সেখানে বাংলা থেকে ঠিক কাকে মন্ত্রী করা যেতে পারে, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখতেও যাদবকে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে৷ বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরিকে মন্ত্রী রেখেই তৃতীয় বা চতুর্থ মন্ত্রী আসবেন, না’কি বাদ পড়বেন কেউ, তাও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে ভূপেন্দ্র যাদবকে৷

মোটের উপর, উপনির্বাচনে তৃণমূলের কাছে জোর ধাক্কা খাওয়ার পর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বাংলা নিয়ে যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গেই পদক্ষেপ করতে চাইছে কেন্দ্রের বিজেপি৷

আরও পড়ুন-অসাংবিধানিক রাজ্যপাল, প্রতিবাদে রাজ্যসভা বয়কট তৃণমূলের

 

Previous articleঅশান্ত অসম, সীমানা পেরিয়ে বাংলায় আশ্রয়ের চেষ্টা!
Next articleসংশোধনাগারে তৈরি হবে গ্রিন সিটি