Thursday, May 15, 2025
দেবাশিস বিশ্বাস

NRC/CAA বিরোধী আন্দোলন, মিটিং মিছিল হয়তো দেশের নানান প্রান্তে চলছে। কয়েকটি রাজ্য ছাড়া গণতান্ত্রিক পথেই চলছে। কিন্তু সেই সমাবেশ বা আন্দোলন গুলোকে খালি চোখে দেখলেই বোঝা যাবে যে আন্দোলন থেকে দেশের বিশাল সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠী হিন্দুরা নিজেদেরকে সরিয়ে নিচ্ছেন। লড়াইটা কেবল মুসলিমদের লড়াইয়ে পরিণত হয়ে যাচ্ছে অতি দ্রুত। অথচ হিন্দুদের বিশাল অংশ কিন্তু NRC-র বিরোধী ছিলেন, কেন্দ্রীয় শাসক দলেরও বিরোধী ছিলেন এবং সেই বিরোধিতা দিনে দিনে যে বাড়ছিল তা মহারাষ্ট্র, হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচন এবং বহু রাজ্যের উপনির্বাচনে স্পষ্ট হচ্ছিল। এই সব নির্বাচন ক্ষেত্রগুলোতে হিন্দুরা সন্দেহাতীতভাবে সংখ্যা গুরু। প্রমাদ গুনতে শুরু করেছিল চন্দ্রগুপ্ত-চাণক্য জুটি।

CAA সব ঘুলিয়ে দিল। যতজন আন্দোলন করছেন, নিঃসন্দেহে তার থেকে বহু বহু গুন মানুষ সেই আন্দোলন থেকে সরে গিয়েছেন বা হয়তো NRC/CAA- এর পক্ষে চলে গিয়েছেন। চাণক্য-শাহ অতি সুকৌশলে এত বড় রাষ্ট্রীয় ইস্যুকে মুসলিমদের সমস্যায় পর্যবসিত করে দিতে সক্ষম হয়েছেন। বামপন্থীরাও এই ফাঁদে পা দিয়ে কেবল মুর্শিদাবাদ, ও অন্যান্য কিছু সংখ্যালঘু এলাকায় সফল সমাবেশ করে ছবি পোস্ট করছেন। মুসলিমরাও অতি দুর্ভাগ্যজনকভাবে নিজেদের ধর্মীয় প্রতীক পোশাক পরিচ্ছদ পরে আন্দোলন সমাবেশে এসে বিষয়টি আরও জটিল করে তুলেছেন।

অপেক্ষা করুন আর কিছুদিন পরেই মোদি-শাহ বাহিনী NRC/CAA- এর সমর্থনে প্রচারে নামবেন। তাঁরা বুদ্ধি করেই এখন চুপ করে বসে আছেন, নানা জায়গায় হিংসা দেখেও মুখে কুলুপ। চরম বাচাল খড়গপুরের ঘোষদাও চুপ। তাঁরা চাইছেন আরও বিশৃঙখলা বাড়ুক, আরও মেরুকরণ বাড়ুক, একজোট হিন্দু মুসলিমরা আলাদা হয়ে যাক, তারপর নামা যাবে। এই ভাঙচুর, ট্রেনে আগুন, নারা এ তকবির স্লোগান, দেশভাগের সময়ের ভয়াবহ দাঙ্গার স্মৃতি উস্কে দেবেই। তারপর আতঙ্কিত হিন্দুদের রক্ষক অবতার হিসাবে তাঁরা পথে নামবেন। জনস্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সবাইকে। এই দেশের প্রায় ৮৩% হিন্দু, এর সাথে জুড়ে নিন বৌদ্ধ, শিখ, খ্রিস্টানও। কোথায় তলিয়ে যাবে মুসলিমরা? মুসলিম ভোট BJP পায়না, তা পাবার তোয়াক্কাও করেনা।

লক্ষ্য করুন সরকার বা সঙ্ঘ পরিবার বিরোধী আন্দোলনের পীঠস্থান JNU/JU চুপ। লড়াই এ নেমেছে জামিয়া মিলিয়া। অথচ JNU আর জামিয়া দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের union ই SFI ও অন্যান্য বামপন্থী দের দখলে। অর্থাৎ আন্দোলনের পন্থা নিয়ে বামপন্থী দের সংশয় ও স্পষ্ট।

তাই অনুরোধ, আন্দোলন করুন কিন্তু সবাই মিলেমিশে। আর মুসলিম দের অনুরোধ আন্দোলন সমাবেশে আসার আগে নিজেদের ধর্মীয় পরিচয়বাহী পোশাক, যেমন টুপি ইত্যাদি বাড়ীতে রেখে আসুন। এখন ভাবছেন সরকার ভয় পেয়েছে। আপনি মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। এই সরকার কে চেনেননি এখনো। NRC/CAB আপনাদের কত ক্ষতি করবে জানিনা, কিন্তু দেশের সংখ্যাগুরু হিন্দু দের থেকে দূরত্ব এবং নাগরিক দের মধ্যে স্পষ্ট আড়াআড়ি বিভাজন আপনাদের ক্ষতি করবে বহু বহু গুণ বেশী।
কি করা উচিৎ বুঝতে না পারলে, আপাততঃ লড়াই মুলতুবি রাখুন, পরে যদি বাস্তবে ধর্মের ভিত্তিতে আঘাত আসে, তখন নামবেন, এবং হ্যাঁ হিন্দুদের নিয়েই নামবেন ভারতীয় হিসাবে। শুধুমাত্র মুসলিমরা এ দেশের সরকারের কোনই ক্ষতি করতে পারবেন না। এটা স্পষ্ট বুঝুন।

Related articles

সুস্থ রয়েছেন রাজ্যপাল, ফিরলেন রাজভবনে

অস্ত্রোপচারের পর একেবারে সুস্থ রয়েছে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (Governor CV Ananda Bose)। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা, রক্তচাপ, শর্করার...

জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াই পুলওয়ামায়, এলাকা ঘিরে ফেলেছে নিরাপত্তা বাহিনী

জম্মু ও কাশ্মীরে পরপর দুটি এনকাউন্টার নিরাপত্তা বাহিনীর। ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে জঙ্গিদের সঙ্গে ফের শুরু...

প্রয়াত হলেন তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক, রাজনীতিতে শোকের ছায়া

প্রয়াত হলেন তেহট্টের তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক তাপস সাহা (Tapas Saha)। ঘুমের মধ্যে ব্রেন স্ট্রোক আক্রান্ত হয়েছিলেন। হয়েছিল ব্রেন...

জঙ্গিদের শহিদের মর্যাদার পর এবার ক্ষতিপূরণ! মসুদকে ১৪ কোটি, এরপরেও IMF-এর অর্থ সাহায্য

পাকিস্তান (Pakistan) সরকারের ছাতার তলায় যে জঙ্গিরা রয়েছে তার প্রমাণ আবারও মিলল। অপারেশন সিন্দুরে ভারত শতাধিক জঙ্গিকে নিকেশ...
Exit mobile version