শাহের ‘আগ্রাসী’ মনোভাবে মোদিজি কি ভীত !

চাণক্য চৌধুরি

কার কথা ঠিক ? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির? না’কি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ?

না’কি সাম্প্রতিক উত্তাল পরিস্থিতি এবং টানা আন্দোলনের চাপে অমিত শাহের ঘোষণা এক ধাক্কায় মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিলেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি ?

NRC ও CAA নিয়ে ক্রমবর্ধমান অশান্তি এড়াতে মোদির সরকার সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে জানিয়েছে, দেশ জুড়ে NRC সংক্রান্ত কোনও ঘোষণাই হয়নি।

ওদিকে,লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, কোনও সংশয় রাখবেন না, গোটা দেশে NRC শুরু হতে চলেছে৷ নির্দিষ্টভাবে শাহ কোন তারিখ ঘোষণা না করলেও বুঝিয়েছিলেন, NRC নিয়ে সরকার তৈরি৷
শুধু লোকসভায় নয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ চলতি মাসের শুরুতে ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে বলেছিলেন, “2024 সালে পরবর্তী লোকসভার ভোট৷ তার আগেই দেশজুড়ে NRC তৈরি করে ফেলা হবে। ওই NRC-ই
চিহ্নিত করবে প্রত্যেক অনুপ্রবেশকারীকে।”
ওদিকে, ভারত সরকারের
বিজ্ঞাপনের বক্তব্য হল, এখনও দেশ জুড়ে NRC-র ঘোষণা হয়নি৷ যদি হয়,তা হলে সেই পরিস্থিতিতে নিয়ম ও নির্দেশিকা এমন ভাবে তৈরি করা হবে যাতে কোনও ভারতীয় নাগরিক অসুবিধায় না পড়েন।

প্রশ্ন উঠেছে, সরকারের অভ্যন্তরে কী এমন ঘটনা ঘটে গেলো যে ভারত সরকার দেশের প্রায় সব সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে অমিত শাহের বক্তব্য উড়িয়ে জানাচ্ছে NRC নিয়ে কোনও ঘোষণাই হয়নি৷ ফলে সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী না কেন্দ্রের বিজ্ঞাপন, কে ঠিক? স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী জি কিষেণ রেড্ডি ওদিকে বিজ্ঞাপনের বক্তব্য সমর্থন করে
বলেছেন, NRC নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকই হয়নি‌৷ বিষয়টি কবে হবে কেউ জানে না।
শাহ যে সে নাগরিক নন৷ তিনি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৷ তাঁর বক্তব্যের ওজন আছে৷ ফলে, বিরোধীরা ধরে নিয়েছিলেন, NRC আসছেই৷ দেশজুড়ে আন্দোলনের তীব্রতাও বৃদ্ধি পায়৷ ভয়ঙ্কর চেহারা নেয় হিংসাত্মক আন্দোলন৷ এত কিছুর পর তাহলে কেন্দ্র NRC-ইস্যুতে পিছিয়ে গেলো কেন? এই বাজারে
শাহের বক্তব্য উড়িয়ে দেওয়া সহজ কথা নয়৷ তাহলে এই রহস্য কেন ?

বিজেপি এবং বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক মহলের মতে, মোদি আশাই করতে পারেননি, নাগরিকত্ব আইন নিয়ে গোটা দেশ এভাবে পথে নামবে৷ একটি ইস্যুতেই দেশের প্রতিটি প্রান্তর একসুরে কথা বলবে, এটা কোনও পক্ষই আঁচ করেনি৷ এর ফলে বিরোধীরা আরও এনার্জি পেয়েছে আর উল্টোদিকে সরকারপক্ষ আরও মিইয়ে গিয়েছে৷
দেশব্যাপী চলা CAA- বিরোধী বিক্ষোভে বেকায়দায় মোদি। দেশের মুসলিমদের মধ্যে একটা আতঙ্ক তো হচ্ছেই৷ কিন্তু একইসঙ্গে লক্ষিত হচ্ছে, হিন্দুদের মধ্যেও এই NRC-CAA নিয়ে উদ্বেগ-আতঙ্ক একটুও কম নয়৷ অসমের NRC-তে মোট 17 লক্ষ নাম বাদ গিয়েছে৷ তার মধ্যে 12 লক্ষ’ই হিন্দু৷ সেই ঘটনা এবারও যে দেশজুড়ে ঘটবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায় ? ফলে, কেন্দ্র যতই হিন্দুদের “আশ্বস্ত” করুক, অসমের পর সে কথা আর কেউই বিশ্বাস করছে না৷ আর তার জেরেই গোটা দেশের লক্ষ লক্ষ হিন্দুও আজ পথে নেমে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মিছিল করছেন৷ খোঁজ নিলে দেখা যাবে, এদের সিংহভাগই লোকসভা ভোটে পদ্ম ফুলে সমর্থন করেছিলেন৷ তা না হলে, বিজেপির ভোট এতখানি বৃদ্ধি পেলো কীভাবে ?

সেই অংশই আজ পথে নেমেছে, বিজেপি তো ভয় পাবেই৷ হিন্দু ভোট সবটাই গ্রাস করতে গিয়ে ফাঁটা বাঁশে আটকে গিয়েছে বিজেপির শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷
তাই-ই কী মোদি-সাহেব বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্যারাজ করলেন শাহকে ? তাই কী দেশবাসীকে ভরসা দেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করলেন মোদি৷
সংবাদমাধ্যমের কাছে
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষেণ রেড্ডি আরও স্পষ্টভাবে বলেছেন, “NRC নিয়ে আইন মন্ত্রক বা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় একটি শব্দও আলোচনা হয়নি। NRC নিয়ে কোনও খসড়াও তৈরি হয়নি। NRC দ্রুত হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। এতে অনেক সময় লাগবে। ভারত সরকারের
বিজ্ঞাপনে সেই কথাই তো বলা হয়েছে”।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়, “অমিত শাহ তো বলেছিলেন, দেশ জুড়ে 2024-এর NRC হবে?
জবাবে একটি কাজের শব্দও উচ্চারণ করেননি মন্ত্রী ৷ শুধু বলেছেন, ‘‘আনা হবে বলা হয়েছিল। কবে আনা হবে তার দিন তো বলেননি৷”

অমিত শাহের ‘আগ্রাসী’ মনোভাবে খোদ নরেন্দ্র মোদি-ই কি এখন ভীত হয়ে পড়েছেন ? নাকি অমিত অনিলচন্দ্র শাহকে ছেঁটে ফেলার সলতে পাকাচ্ছেন নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি ?

Previous articleবাংলাই পথ দেখায়! CAA বিরোধিতায় এবার মমতার পথেই হাঁটল এই রাজ্য
Next articleপ্রধানমন্ত্রীর উপর হামলার ছক পাক-জঙ্গিদের