নাগরিকত্ব ইস্যুতে এখনও কেন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিচ্ছেন না প্রধানমন্ত্রী মোদি?

প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নির্বাচিত হওয়ার পর যে যে বৈশিষ্ট্য দেখিয়ে জনমানসে ছাপ ফেলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি, তার একটি হল জনস্বার্থের অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ। সরকারের খুব গুরুত্বপূর্ণ কোনও সিদ্ধান্ত যা বিতর্ক বা অস্থিরতা তৈরি করতে পারে তেমন কোনও ঘোষণা বা পদক্ষেপ বা আইনের ব্যাখ্যা সারা দেশের মানুষের কাছে তুলে ধরতে এই প্রচার কৌশলকে চমকপ্রদভাবে ব্যবহার করেছেন তিনি। জাতির উদ্দেশে ভাষণ একদিকে যেমন সরকারের অবস্থান তুলে ধরেছে, তেমনি আমজনতার অনেক প্রশ্নেরও নিরসন ঘটাতে প্রাথমিকভাবে অন্তত সাহায্য করেছে।

প্রথমটা ছিল 8 নভেম্বর 2016। নরেন্দ্র মোদির ডিমনিটাইজেশনের নজিরবিহীন ঘোষণাটি ছিল সেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েই। মধ্যরাত থেকে 500 ও 1000 টাকা অচল হয়ে যাওয়ার ঘোষণা ও ব্যাখ্যা শুনে বহু মানুষ প্রাথমিক অসুবিধা মেনে নিয়ে যেমন উল্লসিত হয়েছিলেন, আবার বহু মানুষ কালো টাকার গুপ্তধন চৌপাট হওয়ার আতঙ্কে দিশেহারা। ভাল-মন্দ যাই হোক, মোদি দেশকে এই সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েই।

এবছর ক্ষমতায় আসার পর কেন্দ্রের সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ ছিল জম্মু-কাশ্মীরে 370 ধারা রদ। সেই সংক্রান্ত বিল পাশের পরও কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েই সরকারের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ব্যাখ্যা করেছেন। তাতে অনেকটা কাজও হয়েছে।

তাহলে মোদি এবার নীরব কেন? নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় ও দেশজোড়া এনআরসির সম্ভাবনার আতঙ্কে যখন গোটা দেশ উত্তাল, জনমানসে বহু প্রশ্ন ও উদ্বেগ, বিরোধী দলগুলির সামনে লাগাতার আন্দোলনের মত দুর্দান্ত রাজনৈতিক ইস্যু, বহু জায়গায় লাগামছাড়া হিংসা, অরাজকতা এবং অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যা প্রচার ও গুজবে বিভ্রান্ত, আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ, তখন মোদি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে আইনের উদ্দেশ্য ও সরকারের লক্ষ্য কেন স্পষ্ট করছেন না? হতে পারে, সুপ্রিম কোর্টে আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলা চলছে। কিন্তু খোদ সুপ্রিম কোর্টই তো কেন্দ্রকে বলেছে বিজ্ঞাপনে প্রচার করে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে ধোঁয়াশা কাটাতে। সরকার সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু তা কোনওভাবেই দেশের অসংখ্য গরিব, নিরক্ষর মানুষের উদ্বেগ-আতঙ্ক কাটাতেও পারবে না, গুজবের চোরাস্রোতকেও রুখতে পারবে না। এর চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর হবে প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে ভাষণ। পছন্দ হোক বা অপছন্দ, আইন ও সরকারের বার্তা দেশবাসীর কাছে সঠিকভাবে পৌঁছে দিতে এটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পথ।

Previous articleফের বিক্ষোভের আগুন রাজধানীতে
Next articleবাঙালিকে বড়দিন ও নববর্ষের ছুটিতে ৬ জোড়া স্পেশাল ট্রেন উপহার ইস্টার্ন রেলের