তাহলে এবার “বৃহত্তর” বাম ঐক্যে মিশে যাচ্ছে প্রদেশ কংগ্রেস?

শুরুটা হয়েছিল ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে। গোটা রাজ্য দেখেছিল এক নজিরবিহীন “জোট”। রাজ্যের ২৯৪টি আসনে বামেদের সঙ্গে জোট করে লড়াই করেছিল। তখন বামদলগুলি এবং কংগ্রেসকে কটাক্ষ শুনতে হয়েছিল শাসক দল তৃণমূলের থেকে। বিদ্রূপে নতুন স্লোগান হয়েছিল “হাত-হাতুড়ি-কাস্তে”, “বাংলায় দোস্তি, দিল্লিতে কুস্তি”, ইত্যাদি ইত্যাদি।

এই জোটে বাম শরিকরা যেমন দুষে ছিল সিপিএমকে। একইভাবে প্রদেশ কংগ্রেসের মধ্যেও দেখা দিয়েছিল বিভাজন। নির্বাচন থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা ডিপি রায়।

কংগ্রেস এবং বামেদের পক্ষ থেকে তখন বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল, এটা জোট নয়, তৃণমূলের বিরুদ্ধে নির্বাচনী “সমঝোতা”। আর এই সমঝোতার যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছিল, বাম এবং কংগ্রেস একসঙ্গে মিটিং-মিছিল করবে না। এমনকী, পৃথক ইশতেহারও প্রকাশ করা হয়েছিল।

কিন্তু বামপন্থী ও দক্ষিণপন্থী দলের এই দ্বিচারিতা ভালভাবে নেয়নি বাংলার মানুষ। নির্বাচনের ফলাফলই তার প্রমাণ দিয়েছিল। ২১১টি আসন নিয়ে দ্বিতীয়বারের জন্য সরকার গড়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। কংগ্রেস কিছুটা সম্মানজনক আসন পেয়ে বামেদের থেকে বিরোধী দলের মর্যাদা কেড়ে নিয়েছিল। আর ভরাডুবি হয়েছিল বামেদের।

পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনে আর সমঝোতার পথে হাঁটেনি বাম-কংগ্রেস। বরং, নির্বাচনের সময় দুই পক্ষ একে অপরকে কটাক্ষ করেছে। এবং বিজেপি ও তৃণমূলের সঙ্গে গোপন আঁতাতের কথাও বলা হয়েছিল একে অপরকে উদ্দেশ্য করে। ভোটের ফল বেরোনোর পর দেখা কংগ্রেস সব খুইয়ে দুটি ধরে রাখলেও, বামেদের ঝুলি শূন্য।তাদের জায়গা নিয়েছে বিজেপি।

আবার জোট। সম্প্রতি, রাজ্যের তিন বিধানসভা উপনির্বাচনে ফের জোট করে লড়ে বাম-কংগ্রেস। বলা ভালো, সিপিএম ও কংগ্রেস। আবার যা হওয়ার তাই। ফের গোহারা।

এবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে। তাহলে এবার “বৃহত্তর” বাম ঐক্যের মধ্যে ঢুকে পড়ছে প্রদেশ কংগ্রেস? না, এবার কোনও নির্বাচনী “জোট” বা “সমঝোতা” নয়। এই মুহূর্তে দেশ বা রাজ্যে কোনও নির্বাচন নেই। কিন্তু আন্দোলন আছে। বিরোধিতা আছে। বিক্ষোভ আছে। পথে নামছে কংগ্রেস। পথে নামছে বামেরা। এবার একসঙ্গে বাম-কংগ্রেস। বিজেপি ও কেন্দ্রের সরকারের NRC-CAA বিরোধিতায় পথে নামছে তারা। এবং সেটা নির্বাচনের বাইরে। খুব ভাল কথা।

কিছুদিন আগে বামেদের শ্রমিক সংগঠনের পরিচালনায় আসানসোলের চিত্তরঞ্জন থেকে ১২দিনব্যাপী পদযাত্রার শেষে ধর্মতলার রানি রাসমণি রোডে জনসভায় দেখা মিললো কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি’র। এবং সেটা প্রদেশ কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সবুজ সংকেতেই। শুধু তাই নয়, ওই সমাবেশে বামেদের যা দাবি ছিল কংগ্রেসেরও তাই। বামেদের হোডিং-পোষ্টার আর প্রদেশ কংগ্রেসের হোডিং-পোষ্টার একেবারে কপি-পেস্ট।

এখানেই শেষ নয়, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আবার ঘোষণা করলেন, কেন্দ্রের NRC-CAA বিরোধিতায় আগামী ৮ জানুয়ারি তাঁরা বামেদের ডাকা ভারত বনধ-এ এ রাজ্যে সামিল হবেন। এবং সেটা নাকি দিল্লির হাইকমান্ডকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে তারা রাজি করেছেন। খুব ভালো কথা।

এখন তো কোনও নির্বাচন নেই। সুতরাং, নির্বাচনী “সমঝোতা” নেই। তাহলে বামেদের সঙ্গে একসঙ্গে মিছিল-মিটিং। একই ব্যানার-পোষ্টার কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ভাষা এক। প্রচার এক। ইস্যু এক। মিটিং এক। মিছিল এক।
এটা “সমঝোতা” নাকি “জোট”? প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক মহলে। জল্পনা চলছে ওয়াকিবহাল মহলে। জোর চর্চা।

তাহলে কি এবার “বৃহত্তর” বাম ঐক্যে মিশে যাচ্ছে প্রদেশ কংগ্রেস? রক্তক্ষরণে থাকা এক পক্ষকে জড়িয়ে ধরছে সাইন বোর্ডে পরিণত হওয়া আরেক পক্ষ। নাকি খড়কুটোর মতো একে অপরকে আখলে ধরে বেঁচে থাকা, অস্তিত্বরক্ষার লড়াই?

Previous articleযাবেন না’কি ‘মোদি ঠাকুর’-এর মন্দিরে ?
Next articleপুলিশ থেকে আমলা বানিয়ে দেওয়া হলো রাজীবকে!