বধ্যভূমি উত্তরপ্রদেশ! রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজ

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (NRC)-এর বিরুদ্ধে যোগী রাজ্য উত্তরপ্রদেশে ব্যাপক বিক্ষোভ-প্রতিবাদ মীরাট-বারাণসী-মুজাফফরনগর-লখনউ-আলীগড়-আজমগড়-কানপুরে সংঘঠিত হয়েছে। অভিযোগ, যোগী আদিত্যনাথের হুমকি এবং সাম্প্রদায়িক ফ্যাসিবাদের নগ্ন রূপ প্রকাশ হয়ে পড়ে যখন পুলিশ প্রতিবাদকারীদের উপর নির্মম-নির্দয়-নিষ্ঠুর আচরণ করে। বাংলার সিরাজুল ইসলাম-সহ মানুষকে গুলি করে মারা হয়েছে। যে অত্যাচারের শিকার হচ্ছে শিশুরাও।

এদিন তারই প্রতিবাদে কলকাতা প্রেসক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক আয়োজন করে বাংলা নাগরিক সমাজ। যেখানে উপস্থিত ছিলেন সমাজের বিভিন্নস্তরের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিরা।

এই আলোচনা সভা ও সাংবাদিক বৈঠকে যা বললেন নাগরিক সমাজ ও বুদ্ধিজীবি মহলের প্রতিনিধিরা–

প্রসূন ভৌমিক (কবি):

এই রাজ্যে প্রতিষ্ঠান প্রধান, একটি নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা করছেন। কিন্তু সেই তিনিই, নববর্ষের টুইট করছেন বঙ্গভঙ্গের নায়ক লর্ড কার্জনের চেয়ারে বসে। যা লজ্জার।

অটল বিহারি বাজপেয়ির পর বিজেপি আর রাজনৈতিক দল নয়, একটি সন্ত্রাসী দলে পরিণত হয়েছে। খুন-ধর্ষণ-রাহাজানি করছে। কিন্তু জেনে রাখা ভাল, আপনারা যত অত্যাচার করবেন মানুষ তত রুখে দাঁড়াবে। একে অপরের প্রতি ভালোবাসা বাড়বে। শুধু মুসলমানরাই নয়, যারা প্রতিবাদ করছে তাদেরকে খুন করছে এরা। যোগী আদিত্যনাথ সন্ন্যাসী রূপ ধারণ করেছেন। কিন্তু সেটা ভুয়ো। হিন্দুরাও আতঙ্কে রয়েছে। ওদের গেরুয়া পতাকা কোনও সন্ন্যাসীর নয়, ডাকাতির ধ্বজা।

উত্তর প্রদেশের বর্তমান অবস্থা প্যালেস্তাইনের মত। তাই সকলকে আবেদন করব, রাজ্যে যেখানে উত্তরপ্রদেশ ভবন রয়েছে ঘেরাও করে বিক্ষোভ করুন এবং সেটা শান্তির পথে।

অরুণজ্যোতি ভিক্ষু ( বৌদ্ধ সন্ন্যাসী)):

একজন সন্ন্যাসী গেরুয়াধারী হয়ে ভাবতে পারিনি, কোনওদিন অন্য একজন গেরুয়াধারীর সমালোচনা করতে হবে। গেরুয়া ত্যাগের-শান্তির- অহিংসার প্রতীক। একজন সন্ন্যাসী ঘর-পরিবার ছেড়ে চলে আসে। কিন্তু হাজারো পরিবারকে নিজের করে নেয়।

কিন্তু যোগীর মতো ফেক গেরুয়াধারণকারীরা ভারতের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, এইসব ভুয়ো সন্ন্যাসীদের মদতে NRC-CAA-NPR হচ্ছে।

ভারতের গণতন্ত্র বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্র। কিন্তু সেখানেই প্রতিবাদ-আন্দোলন হলে গুলি করে মারা হচ্ছে। যাদের ভোটে সরকার তৈরি হয়েছে, এখন তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। তাদেরকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে। যুক্তি তো এটাই বলে, ভোটাররা যদি নাগরিক না হয়, তাহলে এই সরকার অবৈধ। হিন্দুত্ব শিখতে হলে রামকৃষ্ণ মিশন, ভারত সেবাশ্রমের কাজ দেখে শিখুন। যোগীকে দেখে নয়।

প্রতুল মুখোপাধ্যায় ( সংগীতশিল্পী):

এক অদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গোটা দেশজুড়ে এই শাসকের বিরুদ্ধে বললেই তারা দেশদ্রোহী। আর যারা এই শাসককে চাটুকারিতা করছেন তারা হলেন দেশপ্রেমিক। আমার দুর্ভাগ্য, ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে এমন হিটলার রাজ দেখতে হচ্ছে।

Previous articleনেওড়া ভ্যালিতে ফের দেখা মিলল বাঘের
Next articleনাগরিকত্ব আইন থেকে মুক্তি নেই, সব রাজ্যই এটা কার্যকর করতে বাধ্য: আইনমন্ত্রী