পার্ক সার্কাস ময়দানকে হাজার যোজন দূরের শাহিনবাগ বানালেন ওনারা

কলকাতাতেই দিল্লির শাহিনবাগ৷

প্রবল ঠাণ্ডা উপেক্ষা করেই পাশাপাশি বসে একদল মহিলা৷ ৭০ থেকে ১৭, সব বয়সের মহিলাদেরই দেখা গিয়েছে৷ এনারা কোনও রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। এমনকী, মঙ্গলবার দুপুরের আগে এনারা হয়তো একে অপরকে চিনতেনও না৷ একেবারেই সাধারণ এই গৃহবধূরা কোনওদিন ভাবেননি এভাবে তাঁরা পর্দার বিইরে এসে পার্ক সার্কাস ময়দানে বসে এমন ভাবে আন্দোলন করবেন।

৭০ অতিক্রম করা নাজো বেগম, সুব্বুই আজিজ ও নুরজাহান জুনাইদ। তাঁদের পাশে একবছরের শিশু ও শাশুড়ি ফিরদৌসিকে সঙ্গে নিয়ে বসে নিলোফার সাদিক।
ওই তিন বৃদ্ধার বলিষ্ঠতা লজ্জা দেবে এই প্রজন্মকে৷ বললেন, “আজও যদি পথে না নামি, তবে আর কবে নামবো?’ ওদিকে নিজের এক বছরের ছেলেকে দেখিয়ে মা নিলোফার বোঝালেন, “এটা আমাদের অস্তিত্বের লড়াই। ছোট বলে তো ওদের বাইরে রাখা যাবে না। বিপদ এলে তো ছোটদেরও ছাড় দেবে না। তাই ওদেরও থাকতে হবে।”

আপাতত গোটা দেশ যে ইস্যুতে উত্তাল, সেই CAA- NRC-র প্রতিবাদেই মঙ্গলবার পার্ক সার্কাস ময়দানে অপরিচিত ‘সাধারণ’ গৃহবধূদের মিলিয়ে এক করে দিয়েছে৷ দিল্লির শাহিনবাগ-ই যেন এদিন উঠে এসেছে পার্ক সার্কাসে৷ দেশজোড়া প্রতিবাদে শুধুই যে সামিল হয়েছেন তা নয়, সারা রাত বসে বসেই ধরনা দেওয়ার জন্য যেন তৈরি হয়েই তাঁরা পার্ক সার্কাস ময়দানে এসেছিলেন৷ এ দিন এক হয়েছিলেন প্রায় ৭০-৭৫ জন মুসলিম গৃহবধূ। ঘরের চৌহদ্দির মধ্যেই চিরকাল কটাতেই যারা অভ্যস্ত, সেই মুসলিম রমনীরাই “আর সময় নষ্ট করতে রাজি নন”৷ তাঁদের কথা, “নিজেদের ‘ভারতীয়’ পরিচয়ে কোনও মতেই দাগ লাগাতে দিতে আমরা রাজি নই৷”

এই কর্মসূচির কোনও পরিকল্পনা বা প্রচার ছিলো না। মঙ্গলবার দুপুর থেকে মুখে মুখেই রটেছিলো গুরুত্বপূর্ণ কারনে পার্ক সার্কাস ময়দানে এই জমায়েতের কথা৷ বিপুল উৎসাহে পার্ক সার্কাসে সমবেত হলেন মুসলিম গৃহবধূরা। কারও হাতে জাতীয় পতাকা, কেউ হাতে লেখা পোস্টার নিয়ে। মুখে স্লোগান। কেউ এসেছেন নাতনির হাত ধরে শ্লথ পায়ে, কেউ এসেছেন কোলের শিশুকে কোলে নিয়েই। এসেছেন প্রতিবাদ জানাতে। CAA- NRC – NPR-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ৷ কলেজ স্ট্রিট, তালতলা, তোপসিয়া, তিলজলা, খিদিরপুর, পার্ক সার্কাস, শহরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে একে একে পৌঁছে যান তাঁরা৷
বেনজির এই জমায়েতের মূল উদ্যোক্তা আসমাত জামিল। তিলজলায় থাকেন৷ সমাজকর্মী হলেও আদতে তো একজন গৃহবধূ। ওই জমায়েত নিয়ে তিনি বলেন, “অনেক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ, তাঁর ‘আচ্ছে দিন’ ফেরত নিয়ে আমাদের সেই পুরনো ‘খারাপ দিন’ ফিরিয়ে দিন। আমরা তাতেই ভালো থাকব।”

এবং জানালেন,”মঙ্গলবার রাতভর খোলা আকাশের নিচেই এমন প্রতিবাদ চলবে।”. কলেজ স্ট্রিটের কলাবাগান থেকে আসা নুরজাহান জুনাইদ, তালতলার সুব্বুই আজিজ বা পার্ক সার্কাসের নাজো বেগমের স্পষ্ট বক্তব্য, “আমরা সবাই তো ভারতীয়ই। হঠাৎ একঝাঁক তুঘলকের কাছে আমাদের ভারতীয়ত্বের প্রমাণ দিতে যাবো কেন? কারও যদি দরকার থাকে, তবে তিনি প্রমাণ করুন আমি ভারতীয় নই। একথা বলতেই আজ আমরা পার্ক সার্কাস ময়দানকে হাজার যোজন দূরের শাহিন বাগ বানিয়েছি”৷

আরও পড়ুন-ইরানের মিসাইল হানায় নিহত ২০ মার্কিন সেনা

Previous articleবেঙ্গালুরুতে ধর্মঘটীদের বড় জমায়েত
Next articleবৈদিক গণিত! সঙ্ঘের প্রস্তাবকে উপহাস করলেন অমর্ত্য