প্রশান্ত কিশোরকে কেন অমিত শাহের লোক বললেন নীতীশ?

ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকে নিজের দল থেকে বহিষ্কারের আগের দিন জেডিইউ সভাপতি ও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশকুমার পিকে সম্পর্কে একটি গোপন তথ্য ফাঁস করেন সাংবাদিকদের সামনে। ক্ষোভের সঙ্গে নীতীশ বলেন, অমিত শাহের কথাতেই ওকে দলে নিয়েছিলাম। তার মানে, জেডিইউ-র সহ-সভাপতি পদে ২০১৮ -র শেষদিকে প্রশান্ত কিশোর ওরফে পিকের যোগদান আসলে তৎকালীন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের অনুরোধের ফল। তাই কি জেডিইউ-র সদস্যপদ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে জেডিইউর দ্বিতীয় শীর্ষপদাধিকারী বানিয়ে দিয়েছিলেন নীতীশ? প্রভাবশালী অমিত শাহর অনুরোধ রাখতে?

এখানেই বহু রহস্য ও জটের গন্ধ। কেন তৎকালীন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ নিজের দল বিজেপিতে প্রশান্ত কিশোরকে না নিয়ে তাঁকে নীতীশের দল জেডিইউতে ঢুকিয়ে দিলেন? পিকে বিহারের জন্য বিশেষ কিছু করতে চাইলে বিজেপির রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মই তো ব্যবহার করতে পারতেন! তার জন্য নীতীশকে অনুরোধ করে তাঁকে জেডিইউতে ঢোকানোর কী অর্থ? সাদা চোখে এই হিসেব মেলা মুশকিল। তাহলে কি প্রশান্ত কিশোরকে জেডিইউতে ঢোকানোর পিছনে অন্য কোনও অঙ্ক ছিল অমিত শাহের?

২০১৫ সালে বিজেপিকে পর্যুদস্ত করে বিহারে কংগ্রেস, আরজেডি ও জেডিইউ সরকার গঠিত হয়। মুখ্যমন্ত্রী হন নীতীশকুমার। সেইসময় ভোটকুশলী পিকে ছিলেন মহাজোটের পরামর্শদাতা। এরপর ২০১৭তে বিহারে বিজেপি-বিরোধী মহাজোট ছেড়ে বেরিয়ে আসেন নীতীশ। ফের এনডিএতে ফিরে বিজেপির সহায়তায় সরকার গড়েন। এই বিতর্কিত পর্বের পরেই ২০১৮-তে জেডিইউতে ‘অনুপ্রবেশ’ ঘটে প্রশান্ত কিশোরের। দলে ঢুকেই হয়ে ওঠেন নীতীশের অত্যন্ত আস্থাভাজন পরামর্শদাতা। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি প্রশান্ত কিশোরকে জেডিইউতে পাঠিয়ে খোদ নীতীশকুমারের উপরেই নজরদারি করতে চেয়েছিলেন অমিত শাহ, যাতে শরিক জেডিইউর উপর বিজেপির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে? ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির বৃত্তে এমন বহু গোপন অঙ্ক ও অপারেশন চলে, সাধারণবুদ্ধিতে যার হিসেব মেলা কঠিন। জেডিইউতে পিকের অন্তর্ভুক্তি ও বহিষ্কার অদৃশ্য কোন চিত্রনাট্যের অঙ্ক মেনে হয়েছে কিনা তা সময়ই বলবে।

এখনও পর্যন্ত পিকের অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত নীতীশকুমারের বক্তব্য অস্বীকার করেননি স্বয়ং অমিত শাহ। নীতীশের বক্তব্য খারিজ করেনি বিজেপিও। যদিও পিকে এটা অস্বীকার করেছেন। তারপরও মনে রাখতে হবে, যেসময় পিকের নাম রাজনৈতিক মহলে আলোচিত ছিল না, তখন থেকেই তিনি কাজ করছেন বিজেপির হয়ে। বলা ভাল, মোদি-শাহের হয়ে। ২০১১ সালে গুজরাটে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হয়ে কাজ শুরু করেন পিকে। সেই কৌশল ক্লিক করে এবং তৃতীয়বার বিপুল ভোটে গুজরাটে মোদি সরকার গঠিত হয়। ২০১৪ সালে প্রথম দফায় মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সময়ও পিকে ছিলেন বিজেপির পরামর্শদাতা। অর্থাৎ মোদি-শাহের সঙ্গে পিকের যোগাযোগ আজকের নয়। এই যে ঠিক দিল্লির বিধানসভা ভোটের আগে আপের পরামর্শদাতা পিকে-কে বহিষ্কার করলেন নীতীশ এবং জানা গেল ২ ফেব্রুয়ারি একসঙ্গে প্রচার করবেন অমিত শাহ, জেপি নাড্ডা ও নীতীশকুমার, তার পিছনেও কি কোনও কৌশল নেই? ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠছে, অমিত শাহর লোক বলে পরিচিত পিকে ভবিষ্যতে অন্য কোনও দলে ঢুকলে তাও কি সেই দলকে বিজেপির নিয়ন্ত্রণে রাখার আর একটা চাল হবে? রাজনীতি তো কৌশল আর সম্ভাবনারই খেলা!

Previous articleফের গ্রেফতার কানাইয়া কুমার! এবার কারণ কী?
Next articleপ্রাকৃতিক কারণে আপাতত বিদ্যুৎহীন বইমেলা