ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকার সুরক্ষা বাড়ল?দেবাশিস বিশ্বাসের কলম

    দেবাশিস বিশ্বাস

এই বাজেটে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ঘোষণা করা হল ব্যাঙ্কে আগে আপনার গচ্ছিত টাকার বিমা মূল্য ছিল ১ লাখ টাকা। এবার থেকে তা বেড়ে হল ৫ লাখ টাকা।
ব্যাস শুনে ভক্তরা ধেই ধেই নাচ শুরু করল। কী না মহান ঘোষণা হয়েছে। বিষয়টি একটু তলিয়ে দেখি আসুন।
আমরা ব্যাঙ্কে সেভিংস, এফডি, আরডি করি কিছু লাভের জন্য আর মূলতঃ সুরক্ষার জন্য। কারণ ঘরে রাখলে চুরি হওয়ার ভয় থাকে। কিন্তু ব্যাঙ্কে টাকা অসুরক্ষিত? হ্যাঁ স্যার, সেটা একদিক থেকে ঠিকই। স্বাধীনতার আগে বা পরে অনেক ব্যাঙ্কই ডুবে যেত নানা কারণে। তখন ব্যাঙ্ক বেসরকারি ছিল। অনেক সময় মালিকরাও টাকা মেরে দিত। বহু মানুষ পথে বসত।
এই দুরাবস্থা কাটাতে ১৯৬৯ সালে সব ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ করা হয়। তখন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। তাঁর অর্থমন্ত্রী বামপন্থী মনোভাবের অর্থনীতিবিদ ডঃ মোহন কুমারমঙ্গলম। এই অর্থমন্ত্রীর পরামর্শেই এই বিপ্লবী সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তখন ঘোষণা করা হয়, ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হলেও তাতে সাধারণ মানুষের অর্থ সুরক্ষিত থাকবে। সরকার ১ লক্ষ টাকা অব্দি টাকার বিমা করছেন। অর্থাৎ নিশ্চিন্তে টাকা জমা রাখা যেতে পারে। অর্থাৎ আক্ষরিক অর্থে আপনার জমানো এক লক্ষ টাকা অব্দি ব্যাঙ্কে সুরক্ষিত, এই কথাটা ঠিকই। কিন্তু সব কথার আক্ষরিক অর্থ খুঁজতে গেলে বিপদ। কেন সেটা দেখি:
১৯৬৯ সালের ১ লক্ষ টাকার মূল্য বোঝানো সহজ নয়। তবে টাকার মূল্য বোঝাতে মূল যে দুটি প্যারামিটার দেখা হয় সেগুলো হল তখনকার ডলারের বিনিময় মূল্য আর সোনার দাম। ১৯৬৯ সালে ১ডলার ক্রয়মূল্য ছিল ৭ টাকা ৩৮ পয়সা আর পাকা সোনার ১০ গ্রামের মূল্য ছিল ১৭৩ টাকা ৫৪ পয়সা। এখন ১ডলার প্রায় ৭২ টাকা মতো, পাকা সোনা (২৪ ক্যারেট) ১০ গ্রামের মূল্য প্রায় ৪১ হাজার টাকা। অর্থাৎ ডলারের মূল্য বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ আর সোনার মূল্য বেড়েছে প্রায় ২২০ গুণ। তখন পেট্রোলের মূল্য ছিল লিটারে ১ টাকার নীচে। যা এখন ৭৮-৮০ টাকা। তখন ৩-৪ হাজার টাকায় খাস কলকাতাতে বাড়ি কেনা যেত। এখন জানি না কত দাম। তখন এক মধ্য বা উচ্চ পদস্থ সরকারি অফিসারের বেতন ছিল মাসে ১৫০-৩০০ টাকা এখন দেড় থেকে দুই লাখ। অভ্যন্তরীণ বাজারে এই সময়কালে মূল্যবৃদ্ধি প্রায় ১৬০ গুণ। সেই হিসাবে মোটা দাগের হিসাব করলে তখনকার ১ লাখ টাকা আজকের ১.৫ থেকে ২ কোটি টাকা।
আসলে ওই ১ লাখ টাকাটা ছিল কথার কথা, মূল কথা ছিল সরকার সব টাকার দায়িত্ব নেবেন। যেমন ৯৯৯ বছরের লিজের মতো, বা ৪৩৫ বছর কারাদণ্ডের আদেশ এর মত। মানে সারা জীবন।
তাই কেউ কখনো ভাবতো ও না ব্যাঙ্কে রাখা টাকা মার যেতে পারে। কেউ কোনোদিন দেখেছেন বা শুনেছেন যে ব্যাঙ্কে কারো টাকা মার গেছে। ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ এর সময় (অগাস্ট ১৯৬৯) আমার জন্মই হয়নি, তাই বিষয়টি নিয়ে ভাবার দরকারই পড়েনি আমাদের প্রজন্মকে। এখন ভাবতে হবে নতুন যুগে কী ভাবে চলব। ৫ লাখ টাকার কী মূল্য আজকের যুগে?
মূর্খরা লাফাক, আপনি ভাবুন। এবার কিন্তু ব্যাঙ্ক ডুববে, সরকার আম্বানি, আদানী, নীরব মোদীদের বাঁচাবে, ব্যাঙ্ককে বাঁচাবে না। আপনি বা আপনার পরের প্রজন্ম বাঁচবে তো। ভক্তদের কথা বাদ দিন, আপনারা যাঁরা ভাবছেন বিরোধিতা করে কী হবে, ওসব অন্যদের কাজ, আমি আলগোছে থাকি। বাঁচবেন? ভাবুন।

Previous articleজোরকদমে কাজ চলছে টালা ব্রিজে, বিকল্প যান চলাচলের রুট নির্দেশ দেখে নিন
Next articleশিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় বন্ধ ট্রেন চলাচল, বাঘাযতীন স্টেশনে ওভার হেডের তার ছিঁড়ে বিকল ট্রেন