আসন্ন কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে এবারও নজরে থাকবে ২৩ নম্বর ওয়ার্ড। মূলত, বড়বাজার চত্বরে অবাঙালি অধ্যুষিত এই ওয়ার্ড। সংখ্যালঘু ভোট প্রায় নেই বললেই চলে। ভোটার সংখ্যা খুব বেশি নয়। মাত্র ১৬ হাজার। আর এই ওয়ার্ডেই গত দু’বারের কাউন্সিলর বিজেপির বিজয় ওঝা। এবারও জয়ের ব্যাপারে তিনি একশো শতাংশ নিশ্চিত। তাই এখন থেকেই হ্যাট্রিকের স্বপ্নে বিভোর বিজেপির বিজয়। তাঁর দাবি, জয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। তাঁর কাজ এবং জনসংযোগের জন্য কোনও প্রতিপক্ষ মাথা তুলে দাড়াঁতে পারবে না। আগের চেয়েও বেশি ভোটে জিতবেন। এবং বাকিরা জামানত বাজেয়াপ্ত হবে।
কিন্তু এতটা আত্মবিশ্বাসী কেন তিনি? বিজয় ওঝা পরিসংখ্যান দিয়ে বোঝালেন সেটা। বললেন, ছোট থেকেই এলাকায় সমাজসেবা মূলক কাজ করেন তিনি। বাম জমানার শেষের দিকে ২০১০ সালে প্রথমবারের জন্য তৎকালীন কাউন্সিলরকে হারিয়ে ছিলেন। মাত্র ১১৩ ভোটে জিতে ছিলেন তিনি। সেটা তাঁর কাছে লটারি ছিল। সেই থেকে প্রথম ৫ বছর দল না দেখে বাসিন্দাদের জন্য সাধ্যমত কাজ করে গিয়েছেন। নিবিড় জন সংযোগ করেছেন। তখন থেকেই একজন জন প্রতিনিধি নয়। এলাকাবাসীর ঘরের ছেলে হয়ে গিয়েছেন তিনি। আসলে তিনি বিজেপি পার্টি অফিসে গেলেই তাঁকে বিজেপি মনে হয়। অন্যথায়, এলাকাবাসীর ঘরের ছেলে তিনি। তাই এখানকার সাংসদ, বিধায়ক তৃণমূলের হলেও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের মানুষ তাঁকে এবারও দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করবেন বলেই দাবি বিজয় ওঝার।
তার ফল মেলে ২০১৫ সালে তৃণমূলের ভরা জোয়ারে। সেই ২৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকেই ৫ হাজারেরও বেশি ভোটে জেতেন বিজয় ওঝা। ২০১৪ সালের পর থেকে যতগুলি নির্বাচন হয়েছে সবগুলিতেই বিজেপি এই ওয়ার্ড থেকে লিড নিয়েছে। এবং ট্রেন্ড মোটামুটি একইরকম। ফলে এবার পুরভোটেও তার ব্যতিক্রম হবে না বলেই দাবি করছেন বিজয় ওঝা। পাশাপাশি, ১৯৮৫ সালের পর থেকে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে টানা দু’বার কেউ জিততে পারেননি। বিজয় একমাত্র প্রার্থী, যিনি সেই মিথ ভেঙে একটানা দু’বার জয়ী হয়েছেন।
এই ১০ বছরে ওয়ার্ডে বেশকিছু কাজ করেছেন বিজয় ওঝা। যার মধ্যে একটি শৌচালয় রয়েছে। যেটা ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে সেরা বলেই দাবি করলেন বিজয়। কারণ, সেই বিশাল শৌচালয় পাঁচতারা হোটেলের শৌচালয় থেকে কোনও অংশে কম নয়। এছাড়া আলো, জল, ড্রেনের সমস্যা মিটিয়েছে। আরও অনেক কাজ বাকি আছে বলেও জানালেন তিনি।
বিজয় ওঝার অভিযোগ, আরও অনেক বেশি কাজ তিনি করতে পারতেন। অনেক তাড়াতাড়ি করতে পারতেন। কিন্তু বিরোধী কাউন্সিলর হওয়ায় তাঁর কাজের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হয়। তাঁর আরও দাবি, বড় বাজার এলাকায় এই ওয়ার্ড একটু ঘিঞ্জি হওয়ায় রাস্তা-ঘাটের সমস্যা আছে। কিন্তু এই সমস্যা মেটানোর জন্য পুরসভার কোনও সাহায্য তিনি পান না।
কলকাতা পুরসভা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের আমল থেকে হলে ফিরহাদ হাকিম জমানা পর্যন্ত দুর্দান্ত কাজ করেছে। সেক্ষেত্রে বিজেপির লড়াই কি কঠিন নয়? বিজয় ওঝার সাফ কথা, ওসব মানুষের আই ওয়াশ। লোক দেখানো। লন্ডন বানানোর জন্য কলকাতার অলিতে-গলিতে ত্রিফলা আলো লাগানো হয়েছিল। কিন্তু দেখভালের অভাবে এখন আর আলো জ্বলে না। শুধু নীল-সাদা রং করলেই উন্নয়ন হয় না। বিজয়ের দাবি, দেখভাল করতে হয়। নাহলে মাঝের হাট ব্রিজের মতো অবস্থা হয়।
সব মিলিয়ে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে টানা তিনবার পুর প্রতিনিধি হওয়ার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী বিজয় ওঝা। সেইসঙ্গে তাঁর দাবি, এবার কলকাতা পুরসভায় অনেক আসন পাবে বিজেপি। এমনকী, ক্ষমতা দখলও করতে পারে গেরুয়া শিবির।