
উল্টোদিকে কোনও জাতীয় দল নেই৷ মিসকলে ‘বিশ্বের বৃহত্তম দল’ বলে দাবি করা বিজেপির মূল প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় রাজনীতিতে নবীন একটি দল৷ তাতেই গেরুয়া শিবিরের ‘নিদ্রা গিয়াছে টুটি৷’

দিল্লিতে জাতীয় কংগ্রেস বা বামেরা কার্যত লড়াইয়েই নেই৷
আর ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘আম আদমি পার্টি’ একাই দিল্লির ভোটে বেআব্রু করে চলেছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি-কে৷

অথচ রাজনীতিতে ডাকসাইটে কোনও নেতাকেই দিল্লিতে আপ- এর হয়ে প্রচারে দেখা যায়নি৷ মুখ একটাই, অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷ এই ‘মাফলার-ম্যান’-ই দিল্লিতে বিজেপির কাছে আতঙ্ক হয়ে উঠেছেন৷ না হলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সব কাজ ফেলে কেন ঝাঁপাবেন একটি উপ-রাজ্যের ভোট- বৈতরনী পার হতে৷ মোদি-শাহ যখন নেমেছেন, তখন গেরুয়া শিবিরের বাকি নেতারা চুপ করে বসে থাকতে পারেন না৷ বসে নেইও৷ দিল্লির বিভিন্ন পকেটে একাধিক রাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন ভাষার মানুষ বসবাস করেন৷ বিজেপি সেই সব রাজ্য থেকে বাছাই করা নেতা তুলে এনে দিল্লিতে জড়ো করেছে মাসখানেক আগে থেকেই৷ পেশাদার একাধিক এজেন্সি বিজেপির প্রচার কাজ পরিচালনার দায়িত্বে৷ সেই সব এজেন্সির ঠিক করা কর্মসূচি অনুসারে বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি নেতা-সাংসদরা পৌঁছে যাচ্ছেন দিল্লিতে থাকা তাঁদের রাজ্যের মানুষদের কাছে৷ নিবিড় জনসংযোগ চলছে৷ ওদিকে বড় সমাবেশে মোদি-শাহ সমানে তোপ দেগে চলেছেন আপ’কে লক্ষ্য করে৷ মোটের উপর দিল্লি ভোটকে বিজেপি এবার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের গুরুত্ব দিয়েই মাঠে নেমেছে৷ দিল্লি এবার চাই-ই৷ বামপন্থীদের কাছ থেকে স্লোগান ধার নিয়ে পর্দার আড়ালে হয়তো বা বলছেও, “এ লড়াই বাঁচার লড়াই, এ লড়াই জিততে হবে”৷

কিন্তু দিল্লির ভোটের- জমিতে এই ভাবে ট্রাক্টর চালিয়েও বিজেপি কি ঘরে সন্তোষজনক ফসল তুলতে পারবে? সরকারিভাবে এর উত্তর মিলবে ১১ ফেব্রুয়ারি ৷


ভোট পূর্ববর্তী একাধিক জাতীয়স্তরের ‘ওপিনিয়ন-পোল’ বলছে, বিজেপির কাছে এবারও “দিল্লি দুরস্ত”৷ ভোট ঘোষনার দু’দিন পর-ই ‘সি-ভোটার’- এর জনমত সমীক্ষা জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে দিল্লির ৬৯.৫% মানুষ অরবিন্দ কেজরিওয়লকেই চাইছেন৷ ২০১৫-র দিল্লি ভোটে বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে আইপিএস কিরন বেদি’র নাম ঘোষনা করেছিলো৷ ফলপ্রকাশের পর দেখা যায় বিজেপি’র এক ‘দুর্গ’ আসনে প্রার্থী হওয়া কিরন বেদি-কে আপ-প্রাথী হেলায় হারিয়ে দিয়েছেন৷ তাই বিজেপি এবার দিল্লিতে ‘মুখহীন’৷ ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভের পর বিজয়ী বিধায়করা বসে মুখ্যমন্ত্রী ঠিক করবেন বলে বিজেপি জানিয়েছে৷ তাই সি-ভোটাররের সমীক্ষায় কেজরিওয়ালের বিপক্ষে একজন বিজেপি-মুখ্যমন্ত্রী রাখা সম্ভব হয়নি৷ সমীক্ষায় রাখা হয় ৪ বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী- পদপ্রার্থীকে৷ তা, দিল্লির ভোটাররা কী বললেন ? যেখানে কেজরিকে ৭০% মানুষ মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে চাইছেন, সেখানে বিজেপি’র ডাঃ হর্ষ বর্ধনকে চাইছেন ১০.৭% মানুষ, বিজয় গোয়েলকে চাইছেন ১.১% মানুষ, দিল্লি বিজেপির সভাপতি মনোজ তেওয়ারিকে মুখ্যমন্ত্রী পদে দেখতে চাইছেন ১% মানুষ, বিজেন্দ্র গুপ্তাকে ০.৪% মানুষ৷
‘সি-ভোটার’-এর ‘Vote Share Projection’- এর সমীক্ষায় বলা হয়েছে, আপ যেখানে ৫৩.৩% ভোট পেতে চলেছে, সেখানে বিজেপির প্রাপ্তি ২৫.৯% ভোট৷

এতো গেলো এক মাস আগের জনমত সমীক্ষা৷ মাঝের এক মাসে যমুনা দিয়ে কয়েক হাজার গ্যালন জল গড়িয়েছে৷ মোদি এবং শাহ চোখা চোখা শব্দ ব্যবহার করে আপ ও কেজরিকে বিঁধেছেন এই সময়সীমায়৷ তার পর, গত সোমবার, ‘টাইমস-নাও’-এর জনমত সমীক্ষার প্রকাশিত হয়েছে৷ কী বলেছে সেই সমীক্ষা ? মোদি-শাহের অক্লান্ত পরিশ্রমে বিজেপি কতখানি এগোতে পারলো? ‘টাইমস নাও’ -এর Vote Share Projection’ বলছে, আপ যেখানে ৫২%, বিজেপি সেখানে কিছুটা উন্নতি করে দাঁড়িয়েছে ৩৪%-এ৷ যে গতিতে বিজেপি এগিয়েছে, দিল্লির ভোট যদি ফেব্রুয়ারি-র ৮ তারিখ না হয়ে মার্চ বা এপ্রিলের ৮ তারিখে হতো, তাহলে হয়তো বিজেপি আরও এগিয়ে ছুঁয়ে ফেলতে বা অতিক্রম করতে পারতো আপ-কে৷ জানি না শেষ মুহুর্তে ‘জাতীয় স্বার্থে’ ভোট পিছানো সম্ভব কি’না৷

বিজেপি এসব দেখে হতাশায় ডুবছে৷ ২০১৫ সালে মোদির প্রধানমন্ত্রিত্ব কালেই দিল্লির বিগত বিধানসভা ভোটে মোট ৭০ আসনের ৬৭টিতে জিতেছিলো আম আদমি পার্টি৷ বিজেপি পায় ৩ আসন৷
এরপর ২০২০-তেও দিল্লিতে সেই মোদি-ই৷ ভোট হবে দিল্লির৷ এবারও যদি দিল্লি-দখল না হয়, তাহলে আর কবে হবে ?

তাই ঝাঁপিয়েই চলেছে মোদি-শাহ-নাড্ডার বিজেপি৷ ফেব্রুয়ারির ৮ তারিখ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন। নির্বাচনী প্রচার শেষ হবে ৬ তারিখ৷ একেবারে ‘বিশ্বযুদ্ধকালীন’ পরিস্থিতিতে অনেকটা ‘হাল্লা চলেছে যুদ্ধে’-র মেজাজে বিজেপি মঙ্গলবার স্থির করেছে, প্রচারের শেষলগ্নে
দলের ২৪০ জন সাংসদ একযোগে দিল্লির বস্তিতে গিয়ে থাকবেন এবং সময় কাটাবেন সেখানকার মানুষদের সঙ্গে৷ সংখ্যাটা আর একবার শুনুন, ২৪০ জন৷ রাজধানীতে ক্ষমতা করায়ত্ত করতে এবার পিছিয়ে থাকা এলাকায় প্রচার চালাবে বিজেপি।
মঙ্গলবার ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি জে পি নাড্ডা সংসদীয় বৈঠকে এমন ঘোষণাই করেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে৷
২৪০ জন গেরুয়া- সাংসদ শেষ ৩ দিনের প্রচারে যেখানে সময় কাটাবেন, সেই এলাকাগুলি মূলত দরিদ্র-প্রধান, এমনটাই জানিয়েছেন সভাপতি নাড্ডা।
ঘটনাচক্রে, সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর এদিনই প্রথমবার দলীয় বৈঠক সারলেন নাড্ডা। আর প্রথমদিনেই এই মহাযুদ্ধের ঘোষনা৷
