কলকাতায় কত আসন হবে? ধন্দে বিজেপি, কণাদ দাশগুপ্তের কলম

কণাদ দাশগুপ্ত

এই মুহুর্তে কলকাতা পুরসভার নির্বাচন হলে বিজেপি ২০-২৫টির বেশি আসন পাবে না৷ নানা তথ্য ঘেঁটে এবং কলকাতায় দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এনে এমন ধারনাই তৈরি হয়েছে বঙ্গ-বিজেপি’র অন্দরে৷

পুরভোটের মাসদুয়েকও বাকি নেই৷ তার আগেই এই ‘উপলব্ধি’-তে নিশ্চিতভাবেই উদ্বেগ বেড়েছে বঙ্গের গেরুয়া শিবিরে৷ বিজেপি-নেতৃত্ব জানে রাজ্যের অন্যান্য জেলার তুলনায় কলকাতায় দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা অনেক বেশি৷ স্রেফ কলকাতা বলে দলের এই ছন্নছাড়া অবস্থা ঢাকা পড়ে আছে৷ দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়মিত আনাগোনা, রাজ্য নেতাদের কর্মব্যস্ততা, দলের সদর দফতর, কলকাতায় সভা-সমাবেশ এবং সংবাদমাধ্যমে কলকাতা-কেন্দ্রিক প্রচারের দৌলতেই বার বার উৎরে যাচ্ছে দল৷ কিন্তু এ সব যুক্তিতে যে ভোট হয়না, তা মানছেন রাজ্য নেতারা৷ পুরসভা ‘দখল’ করতে কলকাতার নেতাদের যতখানি তৎপরতা বা কর্মদক্ষতা দরকার ছিলো, তার সিকিভাগও নেই বলে বদ্ধমূল ধারনা গেরুয়া-শিবিরের৷ গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেছিলেন নেতারা৷ ছিলেন বিজেপি নেতা শিবপ্রকাশ, দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, রাহুল সিনহা ও সুব্রত চট্টোপাধ্যায়রা। পুরভোটে কলকাতায় রণকৌশল স্থির করতে মূলত বৈঠকটি ডাকা হলেও, শেষ হয়েছে একরাশ হতাশার মধ্যেই৷
কলকাতায় দলের এই বেহাল পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বসে একাধিক ফাঁক সামনে এসেছে –

◾কলকাতায় বিজেপি’র গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সব চেয়ে বেশি। তাই সাংগঠনিক শক্তিবৃদ্ধি হয়েছে কম। CAA- এর প্রচারেই রাজ্য কমিটি এর প্রমাণ পেয়েছে। দলের
হাল এতটাই বেহাল
যে, রাজ্য কমিটি এবার কলকাতার ৪ জেলায় সাংগঠনিক নির্বাচন পর্যন্ত করতে পারেনি।

◾ জেলায় জেলায় দলের সাংসদ-বিধায়ক- রাজ্য নেতাদের সংখ্যা এবং পারফরম্যান্স তুলনায় সন্তোষজনক হলেও কলকাতার তেমন কোনও মুখ-ই নেই৷

◼সাংগঠনিকভাবে কলকাতা ৪টি সাংগঠনিক জেলায় বিভক্ত৷ এই ৪ জেলার পদাধিকারীদের কেউ চেনে না৷

◾কলকাতার পদাধিকারীরা নিজেরাও কর্মসূচির মাধ্যমে নিজেদের পরিচিতি গড়ে তুলতে আগ্রহী নন৷

◾রাজ্যস্তরের যে সব নেতা কলকাতা পুর এলাকার বাসিন্দা, তাঁরা কেউই নিজেদের জেলাকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেননি৷

◾ কলকাতায় সামনে রাখার মতো একটি মুখও নেই৷ কলকাতার ভোটার,
রাজ্যের এমন শীর্ষ নেতারা কলকাতা পুরভোটে প্রার্থী হতে নারাজ৷ হেরে যাওয়ার ভয়েই তাঁরা প্রার্থী হতে চাইছেন না৷ পুরভোটে হারলে একুশের বিধানসভা ভোটে দলের টিকিট না-ও পেতে পারেন, এমন আশঙ্কাতেই কাউন্সিলর ভোট তাঁরা এড়িয়ে যাচ্ছেন৷

◾কলকাতায় দলের অবস্থা কতখানি খারাপ, তা ধরা পড়েছে CAA-র সমর্থনে দলের কর্মসূচি ঘিরে৷ CAA-র সমর্থনে দিল্লি-বিজেপির নির্দেশে গোটা দেশেই বিভিন্ন ধরনের প্রচার অভিযান চালাচ্ছে বিজেপি। সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে CAA-র সমর্থনে লিফলেট বিলি, CAA-র সমর্থনে মিছিল-মিটিং এবং একটি নির্দিষ্ট টোল ফ্রি নম্বরে সাধারণ মানুষকে দিয়ে ওই আইনের সমর্থনে যত বেশি সম্ভব মিস্‌ড কল করানো, এটাই দিল্লির নির্দেশ৷ কিন্তু বঙ্গ- বিজেপি নেতৃত্ব হতাশ, CAA-র সমর্থনে কলকাতা থেকে মিস্‌ড কল এসেছে খুবই কম। তুলনায় জেলাগুলি থেকে ‘মিস্‌ড কল সমর্থন’ অনেক বেশি পেয়েছে বিজেপি। কলকাতায় CAA-র সমর্থনে মিছিল-মিটিং-ও সেভাবে হয়নি৷

◾এই ব্যর্থতার কারনও একাধিক :
এক) পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কলকাতায় দলের সংগঠন ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করতেও ব্যর্থ হয়েছেন কলকাতার ৪ সাংগঠনিক জেলার নেতারা৷

দুই) এই ব্যর্থতা কতখানি অযোগ্যতা-জনিত, আর কতখানিই বা পরিকল্পিত, তা স্পষ্ট নয়৷

তিন) বিজেপির কলকাতা জেলার অধিকাংশ নেতার সঙ্গে স্থানীয়ভাবে তৃণমূল নেতা, বিধায়ক, কাউন্সিলরদের সম্পর্ক মধুর৷ কারন, এই ‘নেতা’- দের বেশিরভাগই কিছুদিন আগেও তৃণমূলের কর্মী- সমর্থক ছিলেন৷ ফলে এদের অনেকেই নিজেদের এলাকায় বিজেপির পতাকা নিয়ে ‘আন্দোলন’ করে তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে নারাজ৷

রাজনৈতিক মহলের ধারনা, লোকসভা নির্বাচনে ৫০-৫৫ ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিলো বলে এখনও আত্মতুষ্ট মনোভাব কাটছেনা গেরুয়া নেতাদের৷ এমন একটা ভাব দেখানো হচ্ছে যেন, ৫০ কাউন্সিলর হয়েই গিয়েছে, আর গোটা ৩০ হলেই কলকাতায় উড়বে গেরুয়া পতাকা৷ লোকসভা ভোটে একজন নরেন্দ্র মোদিকে যারা ভোট দিয়েছেন, পুরভোটে পাড়াস্তরের লোকাল ‘মোদিজি’-দের যে তারা ভোট দেবেনই, এই নিশ্চয়তা বিজেপি কোথা থেকে পাচ্ছে?

সব মিলিয়ে রাজ্য নেতারা মোটামুটি নিশ্চিত, এখনই কলকাতা পুরসভার ভোট হলে বিজেপি ২০-২৫টির বেশি আসন পাওয়া খুব কঠিন৷

তবে বিজেপি ‘আশাবাদী’, প্রশান্ত কিশোরের ফরমূলায় তৃণমূলের যে সব কাউন্সিলররা টিকিট পাবেন না, তাঁরা সবাই-ই এবার বিজেপি’র প্রাথী হবেন৷ সেটাই হবে আসল চমক৷

আরও পড়ুন-শাহিনবাগের ধরনাস্থল আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের কারখানা! কী বললেন মন্ত্রী?

Previous articleশাহিনবাগের ধরনাস্থল আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের কারখানা! কী বললেন মন্ত্রী?
Next articleআমার মুখ খোলাবেন না! মোদি হুমকি দিতেই চুপষে বসে পড়লেন সৌগত