Monday, November 24, 2025

তাঁর কীর্তির মূল্যায়ন করতে দেওয়া হয়নি,কণাদ দাশগুপ্তের কলম

Date:

Share post:

কণাদ দাশগুপ্ত

বাংলা ছবির স্বঘোষিত ভগীরথ-বাহিনী এবং বাংলার তথাকথিত সিনেমা-বোদ্ধারা করুনাযোগ্য৷ এদের বোধ-বুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় এবং খুব সহজে এদের নিজের দিকে টেনেও আনা যায়৷

অভিনেতা তাপস পালের একাধিকবার জাতীয় পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল, অথচ বাংলা ছবির দুনিয়া তাঁর সঠিক কীর্তির পরিমাপটুকু পর্যন্ত করেনি৷
এই ‘না করা’-র কারন খুঁজতে বসলে একটি চক্রের পরিকল্পিত হাতযশের কথা-ই প্রকাশ্যে চলে আসবে৷ সবাই সব জানেন, কিন্ত শেষ পারানির কড়ি-তে পাছে টান পড়ে, তাই নীরবতাকেই বেছে নিয়েছিলেন ওই বোদ্ধা-বাহিনী৷

বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তমকুমার-পরবর্তী যুগের উজ্বল নক্ষত্র এই তাপস পাল। মাত্র ২২ বছর বয়সে তাপস পাল করেছিলেন প্রথম ছবি ‘দাদার কীর্তি’। বাংলা ছবির জগতের মাইলস্টোন দাদার কীর্তির “কেদার”। প্রথম ছবিই বুঝিয়ে দেয় এক প্রকৃত অভিনেতা বাংলা ছবিকে শাসন করতে ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেছেন৷ আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাপস পালকে। এই সিঁদুরে মেঘেই ভীত হয়ে পড়েন অনেকে৷ কার্যত সেদিন থেকেই শুরু হয় ‘ব্যাক-বাইটিং’৷ আর সে কাজে এরা পাশে পেয়েও যায় একদল তোতাপাখি গোত্রের স্তাবক-বোদ্ধাকে৷

তাপস পাল বললেই ইদানিং রাজনৈতিক মঞ্চে বলা তাঁর একটি বিশেষ উক্তি এবং অর্থলগ্নি সংস্থা সম্পর্কিত কিছু অভিযোগকে অগ্রাধিকার দেওয়াই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছিলো৷ এই অভিযোগগুলিকে ঢাল করে অনেকেই আত্মতুষ্ট ছিলেন৷ একবারের জন্যও উচ্চারণ করেননি, স্বীকার করেননি যে, তাপস পালের মতো ভার্সেটাইল অভিনেতা বাংলা ছবির দুনিয়ায় হাতে গোনা৷ কিন্তু সেই বাংলা সিনেমাই তাপস পালকে ন্যূনতম সম্মানটুকুও দেয়নি৷ বোদ্ধা-রা ভগীরথ-শিবিরে চতুর্থ শ্রেণির নাগরিক হয়েই কাটিয়ে দিলেন৷
তাপস পালের অভিনয়ের যথার্থ মূল্যায়ণ না করা ক্ষমাহীন অপরাধ৷ এই অপরাধের বিচার হওয়া প্রয়োজন ৷

তাপস পাল প্রয়াত হয়েছেন৷ একাধিক জাতীয় পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিলো বাংলা ছবির যে অভিনেতার, তিনি বিদায় নিলেন চরম অবহেলাকে সঙ্গী করে৷
ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, রাজনৈতিক চরিত্র হিসাবে নয়, তাঁকে উচ্চস্তরের এক অভিনেতা হিসাবেই মনে রাখবে বাংলার মানুষ৷
বাংলা ছবির দুনিয়ায় তাঁর সঠিক কীর্তির মূল্যায়ন হয়নি৷ হয়নি না বলে, মূল্যায়ন করতেই দেওয়া হয়নি বলা শ্রেয়৷ বাংলা ছবির ভাণ্ডারে তাপস পাল যেসব কীর্তি সঞ্চিত করেছেন, শুধুমাত্র সেই কারনেই তিনি অমর থাকবেন৷ বাংলা সিনেমার সফল বাণিজ্যিক-হিরো হিসাবে চিহ্নিত হলেও তাপস পাল অভিনয় দক্ষতার ছাপও রেখেছেন বহু ছবিতে। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত পরিচালিত ‘উত্তরা’ এবং ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’ যারা দেখেছেন, তাঁরা আজ কিছু অন্তত বলুন ৷

ফের বলছি,তাপস পালের কাজের দাম দিতেই পারেনি বাংলা চলচ্চিত্র জগত। বাংলা সিনেমা জগত ক্ষমাহীন অপরাধ করেছে৷ এজন্য কি অভিমান ছিলো তাপস পালের ?

সে কারনেই কী বাংলা থেকে বহুদূরের এক শহরে গিয়ে যাত্রা থামালেন তাপস পাল ?

spot_img

Related articles

অনুসন্ধান: পরিবারিক ছবির সাফল্যের পরে প্রথম থ্রিলারেই বাজিমাৎ সম্রাজ্ঞীর

পর পর মহিলা কেন্দ্রিক পরিবারিক ছবির পরে প্রথম থ্রিলার সিরিজের চিত্রনাট্যেই বাজিমাৎ করলেন সম্রাজ্ঞী বন্দ্যোপাধ্যায় (Samragyee Banerjee)। হইচই...

মেডিক্যাল কলেজে কেন অধিকাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের: শিক্ষাঙ্গনে বিজেপির গেরুয়া রঙ!

বৈষ্ণোদেবী মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসের ৫০টি আসনের মধ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের ৪২ জন পড়ুয়া ভর্তি হয়েছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, সম্পূর্ণ...

টেলিসম্মানের পুরস্কার মূল্য ক্যান্সার আক্রান্তদের দান চন্দনের, ধন্যবাদ জানালেন মুখ্যমন্ত্রীকে

বাংলা টেলিভিশন জগতের (Bengali Television Industry) অন্যতম বড় সম্মান টেলি অ্যাকাডেমী পুরস্কার (Tele Academy Award) থেকে প্রাপ্ত অর্থ...

প্রধান বিচারপতি হিসাবে শপথ সূর্য কান্তর: তিন প্রত্যাশায় শুভেচ্ছা মুখ্যমন্ত্রীর

ভারতের প্রধান বিচারপতি হিসাবে সোমবার শপথ গ্রহণ করলেন বিচারপতি সূর্য কান্ত (Justice Surya Kant)। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর (President...