Actor killed by politics. তাপস পালকে নিয়ে কুণাল ঘোষের কলম

কুণাল ঘোষ

তাপসদা,

চিরশান্তিতে থেকো। খুব মিস্ করব।
উত্তমকুমার পরবর্তী বাংলা ছবির শ্রেষ্ঠ রোমান্টিক নায়ক ছিলে তুমি, এ নিয়ে কোনো কথা হবে না। “দাদার কীর্তি” আর কেউ পারত না, যা দিয়ে তোমার ইনিংস শুরু। তারপর তুমি হয়ে উঠেছ অন্যতম সেরা অভিনেতা। অল রাউন্ডার। লবিবাজির টলিউড তোমাকে পুরো ব্যবহার করতে পারে নি। তুমিই ছিলে মাধুরী দীক্ষিতের প্রথম ছবি “অবোধ” এর নায়ক। ইচ্ছে করলে বম্বেতে সময় দিতে পারতে, দাওনি, থেকেছো কলকাতাতেই।

যখন কোনো তারকা তৃণমূলে নাম লেখাচ্ছে না, সেই যুগ থেকে তুমি মমতাদির সঙ্গে। তখন যারা তোমায় কটাক্ষ করত, কোণঠাসা করত, তারাই পরে দেখেছি মমতাদি বসার আগে নিজের রুমাল দিয়ে চেয়ার সাফ করছে। তোমার আনুগত্য প্রশ্নাতীত।

20 সেপ্টেম্বর 2013, সোমেনদার একটি রক্তদান শিবির থেকে তুমি, শতাব্দী, আমি কিছু ক্ষোভের কথা জানিয়েছিলাম; তাতে তুমুল বিতর্ক বাড়ে। সে প্রসঙ্গ আজ নয়। তবে, সেই সূত্রেই আমরা পরস্পরের কষ্টটা জানতাম।

তুমি বিধায়ক হিসেবে বিধানসভায় গেছো নিয়মিত। লোকসভাতে উপস্থিত থেকেছো দারুণভাবে। হাসিমুখে তোমার সংসদে ঘোরা, ভালোবাসতো সবাই।

তোমার সঙ্গে আড্ডা অসাধারণ। অপূর্ব তোমার মানসিকতা। মা যতদিন বেঁচেছিলেন, ততদিন ফোনে প্রথমেই “মাসিমা কেমন আছেন” বলাটা তোমার বাদ যায় নি। অফিসে, আমার বাড়িতে, দিল্লিতে কত নিঃস্বার্থ নিঃশর্ত গল্প, স্মৃতিগুলো চোখে ভাসছে। কত ঘটনা, সেসব আজ এই মুহূর্তে লেখার নয়, তবে লিখব হয়ত পরে কখনও।

তুমি একাধিক বিতর্কে ঘটনাচক্রে জড়িয়েছিলে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি তাপস পাল একটা নির্ভেজাল ভালো মানুষ। বাইরে থেকে বোঝা যাবে না। মন থেকে ভালো তুমি। রোজ ভ্যালির ঘটনাটি তুমি জেনে কতটা করেছ আর কতটা পাকেচক্রে জড়িয়েছো, আমার সন্দেহ আছে। আর জনসভায় ঐ বিতর্কিত সংলাপটি তুমি বলেছো স্রেফ তোমার ফিল্মি ব্যাকগ্রাউন্ডের জন্য, হাততালি কুড়োতে, অতটা ভাব নি, এই আফশোসে নিজে জ্বলেপুড়ে মরেছো শেষদিন পর্যন্ত।

তুমি লবি করে তেল দিয়ে সময় নষ্ট করো নি। নিজের মত ছিলে। মনের অশান্তি ঢাকতে একটু ভালোবাসা খুঁজে বেড়িয়েছো। শেষদিকে একাধিক অভিমানে ছিলে জর্জরিত।

তুমি অসুস্থ ছিলে বেশ কিছুদিন। তবু লড়াই চলছিল। এইভাবে চলে যাবে, ভাবতে পারছি না। এই তো কিছুকাল আগেও এক মঞ্চে দেখা, কত কথা। মাইক হাতে প্রকাশ্যে তুমি এমনভাবে আমার সম্পর্কে বললে, একেবারে যেন নিজের বড় দাদা।

তাপসদা, তুমি তোমার মত ছিলে। সাদা মন, সাদা মুখ। শেষদিকের বিতর্কগুলো তোমাকে কষ্ট দিয়েছে।

কিন্তু তুমি নিশ্চিন্ত থাকো, তাপস পাল থাকবে তাপস পালই। একসময়ের রাজা, পরবর্তীকালে জীবনপথের ভুলভুলাইয়ায় সন্ন্যাসী রাজা !

নন্দিনীদি, সোহিনীকে গভীর সমবেদনা জানাই। শতাব্দীও ওর বন্ধুকে খুব মিস্ করবে, জানি।

তাপসদা, অসময়ে গেলে। আফশোস নিয়ে গেলে। অভিমান নিয়ে গেলে। যেখানেই থাকো, খুব ভালো থেকো।

উজ্জ্বলতম তারকা, অহংহীন, ছেলেমানুষি মনখোলা আড্ডার দাদা ছিলে তুমি।
তোমাকে ভুলব না।
আর বাংলা ছবিও মনে রাখবে, তাপস পালকে।

Previous articleবাংলা চলচ্চিত্রে এক নক্ষত্রের পতন, চলে গেলেন তাপস পাল
Next articleতাপস পালের প্রয়াণে শোকবার্তা মুখ্যমন্ত্রীর