রাজ্যসভায় প্রায় নিশ্চিত বলেই বামেদের মেয়র পদে আগ্রহ হারিয়েছেন বিকাশ

২০১৭ সালে রাজ্যসভা নির্বাচনের আগে মনোয়ন পর্বে এক নজিরবিহীন ঘটনার সাক্ষী থেকে ছিল পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা। যার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন বামফ্রন্টের (সিপিএমের) আইনজীবী নেতা তথা কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য। সেবার রাজ্যসভার ষষ্ঠ আসনের নির্বাচন ঘিরে ছিল যাবতীয় কৌতুহল তৈরি হয়েছিল। দিশাহীন অবস্থায় বামপ্রার্থী মনোনীত হয়েছিলেন বিকাশ ভট্টাচার্য। কিন্তু তাঁর মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়।

সেবার তাঁর বা বামেদের জয় নিয়ে সংশয় থাকলেও এবার অবশ্য পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা। রাজ্যে বাম-কংগ্রেস সমঝোতা আগের চেয়ে অনেক সঙ্ঘবদ্ধ। যেহেতু, বাংলা থেকে রাজ্যসভায় কংগ্রেসের দু’জন সাংসদ আছেন, সেক্ষেত্রে কংগ্রেস বামেদের এই আসন ছাড়তে আগ্রহী।
আর তার ফলেই রাজ্যসভায় যাওয়ার জোরালো দাবিদার বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।

বিকাশবাবু নিজেও বেশ আগ্রহী বলে ঘনিষ্ঠ মহলে স্বীকার করে নিয়েছেন। রাজ্যসভার প্রার্থী হিসেবে তিনি পারফেক্ট চয়েস হলেও বাম তথা সিপিএমের অন্দরে একটা লবি কাজ করছে। আর সে কারণেই দলের অন্দর মহল থেকে একাংশ তাঁর নাম কলকাতা পুরভোটে বামেদের মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে ভাসিয়ে দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেটা অবশ্য নাকচ করে দিয়েছেন বিকাশবাবু। কারণ তাঁর মতো বিচক্ষণ ব্যক্তি ভালো করেই জানেন, বামেদের মেয়র পদপ্রার্থী হয়তো হওয়া যাবে, কিন্তু মেয়র হওয়া যাবে না। দলকেও সম্ভবত সেটা বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।

তাছাড়া বঙ্গের বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে থেকে যে নামগুলি ভেসে আসছে, সেখানে বিকাশ ভট্টাচার্য একমাত্র, যাঁকে কংগ্রেস বা বামেদের শরিক দলগুলিও সমর্থন করছে বলে জানা গিয়েছে। কংগ্রেসের সোমেন মিত্র-প্রদীপ ভট্টাচার্য-অধীর চৌধুরীদের বিকাশবাবুকে নিয়ে আপত্তি নেই। আবার আব্দুল মান্নানের মনে একটা সুপ্ত বাসনা থাকলেও তাঁর বা দীপা দাশমুন্সির বিকাশে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু সেলিম আছে প্রবল আপত্তি।

এদিকে প্রকাশ কারাত লবি আগেরবারের মতো এবারও সীতারামকে নাকচ করেছে। আবার কংগ্রেসের মতো সেলিমেও তাদের আগ্রহ নেই। ফলে আলিমুদ্দিনের তৃতীয় নাম বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য নিয়ে তারা আর টেফোঁ করবে না বলেই খবর। ফলে সর্বসম্মতিক্রমে বিকাশবাবুর এবার রাজ্যসভায় যাওয়া কার্যত নিশ্চিত বলেই মনে করা হচ্ছে।

তাছাড়া প্রার্থী নিয়ে টালবাহানা করতে গিয়ে দু’বছর আগের যে ভুল করেছিল বা কৌশল বামেরা নিয়েছিল, এবার কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে জয় নিশ্চিত হওয়ায় খুব বেশি দেরি করতে চাইছে না তারা। ১৩ মার্চ দুপু তিনটে মনোনয়ন জমা করার ডেড লাইন। এবার সম্ভবত পুরনো বিতর্কে জল ঢালতে এবং বাম-কংগ্রেস জোট বার্তা জোরালো করতে অনেক আগেই সেই বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যকে বিধানসভায় নিয়ে গিয়ে মনোনয়ন জমা দেবে বামেরা।

এখনও পর্যন্ত যা খবর, বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য-এর সঙ্গে
মনোনয়ন পর্বে বামেদের পক্ষে থাকবেন সেই জুটি অৰ্থাৎ সুজন চক্রবর্তী ও রবীন দেব। এবং কংগ্রেসের পক্ষে থাকতে পারেন আব্দুল মান্নান-মনোজ চক্রবর্তী। তবে না আঁচালে বিশ্বাস নেই।

এবার দেখে নেওয়া যাক, গতবার রাজ্যসভা নির্বাচনের আগে বাম প্রার্থী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের মনোনয়ন পর্বে ঠিক কী নাটকীয় ঘটনা ঘটেছিল। সেবার বামপন্থী প্রার্থী বিকাশবাবু অসম্পূর্ণ মনোনয়ন জমা দেন। পাশাপাশি তিনি একেবারে শেষ মুহূর্তে বিধানসভায় যান। বিকাশের মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় কোনও বামপন্থী প্রার্থীর ক্ষেত্রে এধরনের ঘটনা বেনজির ঘটনা দেখেছিল বিধানসভা। প্রশ্ন উঠেছিল, বিকাশবাবু একজন দুঁদে আইনজীবী হয়েও কীভাবে টেকনিক্যাল ফাঁদে পড়লেন? নাকি হার অনিবার্য বুঝতে পেরেই লড়াই থেকে সরে দাঁড়ানোর পন্থা হিসেবে এমনটা করেছিলেন। অথবা, পলিটব্যুরোকে বার্তা দিতে ইচ্ছাকৃতভাবে মনোনয়ন বাতিল করে কংগ্রেসকে সমর্থন। আলিমুদ্দিনের এই কৌশল নিয়ে তখন শুরু হয়েছিল ব্যাপক কাটাছেঁড়া। সেবারও সীতারাম ইয়েচুরিকে প্রার্থী না করায় ক্ষুব্ধ ছিল বেঙ্গল লাইন। পলিটব্যুরোকে বার্তা দিতে আলিমুদ্দিন কি ইচ্ছাকৃতভাবে বিকাশের মনোনয়নে ভুল করল? এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য এখনও খুঁজে পায়নি রাজনৈতিক মহল।

বিকাশের মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় সেবার আর ভোটাভুটির প্রয়োজন হয়নি। বিনা লড়াইয়ে পাঁচ তৃণমূল ও এক কংগ্রেস প্রার্থী জিতে গিয়েছিল। সেবারও কংগ্রেসের সঙ্গে কথা চালিয়ে গিয়েও প্রার্থী ঠিক করা যায়নি। শেষবেলায় কোনওরকমে বিকাশ ভট্টাচার্যর নাম ঘোষণা করে বামফ্রন্ট। রাজ্যসভার ষষ্ঠ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় শুরু থেকেই বামপন্থীদের গা ছাড়া ভাব দেখা গিয়েছিল। এবার অবশ্য তা নয়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এবার বাংলা থেকে পঞ্চম প্রতিনিধি হিসেবে সংসদের উচ্চকক্ষে যাচ্ছেন বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য।

Previous articleফের করোনার থাবা ভারতের অর্থনীতিতে, ১৭০০ পয়েন্ট পড়ল সেনসেক্স
Next articleবেহালায় দোল উৎসবে মাতলেন তৃণমূলের অলিখিত “বিধায়ক” রত্না