স্টেজ থ্রি’ সংক্রমণের আশঙ্কা দেখা দিলে রাজ্যে প্রয়োজনে ‘Local Lockdown’

এ রাজ্যের করোনা- পরিস্থিতি দেশের অন্যান্য অংশের তুলনায় স্বস্তিদায়ক৷ তবুও গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হলে নির্দিষ্ট এলাকা বা পাড়াকে বাকি অংশের থেকে বিচ্ছিন্ন করার বা Local Lockdown- এর মতো কঠিন সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে।

করোনা সংক্রমণে ভারত এখন ‘স্টেজ টু’-তে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, বর্তমানে বিশ্বের যে সমস্ত দেশে ওই মারণ ভাইরাস থাবা বসিয়েছে সেই তালিকায় “স্টেজ টু”-তে রয়েছে ভারত। দ্বিতীয় পর্যায় মানে এই পরিস্থিতিতে ভাইরাসটি কোথা থেকে ছড়াচ্ছে সে সম্বন্ধে একটি ধারণা পাওয়া গিয়েছে৷ তার ফলে, করোনা’র সঙ্গে লড়াই করা অনেকটা সহজ হয়েছে৷ এই মূহুর্তে ভারতে করোনাভাইরাসের কোনও কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা গোষ্ঠী- সংক্রমণ নেই। WHO বলেছে, ভারত এখন ২য় পর্যায়ে আছে। তৃতীয় পর্যায়ই হচ্ছে ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’ বা গোষ্ঠী- সংক্রমণ৷ এর অর্থ, কোনও একটি বিশেষ গোষ্ঠী থেকে ওই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। এটা মারাত্মক৷ প্রশাসন আন্তর্জাতিক সীমান্তগুলিতে কতখানি নজর রাখতে পারছে বা সেখান থেকে বহিরাগতদের দেশে প্রবেশ রুখতে পারছে, তার উপরেও নির্ভর করছে অনেক কিছু। তবে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এই বিষয়ে সরকার অত্যন্ত সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এটা বলা অসম্ভব যে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা গোষ্ঠী- সংক্রমণ ঘটবে না৷

‘স্টেজ থ্রি’ সংক্রমণ মানে যখন এই রোগ কোনও গোষ্ঠীগত ভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং বৃহত্তর অঞ্চলের মানুষ সংক্রামিত হয়। গোষ্ঠী সংক্রমণ তখনই হয় যখন কোনও রোগী কোনও সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসা সত্ত্বেও অথবা আক্রান্ত দেশগুলির মধ্যে কোনও একটি দেশে সফর না করা সত্ত্বেও তাঁর শরীরে ওই রোগের সংক্রমণ ঘটেছে। এই পর্যায়ে, আক্রান্তদের শরীরে কোথা থেকে এই ভাইরাস এসেছে তা সনাক্ত করা সম্ভব হয় না। যেমন, ইতালি এবং স্পেন রয়েছে স্টেজ থ্রিতে।
নানা কারনেই তাই গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা। এমনকী, করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রুখতে স্থানীয় স্তরে লকডাউনের আগাম সিদ্ধান্তও নিয়ে নিয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রশাসন। অর্থাৎ ‘আক্রান্ত’ পাড়া কিংবা এলাকা থেকে কেউ বেরোতেও পারবেন না এবং প্রশাসনের নির্দিষ্ট কয়েক জন বাদে সেখানে কেউ ঢুকতেও পারবেন না। দরকার হলে সেই এলাকায় বন্ধ থাকবে গণপরিবহণও। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন এ কথা। তিনি বলেছেন, ” ঠিক এখনই আমরা গোষ্ঠী সংক্রমণ নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত নই বটে, তবে সাবধানের মার নেই। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, গোষ্ঠী সংক্রমণ যে কোনও ভাবে ঠেকাতেই হবে । করোনার প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ার পরের টানা ৬৭ দিন আমরা করোনা-মুক্ত ছিলাম৷ টানা নজরদারিতে তা সম্ভব হয়েছে৷ সে ভাবেই গোষ্ঠী সংক্রমণ আটকাতে নজরদারিতেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। তবুও যদি কোনও এলাকা থেকে গোষ্ঠী সংক্রমণের খবর আসে, তখন দ্রুত তার চারপাশে যাতে ‘লোকাল লকডাউন’ করা যায়, প্রশাসনিক স্তরে সে প্রস্তুতি আমরা সেরে ফেলেছি। প্রয়োজনে সেনা, পুলিশ সব ব্যবহার করা হবে।’ সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেছেন, যখন যে এলাকায় লক-ডাউন প্রয়োজন হবে, তখন সেই এলাকার মানুষকে এলাকাবন্দি রেখেও কী ভাবে তাঁদের দৈনন্দিন জীবনযাপন স্বাভাবিক রাখা যায়, সে চেষ্টা থাকবে। গত সোমবার যে মহামারী আইন কার্যকর করার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্য সরকার, তাতে এই Local Lock down- এর উল্লেখ আছে৷

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, গোষ্ঠী সংক্রমণ ঠেকানোর সবচেয়ে বড় দু’টি উপায় হল সোশ্যাল আইসোলেশন এবং পাকাপোক্ত কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং। সোশ্যাল আইসোলেশন কেন, তা যত ভালো ভাবে জনতার কাছে তুলে ধরা যাবে, গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখে দেওয়ার সম্ভাবনা ততই বাড়বে। সাধারন মানুষকে বলা হবে, ভিড় থেকে নিজেকে দূরে রাখা এবং একান্ত প্রয়োজন ছাড়া আক্রান্ত, সন্দেহভাজন এবং অপরিচিত ব্যক্তির সংস্পর্শ এড়াতে হবে৷
রাজ্যের জনস্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, এ রাজ্য ঘন বসতিপূর্ণ৷ এখানে গোষ্ঠী সংক্রমণ ঠেকানোই বড় ও কঠিন চ্যালেঞ্জ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO ও স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্দেশিকার সঙ্গেই সিঙ্গাপুর, হংকং এমনকী, কেরালা ‘মডেল’ থেকে শিক্ষা নিয়ে পদক্ষেপ করতে চাইছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। প্রাথমিক ভাবে সচেতনতা প্রচার, সরকারি হাসপাতালে ভিজিটিং আওয়ার্সে পরিজনের আসা-যাওয়ার উপর নজরদারি এবং সাধারণ মানুষকে সংক্রমণের নাগালের বাইরে নিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ডে আক্রান্তদের চিকিৎসার বন্দোবস্ত করার দিকেই নজর দেওয়া হচ্ছে এ রাজ্যে। সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে আইসোলেশন, কোয়ারান্টিন সম্পর্কে ভয়, সংশয় কাটিয়ে তাঁদের সোশ্যাল আইসোলেশনে থাকার জন্যই উদ্বুদ্ধ করতে চাইছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। তার জন্য খুব শিগগির বিজ্ঞাপনও দেওয়া হবে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। স্বাস্থ্যভবনে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ নিয়ে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ প্রাথমিক ভাবে ইনফ্লুয়েঞ্জার উপসর্গ নিয়ে আউটডোরে আসা রোগীদের পৃথক স্ক্রিনিয়ের ব্যবস্থা করা, সম্ভাব্য ও সন্দেহভাজন কিংবা নিশ্চিত করোনা রোগীর চিকিৎসায় মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখা এবং প্রয়োজনীয় ভেন্টিলেটর মজুত রাখার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয় সেখানে।

করোনার বিরুদ্ধে আপাতত এমনই রণকৌশল রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের৷
_____

[ এই প্রতিবেদনে শুধুমাত্র সাধারণ তথ্য দেওয়া হয়েছে৷ এ বিষয়ে আরও কিছু জানার থাকলে কোনও বিশেষজ্ঞ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত৷ ‘এখন বিশ্ব বাংলা সংবাদ’ কখনই বিশেষজ্ঞ- পরামর্শ দেওয়ার অধিকারী নয় ]

Previous articleইতালি যেন মৃত্যুপুরী
Next articleরাজ্যে করোনা- মোকাবিলায় প্রশাসনের পাশে সিপিএম, কংগ্রেস