কোভিড-১৯ নিয়ে স্বনামধন্য বিজ্ঞানী ও অধ্যাপকের পোস্ট, বিভ্রান্তি চরমে

রাজীব বিশ্বাস আজ বিশ্বের স্বনামধন্য বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক। সবাইকে ওর পোস্ট পড়ার অনুরোধ করছি…

গতকাল রাত আটটায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের পর একটা খবর বারবার ফেসবুক এবং অনান্য সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করা হচ্ছে। বলা যায় ভাইরাল হয়েছে। পোস্টটি জনতা কারফিউ এর উপযোগিতা সম্বন্ধীয়। এর নীচে আসা কমেন্টগুলো দেখে মনে হয়েছে অনেক মানুষ এই পোস্ট এর দ্বারা প্রভাবিত। এটা উদ্বেগের বিষয়, আর সেই কারনেই আমার এই লেখা।
পোস্টে এমন দাবী করা হয়েছে যে, COVID-19 ভাইরাস ১২ ঘন্টার বেশী বাঁচে না। তাই ১৪ ঘন্টা কারফিউ হলে যেখানে আপাতত এই ভাইরাস রয়েছে, তা থেকে আর সংক্রমণ হবেনা কারন ভাইরাস টা মরে যাবে আর নতুন করে কেউ আর এর সংস্পর্শে আসবে না।

বলা বাহুল্য, এ তথ্য নিতান্ত ভুল। বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন। এখন পর্যন্ত এই যুক্তির স্বপক্ষে, কোনো পত্রিকায় কোন তথ্য প্রকাশিত হয় নি। গত 17th March 2020, The New England Journal of Medicine এ – Aerosol and Surface Stability of SARS-CoV-2 as Compared with SARS-CoV-1, শীর্ষক একটা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। প্রবন্ধে ভাইরাসটিকে – Severe Acute Respiratory Syndrome Coronavirus 2 (SARS-CoV-2) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ভাইরাসটির পূর্বতন নাম HCoV-19। এটি চিনের উহান প্রদেশে প্রথম দেখা দিয়েছিল আর বর্তনামে বিশ্বজোড়া মহামারীর কারন।

গবেষণাতে দেখানো হয়েছে যে SARS-CoV-2, প্লাস্টিক আর স্টেনলেস স্টিল এর ওপর ৭২ ঘন্টা, মানে তিন দিন পর্যন্ত, তামার ওপর চার ঘন্টা পর্যন্ত আর কার্ডবোর্ড এ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সক্রিয় থাকতে পারে। উক্ত গবেষণায় তিন ঘণ্টা ধরে পরীক্ষাটি চালানো হয় আর সেই তিন ঘণ্টাই ভাইরাসটি বাতাসে সক্রিয় ছিল। তিন ঘন্টা পর তার সক্রিয়তা কমে আসে। এই হল গবেষনার সারাংশ।

পত্রিকাটি পৃথিবী বিখ্যাত। ১৮১২ সাল থেকে বিভিন্ন গবেষণা প্রকাশ করে চলেছে। সুতরাং প্রকাশিত গবেষণাপত্রটিকে মান্যতা দেওয়া যায়।
তাই, জনতা কারফিউ র ফলে ভাইরাস মারার পর্যাপ্ত সময় পাওয়া গেলো – এটা নিতান্ত বাতুলতা। মিথ্যে দাবি। এর স্বপক্ষে এখন কোন প্রমান নেই। এমনকি ভারতের সর্বোচ্চ গবেষণা সংস্থা – ICMR এর স্বপক্ষে কিছু বলে নি।

এবার উদ্বেগের কারণটা বলি। পোস্ট এর কমেন্ট পড়ে মনে হয়েছে অনেকে জনতা কারফিউ এর উপযোগিতার অবৈজ্ঞানিক যুক্তিতে প্রভাবিত। তাদের ধারণা, সোমবার থেকে আমরা অনেকটাই বিপদ্মুক্ত হয়ে যাব। এর ফল কিন্তু হবে মারাত্মক। ভাইরাস মরে গেছে – তাই বিপদ কমে গেলো – এই ভেবে হয়ত অনেক মানুষ যারা ঘরে ছিলেন তারা বেরিয়ে পড়বেন, রাস্তায় ভিড় বাড়বে, বিপদ যে আরও কাছে আসবে তা বলাই বাহুল্য।
অনুরোধ করবো, এমন পোস্ট এর দ্বারা বিভ্রান্ত হবেন না। যে বা যারা এই পোস্ট ফেসবুক এ প্রথম করেছেন, তারা কি উদ্দেশ্যে এ কাজ করলেন জানি না, কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি যে তারাই দেশের আসল শত্রু। করোনার থেকেও অনেক বেশি বিপদজনক। সাধারণ মানুষ যারা করোনার বিষয়ে সেভাবে অবগত নন, আশায় বুক বেঁধে এই পোষ্ট ফরোয়ার্ড করছেন, তারা আসলে বিভ্রান্ত।
রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ করবো এ বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যাবস্থা নিতে।

My sincere regards to Ayan Kumar Das, Microbiologist for his valuable information.

Previous articleপিকে-এর প্রয়াণে শোকবার্তায় এ কী লিখলেন প্রসেনজিৎ!
Next articleতৃতীয় করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে রাজ্যে