Monday, August 25, 2025

দমদম জেল নিয়ে যেন ভুল না বোঝায় অরুণ গুপ্তর প্রশাসন, কুণাল ঘোষের কলম

Date:

কুণাল ঘোষ

করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ নিশ্চয়ই অগ্রাধিকার।

কিন্তু তার মধ্যে এই ভয়ঙ্কর ঘটনা যেন ধামাচাপা না পড়ে।
জেলের ভিতরের খবর বাইরে আসে না, যা ইচ্ছে রটিয়ে দেওয়া যায়, ওখানে ভোটের রাজনীতির প্রত্যক্ষ চাপ নেই; তাই চূড়ান্ত অবিচার চলবে, এটা হতে পারে না।

জেল মানেই অপরাধীর জায়গা নয়। জেলের প্রায় 70% বিচারাধীন বন্দি। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যেও বড়জোর 5-6% অভ্যস্ত অপরাধী বা দুষ্কৃতী। বাকিরা কোনোভাবে কিছু ঘটিয়ে বা জড়িয়ে বন্দি।

রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করলাম-” জেল ভাল। লোহার বেড়ি মিথ্যে কথা বলে না। কিন্তু জেলের বাইরে যে স্বাধীনতা আছে, তা আমাদের প্রতারণা করে বিপদে ফেলে। আর যদি সৎসঙ্গের কথা বলো তো , জেলের মধ্যে মিথ্যেবাদী কৃতঘ্ন কাপুরুষের সংখ্যা অল্প, কারণ স্থান পরিমিত। বাইরে অনেক বেশি।” ( মেঘ ও রৌদ্র)

কাউকে জেলে রাখা হচ্ছে মানেই তাদের সকলের সব অধিকার কেড়ে নিতে হবে, এটা যুক্তি হতে পারে না।

জেলের ডিজি অরুণ গুপ্ত, যিনি অবসরের পরেও বারবার এক্সটেনশনে বা চুক্তিতে কারা বিভাগটিকে নিজের মুঠোয় রেখেছেন; কেন পরপর জেলে অশান্তির দায় তাঁর হবে না?
তিনিই সিস্টেম চালান, তিনিই তদন্ত করেন, তিনিই ক্ষমতায় থেকে যান, কেন এসব চলবে?

আমার বন্দিজীবনের প্রথম জেল এই দমদম। নটা জেল আমি দেখেছি। সবার সঙ্গে মিশেছি। দেখেছি। বুঝেছি। জেনেছি। অধিকাংশ গরিব মানুষ। কনট্রাক্টর যে খাবার ঢোকায়, যে আনাজ দেয়; খাওয়াও মুশকিল। অথচ তা তো হওয়ার কথা নয়। দাম তো বরাদ্দ! জেলের কথা বাইরে আসে না বলে যা ইচ্ছে তাই চলছে। কারারক্ষী সমিতির অস্তিত্ব তুলে দিয়ে আরও সর্বনাশ করেছেন পদস্থ কর্তারা।

জেল যদি গরম হয়, কেন আন্দাজ পান না অফিসাররা? কেন তাঁদের প্রতি আস্থা নেই বন্দিদের? কেন সরানো হল দমদমের আগের সুপারকে? আজ বন্দিদের হাতে যদি বন্দুক বা মোবাইল আসে, দায় কার? বন্দির না প্রশাসনের? দুচারজন বাঁদর বেয়াদব বিপজ্জনক বন্দি থাকতেই পারে। অফিসাররা তাদের জানেন। কেন সময় থাকতে যথাযথ ব্যবস্থা নেন না?

জেলে পরপর ঘটনা ঘটছে। একদিনের খবর ছাড়া কারুর তাপউত্তাপ নেই। অরুণ গুপ্তর সাম্রাজ্য চলছে। জেলে এমনিতেই লোকে মানসিক চাপে থাকে। তার উপর আরও অশান্তি বা উদ্বেগ যোগ হলে বিস্ফোরণ হবেই।

কলকাতার বুকের ঘটনা। একটা কাগজে নিহত এক। দুটি কাগজে চার।
এটা সাংবাদিকতা? মোট হত ও আহতের সঠিক সংখ্যা নেই।
টিভিতে দেখা যাচ্ছে পুলিশ গুলি চালাচ্ছে। একাধিক কাগজ বলছে পুলিশের গুলির খবর নেই।
এটা সাংবাদিকতা?

আজ দমদম জেলের নিহতরা বন্দি, অভিযুক্ত বলে তথাকথিত সভ্য সমাজের মাথাব্যথা নেই। জেলের বাইরে অন্য কোথাও হলে এগুলিকেই আমরা জালিয়ানওয়ালাবাগের সঙ্গে তুলনা করে থাকি।

অরুণ গুপ্তর নেতৃত্বে জেল প্রশাসনে চূড়ান্ত অরাজকতা চলছে। বহু অভিযোগ। অবিলম্বে কড়া ব্যবস্থা দরকার।

যথাযথ তদন্ত হোক।
আমি বন্দি থাকাকালীনও এ বিষয়ে একাধিকবার বলেছি এবং লিখেছি। কোনো কাজ হয় নি। এখন চক্রান্ত, মাওবাদী, পাকামাথা ইত্যাদি ভুয়ো থিওরি দিয়ে জেল কর্তৃপক্ষ নিজেদের অপকীর্তি ঢাকার চেষ্টা যেন না করেন। বাইরের জগতে জেলের বন্দিদের আরও অপ্রিয় করে তুলে নিজেরা ন্যাকা সাজবেন, এটা কিন্তু হতে পারে না।

Related articles

কলকাতার সর্বজনীন পুজো ডিরেক্টারি: দু-মলাটে বাংলার দুর্গোৎসবের ৪৩৪ বছরের ইতিহাস

রবিবাসরীয় সন্ধেয় গড়িয়াহাটের একটি ব্যাঙ্কয়েটে আড্ডার আবহে প্রকাশিত হল সাংবাদিক-লেখক সম্রাট চট্টোপাধ্যায়ের বই 'কলকাতার সর্বজনীন পুজো ডিরেক্টারি'। উপস্থিত...

তৃণমূল–সমাজবাদী পার্টির পথে এবার আম আদমি পার্টি! জেপিসিতে থাকছে না আপও 

সংবিধান সংশোধনী বিল খতিয়ে দেখতে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিল আম আদমি পার্টি।...

মোদির বিরুদ্ধে সরব! হিটলারি কোপে লাদাখের সোনম ওয়াংচু

দফা এক দাবি এক। লাদাখের জন্য একই দাবিতে আজও অনড় সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচু (Sonam Wangchuk)। লাদাখের জমি, যা...

শান্তিপুরে মহিলা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর ভোটে গোহারা বিজেপি! ২৬-৪-এ জয়ী তৃণমূল 

এসআইআর ইস্যু নিয়ে রাজ্যে বিজেপির মাতামাতির মধ্যে নদিয়ার শান্তিপুরে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ক্লাস্টার কমিটির নির্বাচনে বড় সাফল্য পেল...
Exit mobile version