Thursday, August 28, 2025

দমদম জেল নিয়ে যেন ভুল না বোঝায় অরুণ গুপ্তর প্রশাসন, কুণাল ঘোষের কলম

Date:

কুণাল ঘোষ

করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ নিশ্চয়ই অগ্রাধিকার।

কিন্তু তার মধ্যে এই ভয়ঙ্কর ঘটনা যেন ধামাচাপা না পড়ে।
জেলের ভিতরের খবর বাইরে আসে না, যা ইচ্ছে রটিয়ে দেওয়া যায়, ওখানে ভোটের রাজনীতির প্রত্যক্ষ চাপ নেই; তাই চূড়ান্ত অবিচার চলবে, এটা হতে পারে না।

জেল মানেই অপরাধীর জায়গা নয়। জেলের প্রায় 70% বিচারাধীন বন্দি। সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যেও বড়জোর 5-6% অভ্যস্ত অপরাধী বা দুষ্কৃতী। বাকিরা কোনোভাবে কিছু ঘটিয়ে বা জড়িয়ে বন্দি।

রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করলাম-” জেল ভাল। লোহার বেড়ি মিথ্যে কথা বলে না। কিন্তু জেলের বাইরে যে স্বাধীনতা আছে, তা আমাদের প্রতারণা করে বিপদে ফেলে। আর যদি সৎসঙ্গের কথা বলো তো , জেলের মধ্যে মিথ্যেবাদী কৃতঘ্ন কাপুরুষের সংখ্যা অল্প, কারণ স্থান পরিমিত। বাইরে অনেক বেশি।” ( মেঘ ও রৌদ্র)

কাউকে জেলে রাখা হচ্ছে মানেই তাদের সকলের সব অধিকার কেড়ে নিতে হবে, এটা যুক্তি হতে পারে না।

জেলের ডিজি অরুণ গুপ্ত, যিনি অবসরের পরেও বারবার এক্সটেনশনে বা চুক্তিতে কারা বিভাগটিকে নিজের মুঠোয় রেখেছেন; কেন পরপর জেলে অশান্তির দায় তাঁর হবে না?
তিনিই সিস্টেম চালান, তিনিই তদন্ত করেন, তিনিই ক্ষমতায় থেকে যান, কেন এসব চলবে?

আমার বন্দিজীবনের প্রথম জেল এই দমদম। নটা জেল আমি দেখেছি। সবার সঙ্গে মিশেছি। দেখেছি। বুঝেছি। জেনেছি। অধিকাংশ গরিব মানুষ। কনট্রাক্টর যে খাবার ঢোকায়, যে আনাজ দেয়; খাওয়াও মুশকিল। অথচ তা তো হওয়ার কথা নয়। দাম তো বরাদ্দ! জেলের কথা বাইরে আসে না বলে যা ইচ্ছে তাই চলছে। কারারক্ষী সমিতির অস্তিত্ব তুলে দিয়ে আরও সর্বনাশ করেছেন পদস্থ কর্তারা।

জেল যদি গরম হয়, কেন আন্দাজ পান না অফিসাররা? কেন তাঁদের প্রতি আস্থা নেই বন্দিদের? কেন সরানো হল দমদমের আগের সুপারকে? আজ বন্দিদের হাতে যদি বন্দুক বা মোবাইল আসে, দায় কার? বন্দির না প্রশাসনের? দুচারজন বাঁদর বেয়াদব বিপজ্জনক বন্দি থাকতেই পারে। অফিসাররা তাদের জানেন। কেন সময় থাকতে যথাযথ ব্যবস্থা নেন না?

জেলে পরপর ঘটনা ঘটছে। একদিনের খবর ছাড়া কারুর তাপউত্তাপ নেই। অরুণ গুপ্তর সাম্রাজ্য চলছে। জেলে এমনিতেই লোকে মানসিক চাপে থাকে। তার উপর আরও অশান্তি বা উদ্বেগ যোগ হলে বিস্ফোরণ হবেই।

কলকাতার বুকের ঘটনা। একটা কাগজে নিহত এক। দুটি কাগজে চার।
এটা সাংবাদিকতা? মোট হত ও আহতের সঠিক সংখ্যা নেই।
টিভিতে দেখা যাচ্ছে পুলিশ গুলি চালাচ্ছে। একাধিক কাগজ বলছে পুলিশের গুলির খবর নেই।
এটা সাংবাদিকতা?

আজ দমদম জেলের নিহতরা বন্দি, অভিযুক্ত বলে তথাকথিত সভ্য সমাজের মাথাব্যথা নেই। জেলের বাইরে অন্য কোথাও হলে এগুলিকেই আমরা জালিয়ানওয়ালাবাগের সঙ্গে তুলনা করে থাকি।

অরুণ গুপ্তর নেতৃত্বে জেল প্রশাসনে চূড়ান্ত অরাজকতা চলছে। বহু অভিযোগ। অবিলম্বে কড়া ব্যবস্থা দরকার।

যথাযথ তদন্ত হোক।
আমি বন্দি থাকাকালীনও এ বিষয়ে একাধিকবার বলেছি এবং লিখেছি। কোনো কাজ হয় নি। এখন চক্রান্ত, মাওবাদী, পাকামাথা ইত্যাদি ভুয়ো থিওরি দিয়ে জেল কর্তৃপক্ষ নিজেদের অপকীর্তি ঢাকার চেষ্টা যেন না করেন। বাইরের জগতে জেলের বন্দিদের আরও অপ্রিয় করে তুলে নিজেরা ন্যাকা সাজবেন, এটা কিন্তু হতে পারে না।

Related articles

পদপিষ্ট হওয়ার প্রায় ৮৪ দিন পর নীরবরতা ভাঙল RCB

আরসিবির(RCB) বিজয়োল্লাসের সেই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটার পর প্রায় ৮৪ দিন পর  নীরবতা ভাঙল রয়্যাল চ্যালেঞ্জারেস বেঙ্গালুরু। সেই ঘটনার...

আমাকে স্টেনগান-পাইপগান নিয়ে তাড়া করেছিল: গায়ে কাঁটা দেওয়া অভিজ্ঞতা শোনালেন তৃণমূল সভানেত্রী

তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (TMCP) প্রতিষ্ঠা দিবস। আর বৃহস্পতিবার সেই সমাবেশে বক্তব্য রাখতে উঠে স্মৃতি মেদুর তৃণমূল (TMC) সুপ্রিমো...

এখনও চুপ মোদি! শুল্ক লাগুর পরেও ভারত নিয়ে কুকথা ট্রাম্পের পারিষদদের

পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘাতের সময়ে বারবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ তিনি থামিয়েছিলেন। তখন চুপ করেছিলেন...

উৎসবের মরশুমে সতর্ক স্বাস্থ্য দফতর, মাতৃ ও শিশুমৃত্যু রুখতে কড়া নির্দেশ 

আলো ঝলমলে প্যান্ডেল, রোশনাই, ভিড়—শহর যখন মেতে ওঠে উৎসবের আবহে, ঠিক তখনই অন্য প্রান্তে দেখা যায় উদ্বেগের ছবি।...
Exit mobile version